রাজশাহীতে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়, দুর্ভোগে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী মহানগরীসহ গোটা জেলায় চরম লোডশেডিংয়ে বিপাকে পড়েছেন মানুষ। দিন-রাত ১২ ঘন্টার চেয়েও লোডশেডিং থাকছে। বলা যায় চাহিদা অর্ধেক বিদ্যুতও মিলছে রাজশাহীবাসীর জন্য। হঠাৎ করে বিদ্যুতের এমন সঙ্কটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিশেষ করে তীব্র গরমে যেন হাসফাঁস করতে হচ্ছে মানুষকে। কিন্তু একবার বিদ্যুৎ গেলে দুই থেকে তিন ঘন্টার আগে তার আর দেখা মিলছে না। গত কয়েক থেকে এই অবস্থা বিরাজ করছে রাজশাহীতে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় লোডশের্ডি দেখা দেয়। সকাল থেকে নগরীর দড়িখরবোনা এলাকায় কয়েকবার বিদ্যুতের লোডশেডিং দেখা দেয়। এছাড়াও বিদ্যুৎ একবার লোডশেডিং হলে প্রায় আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টার মত থাকছে।

অন্যদিক, বিদ্যুৎ না থাকায় অধিকাংশ সময় বন্ধ রাখতে হচ্ছে রাজশাহীর কল-কারখানাসহ দোকান-পাটও। বিশেষ করে ইলেক্ট্রোনিক্স নির্ভর দোকান-গুলো নিয়ে চরম বিপাকে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। যেন ঠিকমতো খুলতেই পারছেন না কেউ কেউ। এই অবস্থায় কেনাকাটায়ও নেমেছে ধস। বিদ্যুতের অভাবে থমকে যাচ্ছে অফিস আদালত, ব্যাংক বীমা কোম্পানীগুলোর কার্যক্রম। চার্জ দিতে না পারায় অনেক মানুষের অতি প্রয়োজনীয় মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে অফিসিয়াল কাজের ল্যাপটপটিও।

রাজশাহী নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকার বাসিন্দা জামান হোসেন জানান, সোমবার সকাল সাতটার পরপরই বিদ্যুৎ চলে যায়। এর পর দেখা মেলে সকাল ১০টার দিকে। তার পর ১২টার দিকে আবার বিদ্যুৎ হাওয়া শেষ পর্যন্ত আসে দুপুর আড়াইটার দিকে। আগেরদিন রাতেও কয়েক দফা বিদ্যুৎ ছিল না। আর দিনের বেলায়ও ছিল একই অবস্থা। সবমিলিয়ে এখন গড়ে দিনের অর্ধেক সময়ও বিদ্যুৎ মিলছে না। এতে করে গরমে চরম কষ্টের মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে। বিশেষ করে রাতে শোবার সময় বিদ্যুৎ না থাকায় ভোগান্তিটা বেশি পোহাতে হচ্ছে।’

রাজশাহী নিটল নিলয় অটো হিউম্যান কারখানার ইচার্জ হাফিজুর রহমান বলেন, বিদ্যুৎ না থাকার কারণে গতকাল দিনের অধিকাংশ সময় জেনারেটর দিয়ে কাজ করতে হয়েছে কারখানায়। আবার বিদ্যুৎ এলেও ১৫-২০ মিনিট পরে আবার হয়ে গেছে। এ নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। ঠিকমতো শ্রমিকরা কাজও করতে পারছেন না।

শিক্ষানগরী খ্যাত রাজশাহীতে বিদ্যুতের এমন বিপর্যয়ে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবনেও প্রভাব পড়ছে বলে অনেকের অভিযোগ। নোট, বইসহ অন্যন্য জিনিসপত্র ফটোকপির করতে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট করছেন অনেকেই। তথ্য প্রযুক্তির যুগে সামন্য সময় বিদ্যুৎ না থাকলেই পড়তে হয় বিভিন্ন রকম বিড়ম্বনার।

রাজশাহী কলেজের ম্যানেজম্যান্ট বিভাগের বিভাগের শিক্ষার্থী তোফাজ্জল হোসেন বলছিলেন, গত কয়েক দিন থেকে দিনেই তিন-চারবার করে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। এতে পড়ালেখায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ঠিকমতো পড়তেই বসতে পারছি না বিদ্যুৎ না থাকায়। রাতে বাইরে বাইরে ঘুরেই সময় পার করতে হচ্ছে কখনো কখনো।’
নগরীর সাহেব বাজার এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী ইমরান আলী ভূইয়া বলেন, বিদ্যুৎ তো দিনের অধিকাংশ সময় থাকছে না, ব্যবসা করবো কিভাবে। বিদ্যুৎ না থাকলে দোকানে ক্রেতারা এসে দাঁড়াতেই চাই না। তাহলে কেনাকাটা তারা করবে কিভাবে? তাই অধিকাংশ সময় দোকান বন্ধই রাখছি।’

বিদ্যুতের এমন লোডশেডিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী নাসরিন ইয়াসমিন বলেন, লোডশেডিং হচ্ছে। জাতীয় গ্রীড থেকেই বিদ্যুৎ কম পাওয়া যাচ্ছে। চাহিদার প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎ মিলছে।

তিনি আরো জানান, নগরীতে প্রায় ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। তবে বিদ্যুৎ মিলছে ৫০ মেগাওয়াটের মতো। বাকিটা না পাওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে।

এদিকে জেলাতে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৯০ মেগাওয়াট। সেখানেও মিলছে চাহিদার অর্ধেকেরও কম। ফলে নগরীর চাইতে জেলার অবস্থা আরো বেশি ভয়াবহ বলে দাবি করেছেন পল্লী বিদ্যুতের একাধিক কর্মকর্তা।

 

 

স/আর