রাজশাহীতে এক সময়ের প্রমত্তা পদ্মার বুকে এখন পুকুর খনন!

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জনশ্রুতি আছে- কুমিরের পীঠে আরোহণ করে প্রমত্তা পদ্মা নদী দিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজশাহীতে এসেছিলেন হযরত শাহ মখদুম (রহ.)। ভারত বর্ষের বিভিন্ন জায়গা থেকে জাহাজ নোঙ্গর ফেলতো রাজশাহীর পদ্মার ঘাটে। যার কারণেই নগরীর একটি ঘাটের নাম জাহাজ ঘাট। কিন্তু এখন এসব কেবলই স্মৃতি। রাজশাহীর পদ্মা নদীর গর্ভে এছন অসংখ্য ছোট-বড় চর জেগেছে। আর এখন তাই রাজশাহীতে শুরু হয়েছে চর দখল।

তবে, কেবল দখল করেই ক্ষান্ত হয়নি দাপুটে প্রভাবশালীরা। দখল করা সেই চর খনন করে বানিয়েছে পুকুর। সেই পুকুরে করছে মাছের চাষ!

এমনই এক পুকুর খনন করা হয়েছে রাজশাহী মহানগরীর শ্রীরামপুর এলাকা সংলগ্ন পদ্মার চরে। অভিনবভাবে চারদিকে পাড় তুলে মাঝ চর বরাবর পুকুরটি কাটা হয়েছে। মানুষের প্রবেশ ঠেকাতে ওই পুকুরের চারপাশে দেওয়া হয়েছে বাঁশের বেড়াও। আর পুকুরের মাছ পাহারা দেওয়ার জন্য তার পাশেই একটি টিনের ঘরও বানানো হয়েছে।

স্থানীয়ভাবে জনশ্রুতি আছে, পদ্মা নদীর পানি শুকিয়ে চর পড়লেই তীরবর্তী মানুষ সেখানে তার জমি রয়েছে বলে দাবি করেন। আর এই ক্ষেত্রেও তার চুল ব্যতিক্রম ঘটেনি। খনন করা ওই পুকুর মালিকদের দাবি, জমিটি তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। যে কারণে পানি শুকিয়ে চর পড়ার পর সেখানে তারা পুকুর কেটে মাছ চাষ করেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগরীর শ্রীরামপুর এলাকার এক অধিবাসী জানান, প্রায় একমাস আগে চরের মধ্যে এই পুকুরটি খনন করা হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ডলার হোসেন তার লোকজন দিয়ে ওই পুকুর খনন করেছেন।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের পেছনের দক্ষিণ পাশে পদ্মা নদীর মাঝখানে জেগে ওঠা চরেই রয়েছে ওই পুকুর। প্রথমে এর চারপাশে গোল করে মাটি তুলে পাড় তৈরি করা হয়। এরপরে তার মাঝখানে মাটি কেটে পুকুর করা হয়।

পদ্মার চরে নিয়মিত বেড়াতে আসেন বড়কুঠি এলাকার শাহীন আলম ও রায়হানুর রহমান। পদ্মার এই দর্শনার্থী বলেন বিগত বছরগুলোতে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে চর পড়লে দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করতে দেখা গেছে। কিন্তু পুকুর খনন! এবারই তারা প্রথম দেখলেন।

ঘটনাটি বিরল উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, চরের মধ্যে পুকুরের কারণে একদিকে নদী ও শহরের সৌন্দর্য যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি নদীরও নদীর ক্ষতি হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে এলে নদী ভরে উঠবে। তখন এ ধরনের পুকুর খননের কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হবে এতে তীরবর্তী এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দেবে। আর এতে তীরের মানুষই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

জানতে চাইলে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, মূলত পদ্মার পাড়ের নিচ থেকে পুরোটা নদীরই জমি। পাড়ের নিচের জমিগুলো সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত।

যদি এমনও হয় যে, কারো ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি পদ্মা গর্ভে চলে গেছে। তাহলে সেটি খাস জমি বলেই পরিণত হবে। এরপরও কীভাবে পদ্মার জেগে ওঠা চরের জমিতে পুকুর খনন হলো, সেটি তারা খতিয়ে দেখবেন। এছাড়া প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান পাউবোর এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

এএইচ/এস