রাজশাহীর সিল্ক কাপড়ের চাহিদা এবারও তুঙ্গে


নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঈদ উপলক্ষে রাজশাহী সিল্ক কাপড়ের চাহিদা বরাবরই তুঙ্গে থাকে। স্বচ্ছল পরিবারের ঘরে রাজশাহী সিল্কের একটা শাড়ি বা পাঞ্জাবি ঈদে যাবে না-তা যেন হয়ই না। ফলে রাজশাহীর অধিকাংশ স্বচ্ছল পরিবার ছুটেন সিল্ক শো-রুমগুলোতে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এবার গত কয়েক বছরের চাইতে রোজার শুরু থেকেই সিল্ক কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে। শো-রুমগুলোতেও এবার কাপড়ে এসেছে নতুনত্ব। বেচা-কেনাও জমেছে বেশ। এমনটিই জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গভীর রাত পর্যন্ত রেশম নগরী হিসেবে খ্যাত রাজশাহী সিল্কপল্লীর শো-রুমগুলোতে চলছে বেচা–কেনা। তবে ভীড় বাড়ছে মূলত দুপর থেকে। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে সারারাত কেনাকাটা শুরু হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছে ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা।

গতকাল বৃহস্পতিবারবার (২২ এপ্রিল) রাজশাহীর সিল্কের শো-রুমগুলো সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শো-রুমগুলোতে ঈদ উপলক্ষে এবারো কাপড়ে এসেছে বাহারি রং ও ডিজাইন। যা কাপড়ে এনেছে নতুনত্ব। এম্ব্রয়ডারি, মসলিন, বলাকা, তসর, এন্ড্রি, ধুপিয়ানি, সফট সিল্ক, জয়শ্রী সিল্কের ওপর আকর্ষণীয় কারুকাজে সাজানো হয়েছে শাড়ি, থ্রি-পিচ, ছেলেদের সার্ট, পাঞ্জাবীগুলো। তবে এবার সিল্কের বহরে যোগ হয়েছে মুসলিনের ওপর আর্টপ্রিন্ট শাড়ি। এটি নিয়ে এসেছে সিল্ক কাপড়ের জগতে বাহারি ডিজাইনের অন্যতম প্রতিষ্ঠান সপুরা সিল্ক শো-রুম। নিবজেদের ফ্যাক্টরিতে উৎপাদনকৃত কাপড়গুলোই বাজারজাত করে তারা। এবার নতুন যোগ হওয়া মুসলিনের ওপর আর্টপ্রিন্ট শাড়ির চাহিদাও শাড়া ফেলেছে ক্রেতাদের মাঝে-এমনটি জানিয়েছেন সপুরা সিল্ক শো-রুমের ইনচার্জ সাইদুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘এবারও ঈদঘিরে আমরা নতুন নতুন ডিজাইনের কাপড় বাজারে এনেছি। তবে এর মধ্যে মুসলিনের ওপর আর্টপ্রিন্ট শাড়ির চাহিদা এবার ব্যাপক। নারীদের মাঝে এ ডিজাইনের শাড়ি ব্যাপক শাড়া ফেলেছে। বিক্রি হচ্ছে বেশি এটিই।’

এদিকে গতকাল দুপুরে রাজশাহীর বৃহৎ সপুরা সিল্ক ফ্যাক্টরি ও শো-রুম ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহীর বিসিক শিল্প এলাকায় মঠপুকুরের পাশেই বিশালাকার এলাকাজুড়ে সপুরা সিল্ক শো-রুম। শো-রুমটির নিচেই রয়েছে সিল্ক কাপড়ের ফ্যাক্টরি। সেখানেই তৈরী হচ্ছে ক্রেতাদের চাহিদা মতো শাড়ি, থ্রি-পিচ, পাঞ্জাবি, সার্ট। আর ওপরে দোতলা ও তিন তলায় সেই কাপড় বিক্রি হচ্ছে। গতকাল দুপুরেও সিল্ক ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা কাপড় তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন। অপর দিকে ওপরের শো-রুমে চলছিল কেনা-কাটা।

এসময় কথা হয় সপুরা সিল্ক শো-রুমে সিল্কের শাড়ি কিনতে আসা জাহিদা পারভীন নামের এক নারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাজশাহীর সিল্ক কাপড় ঈদে বাড়তি আনন্দ দেয়। এর কদর দেশজুড়ে। উৎসব পার্বনে এই সিল্ক কাপড় প্রিয়জনের হাতে তুলে দিতেও ভালো লাগে। তাই নিজের জন্য এবং বাড়ির সদস্যদের জন্যও কিনি প্রতি বছর। এবারও কিনতে এসেছি কয়েকটি শাড়ি।’

এ শো-রুমে শাড়ি কিনতে এসেছিলেন ঢাকার একজন সরকারি কর্মকর্তা হাসনাইন খুরশেদ। রাজশাহীতে এসেছিলেন অফিসিয়াল কাজে। কাজ শেষ করেই তিনি ছুটে যান সপুরা সিল্ক শো-রুমে। গিয়ে তিনি স্ত্রীর জন্য একটি শাড়ি ও মেয়র জন্য থ্রি-পিচ কিনেন। নিজের জন্য একটা পাঞ্জাবী খুঁজতেছিলেন। একটার পর একটা পাঞ্জাবী দেখছিলেন। এসময় কথা হয় তাঁর সাতে। তিনি বলেন, অনেকদিনে সখ ছিল সিল্ক শো-রুমে গিয়ে ঈদের কেনাকাটা করবো। এবার অফিসিয়াল কাজে এসে এসে সেই সুযোগও পেলাম। তাই কাজে লাগালাম।’
রাজশাহীর সাহেব বাজার এলাকার মনিজা পারভীন নামের এক নারী। তিনি বেশকিছুক্ষণ ধরে সপুরা শো-রুমের হ্যাঙ্গারে থরে থরে সাজানো শাড়িগুলো একটার পর একটা উল্টা-পাল্টা করে দেখছিলেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনটা রেখে কোনটা নিব সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। মনে হচ্ছে সবগুলোই ব্যাগে ভরে নিয়ে যায়। কিন্তু সাধ থাকলেই কি সাধ্য আছে? মন চাইলেও দুই-একটার বেশি নেওয়া সম্ভব নয়। তাই একটু বেছে বেছে দেখার চেষ্টা করছি।’

এ শো-রুমের ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান জানান, এবাারো ঈদ উপলক্ষে নারীদের শাড়ি কাপড়, থ্রিপিস, সালোয়ার, পুরুষদের পাঞ্জাবিতে আনা হয়েছে নতুনত্ব। পাশাপাশি পুরনো ডিজাইনের তৈরি কাপড়গুলোও রয়েছে। এবারের ঈদে তাদের বড় আকর্ষণ কাটোয়ার ডিজাইনের শাড়ি। আর আছে র-সিল্কের ওপর হাতের কারুকাজ। বিভিন্ন ডিজাইনের এই শাড়িগুলোর দাম রাখা হয়েছে তিন হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। মসলিনের আর্ট প্রিন্ট শাড়ির দাম ধরা হয়েছে ৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা।
এছাড়াও সফট সিল্ক শাড়ি কাপড় বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৫০০ টাকা থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া বাটিক সিল্ক তিন হাজার ২০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা, বলাকা সিল্ক ৭ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সিল্কের তৈরি থ্রিপিস বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৬০০ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ঈদের ভাল চলছে পার্টির ড্রেসও। শিশু-কিশোরীদের মধ্যে বেশ সারা ফেলেছে। মসলিন সিল্কের এই কাপড় পড়বে ১২ হাজার টাকা।

সপুরা শো-রুমের পাশেই রয়েছে রাজশাহী সিল্ক শো-রুম। এ শো-রুমটিও অনেক বড়-সড়। এটির ম্যানেজার মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বেঁচা-কেনা গতবারের চেয়ে এবার অনেকটা ভালো। বলা যায় গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার সিল্ক কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে। ফলে বিক্রিও হচ্ছে ভালো। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে কেনাবেচা। দুই-একদিনের মধ্যে সারারাতই হয়তো শো-রুম খোলা রাখতে হবে।

‘উষা সিল্ক’র ব্যবস্থাপক জহুরুল ইসলাম বলেন, মেয়েদের থ্রিপিসের মধ্যে রয়েছে মসলিন এমব্রয়ডারি, মসলিন এপলিক, সফট সিল্ক, এনডি সিল্ক ও বিভিন্ন হাতের কাজ করা থ্রিপিস। আড়াই হাজার থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকায় এসব থ্রিপিস বিক্রি হচ্ছে। আবার ২০ হাজার টাকা দামেরও থ্রিপিস রয়েছে। শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত।

এএইচ/এস