রাজশাহীর পশুহাটে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্ক থাকছেই

নিজস্ব প্রতিবেদক:
কোরবানি আসন্ন। ইতোমধ্যেই পশুহাটগুলোতে জমজমাট বেচাকেনার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কোনবানির পশু কেনাবেচায় হাটগুলোতে জমজমাট মানুষের সমাগম ঘটে। করোনালগ্নে সবধরনের সমাগম এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। কিন্তু কোরবানির পশুহাটে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সামাজিক দূরত্ব কতটা মানা সম্ভব হবে-এমন প্রশ্ন থেকেই যায়। বরং পশু হাট থেকে করোনা আরও ভয়ানক হতে পারে বলেও শঙ্কা রয়েছে নগরবাসীর মাঝে। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতর অনলাইনে কোরবানির পশু বিকিকিনির ওপর গুরুত্বরোপ করছে। আর অনলাইনে চাহিদামত পশু বেচা-কেনা কতটা সম্ভব হবে?
কোরবানির পশুহাট এনিয়ে সোমবার (২৯ জুন) দুপুরে নগর ভবনে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সভাপতিত্বে তার দপ্তরকক্ষে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নগরীতে করোনা নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণ, কুরবানির পশুর হাট ব্যবস্থাপনায় করণীয় বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার সঙ্গে উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সিটি মেয়র সভাকে স্মরণ করিয়ে দেন, গত ঈদুল ফিতর পর্যন্ত নগরীর করোনা পরিস্থিতি ভালো ছিল। কিন্তু ইদের পর থেকে পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এই মুহূর্তে করোনা নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উৎসাহিত করতে হবে। বাজার ব্যবস্থাপনা, কুরবানি পশুর হাটের ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং করোনা নিয়ন্ত্রণে যথাযথ করণীয় ঠিক করতে হবে।
সভায় সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিতকরণ, বাজার ব্যবস্থাপনা, আগামি ইদকে ঘিরে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বাড়ির বাহিরে মানুষের বের হওয়ার প্রবণতা কমাতে হবে।
সভায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও মতামত তুলে ধরেন, নগর পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির, জেলা প্রশাসক হামিদুল হক, রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. গোপেন্দ্রনাথ আচার্য, রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরিফ উদ্দিন, সচিব আবু হায়াত রহমতুল্লাহ, মেয়রের একান্ত সচিব আলমগীর কবির প্রমুখ।
সভায় নাগরিকদের মাস্ক পরতে আরো বেশি উৎসাহিত করা, মার্কেট ও বাজার ব্যবস্থাপনা, কুরবানির পশুর হাটের ব্যবস্থাপনা, আগাম ও অনলাইনে পশু ক্রয়ে উৎসাহ প্রদান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উৎসাহ প্রদান, এলাকা ভিত্তিক লকডাউন চালু করা যায় কি না, প্রতিটি ওয়ার্ডে স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন ও চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতিকরণ, করোনায় আক্রান্তদের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এবিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. অন্তিম কুমার সরকার জানান, ‘জেলায় পর্যান্ত পরিমাণে গবাদি পশু রয়েছে। রাজশাহী জেলায় কোরবানি ইদে দুই লাখ গবাদি পশুর প্রয়োজন পড়ে। আর রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোরবানির জন্য উপযুক্ত পশু। এবছর প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে গবাদি পশু আসবে না- এমন কথা সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আমাদের।’
হাট খোলা হলে কতোটা স্বাস্থ্য বিধি মানা সম্ভব এমন কথার উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা বড় বড় খামারিদের অনলাইনে পশু বিক্রির পরামর্শ দিয়েছি। এতে হাটের উপরে চাপ কমলে করোনা সংক্রমণ কম হবে।’
তিনি জানান, ‘দেশের খামারি ও সাধারণ মানুষ আশা করে ইদের তিন থেকে চার মাস আগে গরু লালন-পালন শুরু করে। কোরবানিতে বিক্রি করে কিছু লাভের আশায়। তাদের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে আমাদের। তবে জেলায় যে পরিমাণে গবাদি পশু আছে তাতে সঙ্কট হওয়ার কথা নয়।’
রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. এনামূল হক জানান, ‘যেখানেই হাট বাজার বসুক। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণের হার বাড়বে। ইদকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই ইউএনওসহ বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধির বিষয় নিয়ে আলোচানা করা হয়েছে।’
রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম জানান, ‘পুলিশ হেড কোয়াটার্স থেকে কোনো ধারনের নির্দেশনা আসেনি। তবুও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট বসাতে ইজারাদারদের বলা হবে। সেই সঙ্গে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশু ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করতে বলা হবে।’
আর রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানালেন, হাট আয়োজকদের সঙ্গে আলোচনাসভা করা হয়েছে। তাদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। তারা যেনো কোরবানির পশু নিয়ে বেশি দূরে দূরে দাঁড়ায়। এছাড়া হাটের ভেতরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য যাতায়াতের জায়গা রাখতে হবে।
তিনি আরও জানান, হাট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, ভেতরে একাধিক সাবান পানি, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে। এতে করে ক্রেতা-বিক্রেতারা যেনো হাত ধুয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে পরে। এছাড়া সার্বক্ষণিক পুলিশের নজরদারি থাকবে।’
রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু জানান, স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। যাদের মাস্ক নেই। তাদের হাটে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এছাড়া করোনাভাইরাস মাথায় রেখেই হাট প্রস্তুত করা হয়েছে। ফাঁকা ফাঁকা পশু রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বৃষ্টির জন্য মাঠ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, ৫ থেকে ৭ ভাগে- বেশি ভাগ কোরবানি হয়ে থাকে। পশু কিনতে ৭ ভাগের ৭ জনের সঙ্গে আরও তিনজন থেকে চারজন অতিরিক্ত আসে। যদিও তারা শখ করে হাটে আসে। এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে পশু হাটে কম সংখ্যক লোক আসার জন্য বলা হচ্ছে।
রাজশাহী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক জানান,‘সীমিত আকারে হাট হলে ভালো হয়। তবে অনলাইনে পশু ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে সবাইতো অনলাইনে অভ্যস্ত নয়। তাই হাট খোলা থাকবে। নগরীর ভেতরে যে হাটগুলো রয়েছে সেগুলো রাজশাহী সিটি করপোরেশন দেখাশোনা করে। রাজশাহী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাহায্য করা হবে।
তিনি আরও জানান, জেলার পশুহাটগুলোর ইজারাদারদের জানিয়ে দেওয়া হবে। দূর-দূরে পশু রাখতে। এছাড়া ক্রেতা-বিক্রেতারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পশু কিনতে পারে সেই ব্যবস্থা রাখতে। এ লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
স/আর