রাজশাহীতে অবৈধ বালু উত্তোলনে ভাঙনে হুমকিতে বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীতে প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটি নির্মাণের আগেই ভাঙনের মুখে। স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে পদ্মার পারে চলছে বালু উত্তোলন। একদিকে ভাঙছে নদীর পার, অন্যদেক উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। ফলে প্রস্তাবিত ওই সিটি রয়েছে হুমকিতে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বালুর বস্তা ফেলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এ উদ্যোগ কতটুকু কাজে দেবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে স্থানীয় লোকজন।

এদিকে স্থানীয় লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছে, সরকার যেখানে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছে, সেখানে বালু উত্তোলন করে সেই বাঁধ হুমকির মুখে ফেলা হচ্ছে। তাদের আরো অভিযোগ, স্থানীয় যুবলীগের নেতা রজব আলী প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজশাহী নগরীর বুলনপুরে প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটির নির্মাণকাজ চলছে। এরই মধ্যে বালু ভরাটের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। এরপর শুরু হবে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। কিন্তু পদ্মা নদী থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে শত শত টন বালু। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সিলিকন সিটির ঠিক নিচ থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এরপর সেই বালু ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সিলিকন সিটির মধ্য দিয়ে। একই সঙ্গে শহর রক্ষা বাঁধের ওপর দিয়েও যাচ্ছে ট্রাক। অথচ শহর রক্ষা বাঁধের ওপর দিয়ে ট্রাক চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক শ্রেণির কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে এসব করা হচ্ছে।

স্থানীয় লোকজনের মতে, পদ্মার উজান থেকে পানি নেমে এসে রাজশাহী নগরীর বুলনপুর এলাকায় নির্মিত টি-গ্রোয়েনে প্রচণ্ড শক্তিতে আঘাত করে। এরপর পানির স্রোত কিছুটা পাক খেয়ে দক্ষিণ দিকে ঘুরে প্রবাহিত হতে থাকে। এই টি-গ্রোয়েনের গা ঘেঁষে গড়ে উঠছে বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটি। গত বছর পানির প্রচণ্ড স্রোতে টি-গ্রোয়েনেও ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এবার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টি-গ্রোয়েন আবারও হুমকির মুখে পড়েছে। আবার সিলিকন সিটির পশ্চিমাংশের নিচে এখনো কোনো স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। ফলে সেখানেও দেখা দিয়েছে ভাঙন।

স্থানীয় আকবর আলী নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘শুধু বালু উত্তোলনের কারণে আজ গোটা শহর রক্ষা বাঁধই পড়েছে হুমকির মুখে। কিন্তু এখনো বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। সিলিকন সিটির পশ্চিমাংশের নিচে পদ্মা নদী ঘেঁষে স্থায়ী বাঁধ না দিলে গোটা প্রকল্পই পড়বে হুমকির মুখে। ’

এ ব্যাপারে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মখলেছুর রহমান বলেন, ‘আমরা স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য সোয়া দুই কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিলাম। কিন্তু পেয়েছি মাত্র ৫০ লাখ টাকা। ফলে তা দিয়েই বালুর বস্তা ফেলা হবে কয়েক দিন পর থেকেই। এ ছাড়া কোনো উপায় নেই। ’

জানতে চাইলে রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশ বলেন, ‘অবৈধ বালু কারবারিদের থাবায় গোটা নগরীই এখন হুমকির মুখে। এ নিয়ে আমরা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। কিন্তু তেমন কোনো লাভ হয়নি। এর পরও বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে প্রয়োজনে রাজশাহীবাসীকে নিয়ে আমরা কঠোর আন্দোলন করব। ’