রাজশাহীতে করোনা পরীক্ষায় নতুনদের আগ্রহ নেই, অধিকাংশ ফলোআপ রোগী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী রাজশাহী বিভাগের আট জেলা মিলে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা গত সোমবার পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৬ জন। গত ৭ সেপ্টেম্ব এ সংখ্যা ছিলো ১৮ হাজার ৪২৩ জন। সেই হিসেবে গত এক সপ্তাহে আক্রান্ত রোগী বেড়েছে এ বিভাগে মাত্র ৫৮৩ জন। অথচ গত মাসে প্রতিদিনই অন্তত ৫০০ রোগী আক্রান্ত হয়েছে। সেই হিসেবে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায়।

তবে বিশেষজ্ঞা বলছেন, আক্রান্তের হার হয়তো তেমন কমেনি। বরং এখন তার চেয়ে বেশিই আক্রান্ত রোগী থাকতে পারে। কিন্তু মানুষের মাঝে করোনা পরীক্ষা করানোর প্রবনতা অনেকটাই কমে গেছে। যারা আক্রান্ত হওয়ার পরে খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, কেবল তারাই আসছেন পরীক্ষা করাতে। আবার যেসব পরীক্ষা হচ্ছে, তার মধ্যে অধিকাংশই ফলোআপ পরীক্ষা। ফলে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন কম পাওয়া যাচ্ছে।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরলোজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সাবেরা গুলনেহার বলেন, ‘করোনার প্রকোপ কিছুটা কমেছে। এই ভাইরাসটি আগের চেয়ে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে আক্রান্ত হার তেমন কমেছে বলে মনে হয় না। কারণ নতুন আক্রান্ত রোগী পরীক্ষা করাতে আসছেন কম। পরীক্ষা করানোর প্রবনতা মানুষের মাঝে কমে গেছে ব্যাপক হারে। একে বারে যারা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, কেবল তারাই পরীক্ষা করাতে আসছেন বা পরীক্ষা করাচ্ছেন। না হলে আক্রান্ত হওয়ার অল্প লক্ষণে নিজেরাই গরম পানি খেয়ে বা ওষুধ খেয়ে সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন যাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে অধিকাংশই হলেন, ফলোআপ রোগী। যারা আক্রান্ত হওয়ার পরে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বার পরীক্ষা করাচ্ছেন। এ কারণে পজিটিভ রোগীর সংখ্যা কম পাওয়া যাচ্ছে। তবে মানুষে মাঝে করোনা নিয়ে এখন আ তেমন কোনো সচেতনতা নাই। ফলে আক্রান্ত হার যে কমেছে, সেটি বলা মুশকিল।’

এদিকে বিভাগের আট জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন শতকরা ৭ দশমিক ৩ এ নেমে এসেছে। গত মাসে সেটি বেড়ে গিয়ে হয়েছিলো ১৬ ভাগে। কমেছে মৃত্যুর হারও। গতকাল পর্যন্ত বিভাগের আট জেলায় মোট মারা গেছেন ২৮৫ জন। যা গত ৭ সেপ্টেম্বর ছিলো ২৬৮ জন। সেই হিসেবে গত এক সপ্তাহে মারা গেছে ১৭ জন।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দপ্তর থেকে দেওয়া তথ্য মতে, গতকাল সোমবার পর্যন্ত এ বিভাগের আট জেলা মিলে মোট করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা হলো ১৯ হাজার ৬ জন। এর মধ্যে রাজশাহীতে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭৬৫ জন, বগুড়ায় ৭১৯৫ জন, সিরাজগঞ্জে ২০২৮ জন, পাবনায় ১০৬২ জন, নওগাঁয় ১২৩৮ জন, জয়পুরহাটে ১০৪০ জন, নাটোরে ৯৩১ জন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭৪৭ জন। গতকাল পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮৫ জন। যেটি গত ৭ আগস্ট ছিলো ১৮৯ জন। তার আগে গত ৭ জুলাই ছিলো ১০০ জন।

গত ৭ আগস্ট রাজশাহী বিভাগের আট জেলার মধ্যে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিলো রাজশাহীতে ৩৪৯২ জন, বগুড়ায় ৫০৯৪ জন, সিরাজগঞ্জে ১৫৩৯ জন, পাবনায় ৮৫২ জন, নওগাঁয় ৯৬০ জন, জয়পুরহাটে ৭৮২ জন, নাটোরে ৫৪৪ জন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫১৭ জন।

এদিকে তার আগের মাসে অর্থাৎ গত ৭ জুলাই পর্যন্ত বিভাগের আট জেলার মধ্যে রাজশাহীতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো ১২৭৮ জন, বগুড়ায় ৩৪৪৬, সিরাজগঞ্জে ৬৬০, পাবনায় ৫৯৭, নওগাঁয় ৫৮৪, জয়পুরহাটে ৫১১, নাটোরে ২৫৩ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছিলো ১০১ জন।

রাজশাহী বিভাগের করোনা চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী প্রথম শনাক্ত হলেও রাজশাহী বিভাগে ধরা পড়ে পহেলা এপ্রিলে। এরপর আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পেতে থাকে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা। মাঝের তিন মাস সবেচেয় মারাত্মক আকার ধারণ করে করোনা পরিস্থিতি। তবে আশার কথা হলো সর্বশেষ গত মাসে এসে করোনা অনেকটায় কমতে শুরু করেছে। এমনকি কমছে মৃত্যু হারও।

বিষয়টি স্বীকার করে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গোপেন আচার্য্য বলেন, ‘এই বিভাগে শেষ এক মাসে অনেকটায় কমতে শুরু করেছে আক্রান্তের হার। এমনকি মৃত্যু হারও কমেছে।’

স/আর