স্কুলের সামনে ফুটপাত দখল করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী নগরীর শালবাগান বাজার এলাকায় একটি স্কুলের সামনে ফুটপাত দখল করে স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণ করছেন বোয়ালিয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা। বিশালাকার এক কক্ষের ওই কার্যালয়টি গত অন্তত এক মাস ধরে তাঁরা নির্মাণ করছেন। রাজশাহী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কিছুটা দূরে ফুটপাত দখল করে গড়ে তোলা ওই কার্যালয়টি থেকে মূলত পাসপোর্টের দালালি করাই হবে মূল লক্ষ্য-এমন অভিযোগও করেছেন স্থানীয়রা।

 

এ নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অভিযোগও করা হয়েছে। সরকার সমর্থক আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠন বোয়ালিয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের উদ্যোগের কার্যালয়টি গড়ে তোলার কারণে এ নিয়ে কেউ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নগরীর শালবাগান এলাকায় অবস্থিত রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট স্কুলের প্রধান ফটকের একেবারে ডান পাশে (রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের পূর্ব পাশে) ফুটপাত দখল করে বোয়ালিয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যালয়টির প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষে হয়ে গেছে। ছাদ ঢালাই থেকে নিচের সব অংশের কাজ শেষ হয়েছে। এখন বাকি রয়েছে শুধুমাত্র প্লাস্টার এবং রং করা ছাড়া দরজা-জানালা লাগানোর কাজ। তবে এরই মধ্যে কার্যালয়টি ঘিরে রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মমিন উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক জেডু সরকার, বোয়ালিয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোস্তাক হোসেনসহ বিভিন্ন নেতার ছবি সংবলিত ব্যানারও টাঙ্গানো হয়েছে।

  • এদিকে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই সেখানে বোয়ালিয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের উঠা-বসাও শুরু হয়েছে। এতে করে স্কুল সময়ে তার পাশ দিয়ে রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিউিট স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও যাতায়াত করতে ইতস্তবোধ করছে। এমনকি তাদের অভিভাবকরাও সেখান দিয়ে যেতে স্বাচ্ছন্দবোধ করছেন না। স্কুলের গেটের পাশে দলীয় কার্যালয় গড়ে উঠায় ওই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক থেকে শুরু করে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝেও চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এ নিয়ে মৌখিকবাবে তারা একাধিক স্থানে অভিযোগও করেছেন। কিন্তু সরকার সমর্থক সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যালয় হওয়ায় এ নিয়ে কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকেই।

 

অভিযোগ রয়েছে, ওই কার্যালয়ের কিছুটা দূরেই রয়েছে রাজশাহী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। ওই অফিসে পাসপোর্ট করতে আসা সাধারণ মানুষদের নিকট থেকে ফরম পূরণ ও পাসপোর্ট করে দেওয়ার নামে দালালি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার সঙ্গে স্থানীয় সরকার দলের একাধিক নেতাকর্মী জড়িত রয়েছেন। যাদের মধ্যে বোয়ালিয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের একজন শীর্ষ নেতাও রয়েছেন।

 

  • এদের কয়েকজনকে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে একাধিবার গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। কিন্তু বরাবরই থেকেছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওই নেতা আড়ালে। ওই নেতা এবং তার কর্মীরা মূলত পাসপোর্ট অফিসের দালালি করার জন্যই পাসপোর্ট অফিসের কিছুটা দূরে এবারদলীয় কার্যালয় খুলে বসেছেন।

রাজশাহী পলিটেকিনিক ইন্সটিটিউট স্কুলের একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী জানান, ‘বিদ্যালয়ের সামনে এভাবে দলীয় কার্যালয় গড়ে তোলা মোটেও ঠিক হয়নি। এতে করে বিদ্যালয়ের পড়া-শোনার ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে।’
ফুটপাত দখল করে দলীয় কার্যালয় গড়ে তোলার সম্পর্কে জানতে চাইলে বোয়ালিয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোস্তাক হোসেন কোনো উত্তর দেননি। তিনি এ বিষয়ে কোনো কথাও বলতে চাননি।

 

  • বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জেডু সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সেখানে অফিস করার বিষয়টি আমরা জানি। তবে জায়গাটি সরকারি সম্পত্তি এটা ঠিক। কিন্তু আরো বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে ওই এলাকায়, সেই হিসেবে সেগুলোও অবৈধ।’
  • জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, ‘ফুটপাত দখল করে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সুযোগ নাই। এরপরও সেটি যদি হয় স্থায়ী কোনো প্রতিষ্ঠান বা কার্যালয়, তাহলে সেটি সম্পূর্ণ অবৈধ। কাজেই বিষয়টি খোঁজ নিয়ে পরবর্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
  • স/আর