রাজশাহীর সংবাদপত্র বাহক খুকির দায়িত্ব নিলেন জেলা প্রসাশন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

“আমি একজন সংবাদপত্র বাহক, আমি জ্বলবো জ্বালাবো কিন্তু নিভবো না।” এমনি একজন সংবাদপত্র বিক্রেতা দীল আফরোজ খুকি। ‍যিনি ৪০ বছর ধরে রাজশাহী মহানগরীতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পায়ে হেটে বিভিন্ন এলাকায় সংবাদপত্র বিক্রি করে জীবন কাটাচ্ছেন।

এই সংবাদপত্র বিক্রেতা খুকি কোন সময় লোকের কাছে হাত পাতেন নি। তিনি নিজেই কর্ম করে নিজের জীবন যাপন করেন।

এই সব দেখে রাজশাহীর পবা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) শেখ এহসান উদ্দীনের মনে নাড়া দিলে গত মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) সকালে নিজেই খুকির বাড়ী গিয়ে তার খোঁজ খবর নেন।

সেখানে গিয়ে দিল আফরোজ খুকী সাথে কথা বলে জানতে পারেন, তার বাবা ছিলেন, রাজশাহী জেলা আনসার এডজুটেন্ট এবং মা ছিলেন সরকারি হাই স্কুলের শিক্ষিকা। অল্প বয়সে বাবা-মা মারা যাওয়ার পর সবাই তাকে ঠকিয়েছে এবং কেউ তার পাশে দাঁড়ায়নি। আর এজন্যই তার এমন সংগ্রামী জীবন।

তার নিজস্ব বাড়ি আছে। পৈত্রিক ভাবে তারা স্বচ্ছল ছিলেন কিন্তু কিছুটা স্মৃতিভ্রস্ট হওয়ায় তার নিজের ভাই বোনও তাকে দেখেনা। বাড়িতে তিনি একাই থাকেন।

সকালে বের হয়ে যান পত্রিকা বিক্রি করতে। এরপর সে উপার্জিত টাকায় হোটেলে খান। কয়েক জনকে আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল করতে দরিদ্র হিন্দু নারীকে গাভী ও সেলাই মেশিন কিনে দেওয়াসহ বেশ কিছু নারীকে আর্থিক ভাবেও স্বচ্ছল করেছেন খুকি। আর তার সাথে কথা বলে এসব জেনে মুগ্ধ হন ওই সরকারি কর্মকর্তা।

তিনি আরো জানতে পারেন, অনেক সময় মানুষ খুকীকে পাগল ভেবে মারধর করে। মাঝে মাঝে খেতে পান না। তাকে দেখাশোনা করার কেউ নেই। এভাবেই চলছে খুকীর জীবন। এসব দেখে তিনি বুঝতে পারেন, খুকীর দেখা শোনা করার জন্য একজন মানুষ প্রয়োজন। তিনি খুকীর পুরো মাসের খাবারের ব্যবস্থা করে দেন এবং পাশাপাশি তার দেখা শোনা করার জন্য একজন মেয়েকে দায়িত্ব দিয়ে আসেন।

পরবর্তীতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানান পবার এসিল্যান্ড শেখ এহসান। জেলা প্রশাসক খুকীর বাড়ি পরিদর্শন শেষে শেখ এহসানকে খুকীর বাসার সার্বিক উন্নয়ন ও খাবার সরবরাহের দায়িত্ব দেন।

বাসা পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন,‘ খুকীর সম্পর্কে জানার পর আমি তাঁর বাসা পরিদর্শন করতে আসছি। তার বাসা অবস্থা ভালো না টিন দিয়ে পানি পড়ে। ডিসি অফিসের পক্ষ থেকে তার বাসার সার্বিক উন্নয়নে ও খাবার সরবরাহের সকল দায়িত্ব এহসানের উপর দেওয়া হল। এহসান সকল দায়িত্ব পালন করবে।’

এ সময় পবা উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) শেখ এহসান সাংবাদিকদের জানান, সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে দিল আফরোজ খুকীর বিষয়টি আমার হৃদয়ে নাড়া দেয়। আমি বিষয়টি জেলা প্রশাসক স্যারের সাথে আলোচনা করি। স্যার আজকে খুকীর বাসা পরিদর্শন করেন। তার পরামর্শ ও সহযোগিতায় আমি খুকীকে ভালো রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।

খুকী আমাকে একটি কথা জানিয়েছে মৃত্যুর আগেই তার বাড়িটি কোন একটা স্কুলের নামে দান করে দিতে চান এবং তার যেন দাফন কুষ্টিয়াতে হয়। তার নাকি জন্মস্থান কুষ্টিয়া। আমি নিয়মিত তার খোঁজখবর রাখবো এবং আমার জায়গা হতে তার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টাটি করবো বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

স/আর