রাজশাহীর অধিকাংশ বেসরকারি ক্লিনিক অনুমোদনহীন, ব্যহত চিকিৎসা সেবা

নিজস্ব প্রতিবেদক:


রাজশাহীর অধিকাংশ বেসরকারি ক্লিনিকেই ন্যূনতম জনবলটুকু নেই। নেই চিকিৎসার স্বাস্থসম্মত পরিবেশও। আবার অনেক ক্লিনিকেরই নেই স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন। ফলে এসব ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে এসে প্রতারণার শিকার হওয়ার পাশাপাশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগী ও তার স্বজনদের। দীর্ঘদিন থেকে রাজশাহীর স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে এ ধরনের অনিয়ম ঘটে চললেও দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সরকারি নীতি অনুসারে, প্রতি ১০ বেডের ক্লিনিকের জন্য স্থায়ী জনবল হিসেবে তিনজন চিকিৎসক, ছয়জন নার্স ও তিনজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকা বাধ্যতামূলক। সেই সঙ্গে থাকতে হবে স্বাস্থ্য বিভাগের রেজিস্ট্রেশন বা অনুমোদন। অথচ রাজশাহীর অধিকাংশ ক্লিনিক ন্যূনতম এই জনবল কিংবা স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন ছাড়াই কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।

সরেজমিনে নগরীর লক্ষীপুর এলাকা ঘুরে অনুমোদন না থাকা মডার্ন হাসপাতাল ও জনস্বাস্থ্য ক্লিনিক নামে দুটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পাওয়া যায়। এদিকে দি ইউনাইটেড হাসপাতালে ১০ বেডের অনুমোদন থাকলেও তাদের নিজস্ব প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার যেসব ক্লিনিকের অনুমোদন আছে সেগুলোতে রয়েছে জনবল ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশের সংকট। অধিকাংশ ক্লিনিকের নেই নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। রোগী ও তাদের স্বজনদের দাবি, তারা এতে করে প্রতারিত হচ্ছেন।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, ১০ থেকে ৫০ বেডের হাসপাতাল বা ক্লিনিকের জন্য লাইসেন্স বা নবায়ন ফি বিভাগীয় বা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৫০ হাজার টাকা, জেলা পর্যায়ে ৪০ হাজার ও উপজেলা পর্যায়ে ২৫ হাজার টাকা। ৫১ থেকে ১০০ বেডের হাসপাতালের জন্য ফি একইভাবে পর্যায়ক্রমে এক লাখ টাকা, ৭৫ হাজার ও ৫০ হাজার টাকা। তবে অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো কাগজে কলমে ১০ বেডের অনুমোদন নিলেও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও জনবল সংকট সত্বেও এর চাইতে বেশি বেড বসিয়ে রোগী ও সরকারের সঙ্গে প্রতারণা করছে।

এদিকে, করোনা পরিস্থিতির কারণে অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার তাদের ২০১৯-২০ অর্থ বছরের রেজিস্টেশন নবায়ন করতে পারেনি। ৩০ জুন ছিল তাদের রেজিস্ট্রেশনর শেষ সময়।

স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, রাজশাহী বিভাগে মোট ৯৬০ টি বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল রয়েছে। যার মধ্যে রাজশাহী জেলায় ১৫৭টি। রাজশাহী নগরীর ১২০টি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত রাজশাহীর প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। যার সদস্য ৪০টি ক্লিনিক ও হাসপাতাল এবং ৮০ ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মখলেসুর রহমান বলেন, অনেকে চিকিৎসা সেবার নামে অনিয়ম করছে। তাদের অনুমোদন নেই। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে এসকল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছি স্বাস্থ্য বিভাগে।

লাইসেন্স নবায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১৮-১৯ এ লাইসেন্স নবায়ন হয়েছিল ৯০ শতাংশ। ২০১৯-২০ এ লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেছে দুই থেকে তিন শতাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্য বিভাগ লাইসেন্স নবায়ন করতে পারেনি।

রাজশাহী জেলার সিভির সার্জন ডা. এনামুল হক জানান, রাজশাহী মহানগরীসহ জেলার ৯টি উপজেলার রেজিস্ট্রেশন বিহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা করা হয়েছে। দ্রুতই তাদের নামে চিঠি ইস্যু করা হবে।

রাজশাহী বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. গোপেন্দ্রনাথ আচার্য্য জানান, আমরা বসে নেই। নিয়মিত অভিযান চলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এই মুহূর্তে কাজ থেমে রয়েছে। তবে স্বাস্থ্য খাতের বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুব শীঘ্রই ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মাঠে নামা হবে বলেও জানান স্বাস্থ্য বিভাগের এই কর্মকর্তা।

স/আর