রাজশাহীর বাগানের আম বাজারে আসছে, জাতের আম পেতে আরও অপেক্ষা


নিজস্ব প্রতিবেদক :

রাজশাহীতে আমপাড়া শুরু হয়েছে। গত ১৫ মে থেকে গুটিজাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে। এ ধরনের আম সাধারণত বিভিন্ন কম্পানী কিনে থাকে বেশি। আঁচার বা জুস তৈরি করতে এই আমগুলো কিনে নিয়ে যান কম্পানীর এজেন্ট ব্যবসায়ীরা।

তবে জাতের আম হিসেবে পরিচিত গোপাল ভোগ আসছে আরও একদিন পরে। আগামী ২০ মে থেকে এই আমপাড়া শুরু হবে। এরপর বাজারে অন্যান্য জাতের আম আসবে পর্যায়ক্রমে।

রাজশাহীর জেলাপ্রশাসনের বেধে দেওয়া সময় অনুযায়ী, গত ১৫ মে থেকে গুটি বা আঠিজাতের আমপাড়া শুরু হয়। এই আম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টক বা আঁশজাতের হয়ে থাকে। ফলে বাজারে এ জাতের আমের তেমন চাহিদা থাকে না। আর সেই সুযোগে আমগুলো অল্প মূল্যে কিনে নেন কম্পানীর লোকজন। তারা জুস বা আঁচারকরতে আমগুলো কিনে নিচ্ছেন এবারও।

এবার শুরুতেই এ জাতের আম বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৮০০ টাকা মণ দরে। তবে আগামী ২০ মে থেকে বাজারে আসার অপেক্ষায় থাকা গোপাল ভোগের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। এটি সারাদের আপ্রিয় মানুষের একটি বাড়তি আকর্ষণ তৈরী করে। ফলে এ আমের দামটাও গুটিজাতের চেয়ে এক লাফে বেড়ে যায়। এবারও আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা আশা করছেন শুরুতেই রাজশাহীর বাজার বা বাগান থেকে গোপাল ভোগজাতের আম বিক্রি হবে অন্তত এক হাজার ৫০০ টাকা দরে। এর পর দেশের সার্বিক পরিস্থিতির আর কোনো বড় ধরনের অবনতি না হলে গোপাল ভোগের দাম ধিরে ধিরে বাড়তে থাকবে। যদিও ২০ মে’র মধ্যে গোপাল ভোগ পুরোপুরি পোক্ত হবেনা। পুরনো বা বয়স্ক গাছের আমগুলো এই সময়ের মধ্যে পোক্ত হবে। তবে নতুন বা অল্প বয়সের গাছগুলোতে গোপাল ভোগ আম আরও দেরিতে পোক্ত হবে।

এরই মধ্যে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের বেধে দেওয়া সময়মতো আগামী ২৫ মে বাজারে আসবে লক্ষণভোগ আম। এরপর ২৮ মে আসবে খিরসাপাত বা হিমসাগর জাতের আম।

এদিকে রাজশাহীতে এবার আমের লক্ষ্য মাত্রানির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টরজমিতে। এখান থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৪৮৩ মেট্রিকটন। তবে এবার যে লক্ষ্যমাত্রানির্ধারণ করা হয়েছে সেটি ছাড়িয়ে যাবে বলেই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আমচাষি ও বিশেষজ্ঞরা। যদিও এবার ক্ষরার কারণে প্রচুর আমগাছ  থেকেই ঝরে পড়েছে। এরপর রয়েছে কালবৈশাখী ঝড়ের ভয়। তবে এবার ক্ষরায় আম নষ্ট হলেও এখনো রাজশাহী অঞ্চলে সে হারে ঝড়ের দাপট দেখা যায়নি। এটিকেই আশঙ্কাজনক বলে মনে করছেন চাষিরা।

রাজশাহীর দুর্গাপুরের আমচাষি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আশঙ্কায় আছি আমপ রিপক্ক হওয়ার সময় না কালবৈশাখীর হানা দেয়। এটি হলে চাষি ও ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে। আম ছোট আকারে থাকলে তখন ঝড় হলেও অনেকটা সহনক্ষমতা থাকে আমের। কিন্তু বড় হয়ে গেলে বা পাকার সময়একটু দমকা হাওয়া হলেও ডাল ভেঙে পড়ে বা আম ঝরে পড়ে যায় ব্যাপক হারে। সে ক্ষেত্রে যদি এবার এখন বা আরও কয়েকদিন পরে ঝড় বা শিলাবৃষ্টি হয়, তাহলে আমের প্রচুর ক্ষতিহবে। তবে প্রকৃতির ওপর তো কারও হাত নাই।’

পুঠিয়ার বেলপুকুর এলাকার আকবর আলী বলেন, ‘এবারও গত বারের মতো আমের ভালো দাম পাওয়া যাবে আশা করছি। গাছে গাছে এখন পর্যন্ত যে আম আছে, তাতে ভালো দাম পাওয়া গেলে চাষি ও ব্যবসায়ীরা লাভ বান হবেন। কিন্তু প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ এই সময়ে হলে আমের ক্ষতি হবে অনেক।’

এদিকে রাজশাহীর বাজারে গত কয়েকদিন ধরে গুটিজাতের পাকা আম বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে। গোপাল ভোগ নামতে শুরু করলে আমের দাম আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন বাজারের আম ব্যবসায়ী খাদেমুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘এখন জাতের আম বাজারে তেমন নাই। জাতের আম গোপালসহ অন্যান্যগুলো নামতে শুরু করলে দামও বাড়তে শুরু করবে।’

রাজশাহী ফলগবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিককর্মকর্তা  ড. আব্দুল আলীম জানান, হেক্টর প্রতি গড়ে ১৫ দশমিক ৫৮ মেট্রিকটন হারে আম উৎপাদন হবে বলে এবারও আশা করা হচ্ছে। সেই হিসেবে এবার আমের উৎপাদন গতবারের  চেয়ে অনেক বেশি হবে বলেই আমরা আশা করছি।

এদিকে এবারও গত বারের মতো রাজশাহী থেকে ঢাকায় আম পরিবহণের জন্য ম্যাঙ্গ স্পেশাল ট্রেন নামের একটি ট্রেন প্রতিদিন ছেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের স্টেশন ম্যানেজার গোলাম মোস্তফা।