শনিবার , ৫ আগস্ট ২০১৭ | ১৩ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

রাজশাহীর ৬০ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের নিকট থেকে সাদা কাগজে নেয়া হলো স্বাক্ষর

Paris
আগস্ট ৫, ২০১৭ ৮:১৭ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানা শিক্ষা কর্মকর্তা সানাউল্লাহর বিরুদ্ধে এবার শিক্ষকদের নিকট থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কয়েকজন শিক্ষককে স্কুলে স্কুলে পাঠিয়ে গত ৪ দিন ধরে ওই স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছে। শিক্ষা কর্মকর্তাসহ তার আস্থাভাজন কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রাথমিক শিক্ষা অধিপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর নিজেদের পক্ষে মনগড়া প্রতিবেদন দাখিল করতেই এ পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ নিয়ে রাজশাহী নগরীর প্রাথমিক শিক্ষকদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তাঁরা দ্রুত ওই শিক্ষা কর্মকর্তার অপসরাণও দাবি করেছেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষকরা জানান, গত ৩১ জুলাই থেকে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান এবং সহসভাপতি কামরানের নেতৃত্বে ১৪-১৫ জন করে শিক্ষক ক্লাস চলাকালিন সময়ে নগরীর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে গিয়ে শিক্ষকদের কাছে সাদা কাগজ ধরিয়ে দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সানাউল্লাহ পাঠিয়েছেন বলে দাবি সেই কাগজে স্বাক্ষর করতে বলছেন শিক্ষকদের। স্বাক্ষর না দিতে চাইলেই শিক্ষকদের নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদান করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ফলে বাধ্য হয়ে শিক্ষকরা সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিচ্ছেন।

নগরীর বুলনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু’জন শিক্ষক বলেন, গত সোমাবার সকাল ১০টার দিকে তাঁদের স্কুলে যান শিক্ষক সমিতির নেতা আব্দুল মান্নান ও কামরানসহ কয়েকজন শিক্ষক। তাঁরা গিয়ে ওই স্কুলের শিক্ষকদের সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেন। শিক্ষকরা এসময় সাদা কাগজে কেন স্বাক্ষর নিচ্ছেন জানতে চাইলে শিক্ষক নেতারা বলেন, ‘সামনে মিটিং হবে ওই মিটিং করার জন্য এ স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছে।’ তবে তাতে শিক্ষকরা স্বাক্ষর দিতে না চাইলে বোয়ালিয়া থানা শিক্ষা কর্মকর্তা সানাউল্লাহ’র নাম করে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয় ওই স্কুলের শিক্ষকদের। পরে শিক্ষকরা স্বাক্ষর দিতে বাধ্য হন।

নগরীর কাদিরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, ক্লাস চলাকালিন সময়ে ওই শিক্ষকরা তাঁদের নিজেদের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে অন্য স্কুলগুলোতে গিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তার নাম করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে বেড়াচ্ছেন। তারা গত তিন-চার দিন ধরে এই অবস্থা বিরাজ করে রেখেছেন নগরীর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার কাদিরগঞ্জ স্কুলেও যান ওই শিক্ষকরা। এসময় শিক্ষকরা স্বাক্ষর দিতে না চাইলে তাদের বলা হয়, ‘শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কে বা কারা মিথ্যা অভিযোগ করেছেন, সেটির ব্যাখা দিতেই আমরা শিক্ষকদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করছি। কাজেই স্বাক্ষর যারা দিবে না, ধরে নেওয়া হবে তারাই অভিযোগ করেছেন। আর তাদের বিরুদ্ধে পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ শেষে বাধ্য হয়ে শিক্ষকরা ওই সাদা কাগজে স্বাক্ষর করেন।

তবে শিক্ষক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি মাসুদুন নবী কামরান দাবি করেন, স্যারের (উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা) বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। তাই সেটির প্রতিবাদ জানিয়ে মহাপরিচালকের কাছে আমরা লিখিতভাবে একটি চিঠি দিয়েছি। এর জন্যই স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে স্কুলে স্কুলে গিয়ে।

নগরীর হোসনিগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তা সানাউল্লাহ তাঁর পছন্দের কয়েকজন শিক্ষককে দিয়ে গোটা নগরীর শিক্ষকদের জিম্মি করে রেখেছেন। তাঁর পছন্দের শিক্ষকরা ক্লাস করে না। ইচ্ছে মতো অলিখিত কাগজে ডেপুটেশন নেয়। আবার অবৈধ কমিটি করে ক্ষমতা দখল করেছে। এস নিয়ে প্রতিবাদি শিক্ষকরা অভিযোগ করায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা।’

আরেক শিক্ষক বলেন, ‘নিজের অপরাধ ঢাকতে শিক্ষা কর্মকর্তা সানাউল্লাহ তাঁর মতো করে প্রতিবেদন তৈরী করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে দিতে চাইছেন। শিক্ষকদের নাম করেই ওই প্রতিবেদন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অথচ প্রতিবেদনের জন্য শিক্ষকদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছে। স্বাক্ষর দিতে না চাইলে বদলিরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এসব কারণে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে নগরীর ৬০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে। তাঁরা শিক্ষা কর্মকর্তা সানাউল্লাহর দ্রুত অপসরাণও দাবি করেছেন।’

তবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সানাউল্লাহ গতকাল বলেন, ‘কারা স্কুলে স্কুলে গিয়ে ক্লাস চলাকালিন সময়ে শিক্ষকদের নিকট থেকে স্বাক্ষর করার বিষয়টি আমার জানা নাই। আজই প্রথম এই কথা শুনলাম। কেউ আমাকে বলেওনি। কাজেই এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে খোঁজ নিয়ে দেখবো।’

প্রসঙ্গত, রাজশাহী জেলার বোয়লিয়া থানা শিক্ষা কর্মকর্তা সানউল্লাহ’র বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও অবৈধভাবে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে দেখা দেয় চরম বিশৃঙ্খলা। দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন শিক্ষকরা। তাঁদের মধ্যে একটি বড় অংশই শিক্ষা কর্মকর্তা সানাউল্লাহ’র বিতকির্ত কর্মকাণ্ডের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর