রাজশাহীতে ভ্রুণ হত্যার আসামি ১০ মাস পর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর নারী নির্যাতন ও ভ্রুণ হত্যা মামলার প্রধান আসামি আজহার আলী আপেলকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার আপেল কুয়েতে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে বিমানবন্দরে প্রবেশের সময় রবিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তাকে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।  গ্রেপ্তারকৃত আপেল নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানাধীন শিরোইল এলাকার জাবেদ আলীর ছেলে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভুক্তভোগীর দায়ের করা ভ্রুণ হত্যা মামলাটির তদন্তভার গত দুইদিন আগে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা শাখায় যায়। তার আগে দীর্ঘদিন ধরে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলাটি ছিল। তদন্তের অগ্রগতিতে বাদী তাজনুভা তাজরিন সন্তুষ্ট না হওয়ায় তিনি গত ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের ২৭ তারিখ রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর অভিযোগ করেন।

সেখানে বাদী তাজনুভা তাজরিন অভিযোগ করেন, ২০২০ সালের ২১ মে তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৬ জন আসামি থাকলেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। মামলার ১ নম্বর আসামি আজাহার আলী আপেল বিদেশ পালিয়েছে বলে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ তাকে জানায়। অথচ বিদেশ পালিয়ে যাওয়ার কোন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিলো না। প্রধান আসামি ছাড়া বাকি আসামিরা আদালতে জামিন নিয়ে তাকে হুমকি-ধমকিও দিচ্ছিলেন।

সুষ্ঠু বিচার না পাওয়ার আশঙ্কায় অবশেষে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তরের আবেদন করেন। গত দুইদিন আগে মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তরিত হলে রাজশাহী ডিবির পক্ষ থেকে বিষয়টি ঢাকা বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। এরপরই রবিবার দুপুরে এই প্রধান আসামি কুয়েতে যাওয়ার সময় বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে আটক হলে তারা রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে বিষয়টি জানায়। খবর পেয়ে দুপুরেই ডিবির একটি টিম আসামিকে রাজশাহীতে ফিরিয়ে আনতে ঢাকা বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

এব্যাপারে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আরেফিন জুয়েল বলেন, গত দুইদিন আগে মামলাটির ডিবিতে এসেছে। এরপর আমরা ঢাকা বিমানবন্দরে তার তথ্য পাঠিয়েছিলাম। সেই তথ্যের আলোকে বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাকে আটকের পর আমাদেরকে খবর দেয়। তাকে রাজশাহীতে ফিরিয়ে এনে আদালতে সোপর্দ করা হবে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর নগরীর শিরোইল এলাকার আলী দেওয়ানের মেয়ে তাজনুভা তাজরীনে সঙ্গে একই এলাকার আজাহার আলী আপেলের বিয়ে হয়। বিয়ের পরের দিনই স্বামীর হাতে তিনি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিয়ের আগে ও পরে যৌতুক হিসেবে চার লাখ টাকা নিয়েছেন আপেল। আরও ১৫ লাখ টাকার জন্য নির্যাতন করতেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। তখন তিনি দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। মারধরের পর তাজনুভা বাবার বাড়িতে চলে আসেন। কিন্তু শ্বাশুড়ির অনুনয়-বিনয়ে শ^শুড়বাড়িতে যায় সে। তাজনুভার অভিযোগ, শ্বশুড়বাড়ি গিয়ে শ্বাশুড়ি সেদিন তাকে খাবারের সঙ্গে গর্ভপাতের ওষুধ মিশিয়ে দেন। রক্তপাত শুরু হলে রামেক হাসপাতালের ওসিসিতে নিয়ে গেলে বাচ্চাটি টিকবে না বলে ডাক্তার জানায়। পরবর্তীতে তাজনুভার পেটের সন্তানের যখন বয়স সাড়ে চার মাস তখন তার গর্ভপাত ঘটে।

এ ঘটনায় গত বছরের ৩১ আগস্ট তাজনুভা শাশুড়িসহ চারজনকে আসামি করে ভ্রুণ হত্যার অভিযোগে আদালতে আরও একটি মামলা করেন। দুটি মামলার একজন আসামিকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি।

বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মন বলেন, মামলার মূল আসামি হলেন তাজনুভার স্বামী। মামলা দায়েরের আগেই তিনি বিদেশে চলে গেছেন বলে আমাদের কাছে তথ্য ছিল। পরবর্তীতে মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তর হওয়ায় ডিবি বিষয়টি দেখভাল করছে।

এএইচ/এস