নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহী নগরীর ফুটপাত উচ্ছেদেদ সম্প্রতি ব্যাপক অভিযান চালায় সিটি করপোরেশন। এসময় উচ্ছেদ করা হয় শত শত দোকান-পাট। কিন্তু আজো উচ্ছেদের আওতায় আসেনি রাজশাহীর রাস্তায় রাস্তায় গড়ে উঠা বাস স্টেশনগুলো। এতে করে নগরজুড়ে যেমন সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, তেমনি দুর্ভোগও দেখা দিচ্ছে ব্যাপক হারে। আবার দুর্ঘটনাও ঘটছে কখনো কখনো। রাস্তা দখল করে অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা টার্মিনালগুলো নিয়ে নগরবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নগরীর শিরোইল এলাকায় পুরনো বাস স্টেশনটির বাইরেও রাস্তা দখল করে বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠা-নামা করানোয় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী বাসগুলো একেবারে রাস্তার ওপর দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠা-নামা করায় রাত-দিন এখানে যানজট লেগেই থেকে। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের পাশেই গড়ে উঠা এ স্টেশনে এখন শুধু আন্তঃউপজেলা বাসগুলোই দাঁড়ানোর কথা। কিন্তু রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আন্তঃউপজেলার পাশাপাশি ঢাকা ও চঁপাইনবাগঞ্জগামী সব বাস এখান থেকেই যাতায়াত করে। ফলে এই বাসস্ট্যান্ড এলাকা যেন যানজটনের এক অন্যতম এলাকা হিসেবে পরিণত হয়েছে। রাস্তায় বাস দাঁড় করিয়ে রাখায় রেলস্টেশনের যাত্রীদেরও যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এমনকি বাড়ছে দুর্ঘটনাও।
সূত্র মতে, রাজশাহী নগরীর যানজট নিরসন ও যাত্রীদের উন্নত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বড় পরিসরে নগরীর নওদাপাড়ায় নতুন বাস টার্মিনালের যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালে। এছাড়াও নগরীল শিরোইল এলাকায় রয়েছে পুরনো বাস স্টেশন। ঢাকা ও আন্ত:জেলা সকল রুটের বাস নওদাপাড়া টার্মিনাল থেকে চলাচল শুরু করে ২০১১ সাল থেকে। কিন্তু টার্মিনালটি শুধুই বাস দাঁড়ানোর জন্য যেন গ্যারেজে পরিণত হয়েছে এখন। সেখান থেকে বাস ছাড়লেও নগরীর ভদ্রা স্মৃতি অম্লান, তালাইমারী মোড়, রেলগেট ও সিটি বাইপাশ মোড়ে গিয়ে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী উঠা-নামা করানো হচ্ছে। ফলে এই তিনটি মোড়ও এখন বাস টার্মিনালে পরিণত হয়েছে। রাতদিন এসব স্থানে বাস দাঁড়িয়ে থেকে বিকট শব্দে হর্ন বাজিয়ে যাত্রী পরিবহণ করছে। এতে বরে যেমন সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, তেমনি সাধারণ মানুষের ভোগান্তিও বাড়ছে দিনকে দিনে।
সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরীর রেলগেট এলাকায়। রাজশাহী শহরের প্রবেশ দ্বার এই পয়েন্টটির দুই দিকে গড়ে তোলা হয়েছে অস্থায়ী টার্মিনাল। রেলগেট কামারুজ্জামান চত্তরের দক্ষিণ পাশে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রাস্তা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে পাশাপাশি দুটি বাসটার্মিনাল। একটি বিআরটিসির। অন্যটি বেসরকারি। মোড়ের উত্তর পাশে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের প্রবেশ দ্বারে রয়েছে আরো তিনটি টার্মিনাল। আবার নগরীর ভদ্রা স্মৃতি অম্লানের পূর্বপাশ দখল করে এবং তালাইমারী মোড়ের উত্তর পাশ দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে আরো দুটি বাস স্টেশন।
আরডিএ’র অ্যাস্টেট কর্মকর্তা বদরুজ্জামান জানান, রাস্তা দখল করে গড়ে তোলা টার্মিনালগুলোর কোনো অনুমতি নেই। রাজশাহীতে তটি বাস টার্মিনাল আছে। এর বাইরে গড়ে তোলা টার্মিনালগুলো বাস মালিক-শ্রমিকরা ইচ্ছেমতো নিজেদের সুবিধা নিতে গড়ে তুলেছেন।
এসব কাউন্টার থেকে টিকি কিনে মানুষ বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকছেন। বাসগুলো এসে সেখানে ১০-২০ মিনিট করে দাঁড়িয়ে থাকছে। একটি না ছাড়তেই আরেকটি এসে তার পেছনে বা এলোমেলো হয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এভাবে একের পর এক অন্তত ৬-৭ টি করে বাস দাঁড়িয়ে থাকছে। রেলগেটের দুই পাশেই গড়ে তোলা এসব টার্মিনালে গড়ে সবসময়ের জন্য অন্তত ১০টি বাস দাঁড়িয়ে থাকে রাস্তা দখল করে। কখনো একটা বাইসাইকেল পার হওয়ার যায়গাও দেয় না বাসগুলো।
জানতে চাইলে অটোরিকশা চালক হযরত আলী বলেন, ‘বাসগুলোর কারণে কোনো যানবাহন এদিক দিয়ে যাওয়া যায় না। যেভাবে রাস্তা দখল করে যাত্রী উঠানো হয় তাতে রেলগেট যেন বাসের দখলে থাকে।
নগরীর ভদ্রা এলাকার বাসিন্দা আইউব আলী বলেন, ‘অভিযাত এলাকা পদ্মা আবাসিক। কিন্তু এর ভিতর দিয়েই আসগুলো এসে আবাকি এলাকার প্রধান রাস্তা দখল করে দাঁড়িয়ে থাকে। এখানে বাসস্ট্যান্ড করায় এই আবাসিকের সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। এ নিয়ে প্রশাসনের দপ্তরে বার বার লিখিত অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। উল্টো দিনের পর দিন যেন স্থায়ী টার্মিনালে পরিণত করা হচ্ছে। এতে করে এখানকার বাসিন্দাদের নিরপাত্তাও বিঘিœত হচ্ছে।
রাস্তার ওপরে এভাবে অস্থায়ী বাস টার্মিনাল করে যাত্রী উঠানোর বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক কামাল হোসেন রবি বলেন, ‘রাস্তা ছাড়া তো যাত্রী পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে এসব রাস্তার পাশে অস্থায়ী টার্মিনাল করা হয়েছে। যাত্রীরাদের কথা বিবেচনা করেই এসব স্থানে কিছু সময়ের জন্য বাস দাঁড়িয়ে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের সমস্যা করে বাস দাঁড়ানোর বিষয়টি নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সে সমস্যার সমাধান করবো।’
স/আর