রাজশাহীতে গভীর রাতে আ.লীগ নেতার বাড়িতে গুলি : আসামিরা দুই দিনের রিমান্ডে

গ্রেফতারকৃত সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ওয়াহিদ জামিল মুরাদ (ডানে) ও তার সহকারী জাহিদ আলম সম্রাট

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানা (পূর্ব) আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালুর বাড়িতে গোলাগুলির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামির দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ বুধবার (১০ আগস্ট) বিকালে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এক রিচারক তাদের এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করে মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে গভীর রাতে গুলি বর্ষণের ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য আসামিদের আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন জানিয়েছিলাম। বিজ্ঞ আদালত শুনানি শেষে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) সকাল থেকে তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। ইতোমধ্যেই ওই দিন গুলি বর্ষণের ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন হতে শুরু করেছে। আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে হয়তো গুলি বর্ষণের ঘটনার প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে।’

এদিকে বিশ্বস্ত একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়- হুন্ডি ব্যবসার পাওয়া টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরেই গত শনিবার (৬ আগস্ট) গভীর রাতে সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ওয়াহিদ জামিল মুরাদ ও তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী জাহিদ আলম সম্রাট আওয়ামী লীগের ওই নেতার বাড়িতে গুলি বর্ষণ করেন।

তবে হুন্ডি ব্যবসার পাওয়া টাকা নিয়ে ওই আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে আপাতত এমন কোনো তথ্য নেই আইন-শৃক্সক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। পুলিশ বলছে, বড় কোনো রহস্য হয়তো এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। আর তাই গত সোমবার (৮ আগস্ট) গ্রেপ্তারকৃত দুই আসামিকে আদালতে হাজির করে তাদের বিরদ্ধে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়।

এদিকে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, হুন্ডির টাকা নিয়ে মূলত এই ঘটনা ঘটেছে। ওয়াহিদ জামিল মুরাদ গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বিভিন্ন জনের কাছে দাবি করেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা আতিকুর রহমান কালু ও তার ছেলের নিকট থেকে হুন্ডির প্রায় ১৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে তার। এই টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে গত শনিবার দিবাগত রাতে নগরীর মুন্সিডাঙ্গা এলাকায় কালুর বাড়িতে গিয়ে গুলি করেন ওয়াহিদ জামিল মুরাদ ও তার সহকারী জাহিদ আলম সম্রাট। তবে আতিকুর রহমান কালু দীর্ঘদিন ধরেই রাজশাহী সিটি বাইপাস গরুর হাটটি সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে লিজ নিয়ে পরিচালনা করে আসছেন।

সূত্র বলছে, গ্রেপ্তারকৃত ওয়াহিদ জামিল মুরাদ রাজশাহীর পবা উপজেলার পালপাড়া এলাকার বাসিন্দা হলেও তিনি মূলত থাকেন ঢাকার মীরপুরে এবং রাজশাহীর উপশহরে। এই মুরাদও একজন হুন্ডি ব্যবসায়ী। তিনি আমেরিকান নাগরিকও। ২০ বছর ধরে তিনি আমেরিকাতেও বসবাস করছেন। এছাড়াও মীরপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশ কুমার ও বিকাশ কুমার ও জোসেফের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে বলেও জানিয়েছে বিশ^স্ত একাধিক সূত্র। ওয়াহিদ জামিলের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামেও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে।

আরকেটি সূত্র দাবি করেছে, শনিবার রাতে ওয়াহিদ জামিল মুরাদ তাঁর সহকারীকে নিয়ে যখন কালুর বাড়িতে যান তখন তাঁর গাড়িতে আরও একজন ছিলেন। তিনি পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে পরে সটকে পড়েন। ওই ব্যক্তি ভারতীয় নাগরীক বলেও দাবি করেছেন সূত্রটি। আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত ওয়াহিদ জামিলের বিরুদ্ধে কড়া কোনো পদক্ষেপ না নিতে একটি শক্তিশালী গ্রুপ ব্যাপক তদবিরে নামে। যেদিন তাদেরকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন জানানো হয় সেদিন তাদের রিমান্ড বাতিল করতে তদবিরও চালায় ওই চক্রটি।

তবে আওয়ামী লীগ নেতা আতিকুর রহমান কালুর দাবি- তাঁর সঙ্গে ওয়াহিদ জামিলের কোনো পরিচয় নাই। তাঁকে তিনি চেনেনও না। এমনকি তাঁর দুই ছেলের সঙ্গে (তুষার হাটের ব্যবসায়ী, আশিকুর রহমান টাইলস ব্যবসায়ী) কোনো সম্পৃক্ততা নাই। আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘ওয়াহিদ জামিল অনেক বড় মানুষ। তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক। তাঁর সঙ্গে ১৫ কোটি টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়টি মোটেও সঠিক নয়। এটি হওয়ার কোনো সুযোগও নাই। আমরা কেউ তাঁকে চিনি না।’

নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম জানান, আওয়ামী লীগ নেতা আতিকুর রহমান কালুর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। এ ঘটনার পরে পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে দুটি শর্টগান, একটি পিস্তল ও ৩১ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরে আতিকুর রহমান কালুর ছেলে রেজওয়ানুর রহমান তুষার বাদী হয়ে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে গ্রেপ্তারকৃত দুজনকে আদালতে পাঠানো হয়। বুধবার আদালত তাদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।’

হুন্ডির টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এই ঘটনা কিনা জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘দুই পক্ষই মুখ খুলছে না। তবে ভিতরে বড় কোনো ঘটনা তো অবশ্যই আছে। আমরা সেটি বের করার চেষ্টা করছি। আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাবাদ ও সেই সাথে তদন্তে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে আশা করি।’

এএইচ/এস