নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী মহানগরীতে কলেজছাত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় তার মা-বাবার ওপর হামলার সঙ্গে জড়িতরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। নগরীর মেহেরচণ্ডি এলাকার বাসিন্দা তারা। হামলাকারীদের মধ্যে অন্যতম হোতা রুহুল আমিন সরকার প্রিন্স (২৮) রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি।
অন্যদের মধ্যে ইরফান খান ওরফে মিরাজ (২৩), মো. ফরহাদ হোসেন (২৭) ও তার ভাই আখের আলী (৩২), রবিন, ফাহিম, শাহীন, রাজুসহ তাদের সহযোগী আরও ৮-১০ জনের একটি দল রয়েছে। যারা সকলেই মহানগর এবং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে রয়েছেন বা কর্মী পরিচয় দিয়ে এলাকা দাঁপিয়ে বেড়ান। এঁদের কাজই হলো ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, চাঁদার দাবিতে অপহরণ, জমি দখলে সহযোগিতা এবং এলাকার ও পাশ্ববর্তি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্ত করা। এরা অধিকাংশই মাদকসেবী। এলাকায় যারা বখাটে বলে পরিচিত।
এদিকে কলেজছাত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় তার মা-বাবার ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হলেও মামলার মূল আসামি ছাত্রলীগ নেতা রুহুল আমিন সরকার প্রিন্স এখনো অধরা। একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পদ থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করছে না। প্রিন্সকে মহানগর ছাত্রলীগের নেতারা আশ্রয় দিচ্ছেন।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন এলাকার একজন দোকানী বলেন, ‘প্রিন্স এবং তার দলবলের কাজই হলো মানুষকে হয়রানি করা। এরা বিভিন্ন দিবসের নামে মাঝে মাঝে এসেই স্টেশনের দোকানে দোকান দোকান থেকে চাঁদা তুলে নিয়ে যায়। এদের কারণে আমরা অতিষ্ঠ। স্থানীয় হওয়ায় এদের ভয়ে আমরা মুখ খোলারও সাহস পাই না। কারণ আমরা দোকানদার অধিকাংশই বাইরের বাসিন্দা। তাই এরা ইচ্ছামতো চাঁদাবাজি করে তাকে। তবে ইভটিজিংয়ের মামলার আসামি হওয়ার পরে আর কয়দিন ধরে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না।’
মেহেরচন্ডি এলাকার জুলহাস নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘এরা কয়েকদিন আগেই রাবির (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) দুই ছাত্র ও ছাত্রীকে স্টেশনের পাশে বসে গল্প করার সময় ধরে মোবাইল কেড়ে নিয়েছিল। এর কিছুদিন আগে আরেক শিক্ষার্থীর নিকট থেকে টাকা কেড়ে নিয়েছিল। এরা কোনো শিক্ষার্থীকে একা পেলেই তার নিকট থেকে মোবাইল টাকা-পয়সা কেড়ে নেয়। এদের কাজই হলো ছিনতাই, জমি দখল করে দেওয়া, নারীদের উত্ত্যক্ত করা, চাঁদাবাজি করা। এদের কারণে এলাকার মানুষও তটস্থ। ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে এলাকা দাঁিপয়ে বেড়ায় এরা। প্রতিবাদ করলে উল্টো তাকেই ধরে নির্যাতন করে।’
মেহেরচন্ডি এলাকার নাজমুল হোসেন বলেন, ‘বছর তিনেক আগে এই প্রিন্সসহ তার বাহিনীর সদস্যরা উপশহর এলাকার মামুন ও রিপন নামের দুই ব্যক্তিকে চাঁদার দাবির দাবিতে অপহরণ করেছিল। ওই মামলারও আসামি প্রিন্সসহ আরও ৭-৮ জন। এরা সকলেই মদকসেবী। কিন্তু তার পরেও এরা কিভাবে ছাত্রলীগের পদ পাই জানি না।’
প্রসঙ্গত, রাজশাহী মহিলা কলেজের এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করেছিলেন তার বাবা। এ ঘটনায় গত ১২ আগস্ট ছাত্রীর বাবা নীল মাধব প্রতিবাদ করেন। এর পর ওইদিনই প্রিন্স তার দলবল নিয়ে গিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে নীল মাধব শাহ’র পার্লারে গিয়ে হামলা চালায়। এ সময় তাঁকে ছুরিকাঘাত করা এবং হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়। মারপিট করা হয় নীল মাধব শাহার স্ত্রীকে। নীল মাধবের মাথায় ১২টি সেলাই পড়ে। এ নিয়ে গত ১৭ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করে নীল মাধব ও তাঁর পরিবারের লোকজন হামলাকারীদের বিচার দাবি করেন। এর পর বিষয়টি গণমাধ্যমে এলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। পরেরদিন রাতেই র্যাব অভিযান চালিয়ে হামলাকারীদের তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
এদিকে নীল মাধব অভিযোগ করে বলেন, ‘হামলাকারীদের অন্যতম হলেন, ছাত্রলীগের নেতা রুহুল আমিন সরকার প্রিন্স। কিন্তু পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করছে না। তার সহযোগীরা এখনো অনেকেই অধরা। এরা আমাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তাদের ভয়ে ঠিকমতো দোকানেও যেতে পারছি না।’