রাজশাহীতে গরু চোরাচালান রোধে রাতজেগে গ্রামবাসীদের নিয়ে সীমান্ত পাহারায় বিজিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঈদঘিরে গরু চোরাচালান বন্ধে সীমান্তে স্থানীয়দের নিয়ে রাত জেগে পাহারা বসিয়েছে বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ। দেশে গরু-মহিষসহ কোরবানীর অন্যনা পশু পর্যাপ্ত থাকায় সীমান্তে এবার কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। ভারত থেকে যেন কোনোভাবেই গরু দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সীমান্ত এলাকার পাড়ায় পাড়ায় কমিটি করে দিয়েছে বিজিবি। তাঁদের এই উদ্যোগ এরই মধ্যে সফলতার মুখও দেখেছে। ফলে বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের সীমান্ত এলাকাগুলো দিয়ে এখন পর্যন্ত ভারত থেকে দেশের অভ্যান্তরে গরু প্রবেশের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে এবার কোরবানিকে ঘিরে এমনিতেই গরু-মহিষের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে খামারিরা। এরই মধ্যে যদি ভারত থেকে গরু চোরাচালান হয়ে দেশে প্রবেশ করে, তাহলে খামারিরা বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়বেন বলেও আশঙ্কা করছেন। এই অবস্থায় বিজিবির এমন পদক্ষেপ ঈদের আগেরদিন পর্যন্ত বহাল রাখার আহ্বান জানিয়েছেন রাজশাহীর খামারিরা।

অন্যদিকে এবার শুধুমাত্র রাজশাহী জেলাতেই অন্তত এক লাখ পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা অন্তিম কুমার সরকার। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, এবার রাজশাহীতে সবমিলিয়ে তিন লাখ ৭০ হাজার পশু তৈরী আছে কোরবানির জন্য। এর মধ্যে জেলার চাহিদা হবে সর্বোচ্চ দুই লাখ ৫০ হাজার। বাকি এক লাখ ২০ হাজার পশু আমরা দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাতে হবে।

তিনি আরও জানান, রাজশাহীতে এবার রাজশাহীতে এক লাখ গরু-মহিষ পালন হয়েছে খামারি ও কৃষক পর্যায়ে। এছাড়াও ছাগল পালন হয়েছে দুই লাখ ২৮ হাজার। আর ভেড়া ও গাঁড়ল পালন হয়েছে আরও ৪২ হাজার। সবমিলিয়ে তিন লাখ ৭০ হাজার পশু পালন হয়েছে রাজশাহীতে।

রাজশাহীর চৌদ্দপাই এলাকার গরুর খামারি আরাফাত হোসেন রুবেল বলেন, ‘করোনাকালে এবার গরুর দাম নিয়ে শঙ্কায় আছি আমরা খামারিরা। এই অবস্থায় ভারত থেকে যদি গরু আসে তাহলে আরও শঙ্কট তৈরী হবে। দেশের খামারিরা লোকসানের মুখে পড়বেন। এই অবস্থায় বিজিবি যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি ঈদের আগের দিন পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে হবে। ভারত থেকে কোনোভাবেই এখন দেশে গরু প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না।’

দুর্গাপুরের মাড়িয়া গ্রামের খামারি আতাব আলী বলেন, ‘যে গরু কয়দিন আগেও দেড় লাখ টাকা দাম বলেছে ব্যবসায়ীরা, এখন সেটি এক লাখ ২০ হাজার টাকাও বলছে না। এর মধ্যে এবার গরু পালন করতে গিয়ে খরচও বেড়েছে। কারণ এবার খাবারের দাম বেড়েছে ব্যাপক হারে। এই অবস্থায় এবার গরুর দাম কম হলে খামারিরা লোকসানের মুখে পড়বেন। পরবর্তিতে আগ্রহ হারাবেন গরু পালনে। কাজেই গরুর ন্যায্য বাজার ঠিক রাখতে সরকাকে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। তবেই খামারিরা গরু পালন করে লাভের মুখ দেখবেন।’

রাজশাহীর সর্ব বৃহৎ গরু হাটের ইজারাদার ফারুক হোসেন ডাবলু বলেন, ‘এবার এখন পর্যন্ত হাটে ভারতীয় গরু দেখা যায়নি। এছাড়াও হাটে বেচা-কেনা একেবারেই কম। করোনার কারণে এবার হাটে গরু-বেচা কেনা কম হচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও আমরা হাটে গরু-মহিষ কেনা-বেচায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি।’

রাজশাহী বিজিবি-১ এর ব্যাটালিয়ন কমান্ডার ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা সীমান্ত সুরক্ষার বিষয়টি প্রথমে মাথায় রেখেছি। এর বাইরে দেশের মধ্যে যেন কোনোভাবেই গরু প্রবশে করতে না পারে সে জন্য আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। তবে আমাদের সীমান্ত এলাকাগুলো দুর্গম হওয়ায় আমাদের পক্ষে সেটি এই বর্ষার মধ্যেও রাতে সার্বক্ষণিক পাহারা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে আমরা সীমান্ত এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে রাতে পাহার বসিয়েছি। স্থানীয় বাসিন্দারা রাত জেগে সীমান্ত পাহার দিচ্ছেন। যেন কোনোভাবেই ভারত থেকে গরু আমাদের দেশে ঢুকতে না পারে।’

বিজিবির ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সীমান্তে প্রতিটি পাড়ায় একটি করে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটির সদস্যরা রাত জেগে বিজিবি সদস্যদের পাশাপাশি সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন। এতে আমরা সুফলও পেয়েছি। এখন পর্যন্ত গরু পাচার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সখ্যম হয়েছি। আশা করছি এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।’

স/আর