রাজশাহীতে করোনা আক্রান্ত রোগীদের বাড়ির আবর্জনা ফেলা হচ্ছে কোথায়!

নিজস্ব প্রতিবেদক :

রাজশাহী জেলার প্রায় ৬৫ শতাংশ করোনা আক্রান্ত রোগীর আবাস এখন সিটিকর্পোরেশন (রাসিক) এলাকায় । আর সেই রোগীদের বাড়িতে সৃষ্ট প্রতিদিনকার সকল ধরণের আবর্জনা ফেলা হচ্ছে জনসম্মুখে বা যত্রতত্র উন্মুক্ত স্থানে। স্থানীয়দের অভিযোগ এমনটি ঘটছে স্বয়ং রাসিকের পরিচ্ছন্নতা শাখার অব্যবস্থাপনার কারণে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন করোনা আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে আসা যেকোনকিছু থেকেই এই রোগের সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে শতভাগ। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য আক্রান্তদের ব্যবহৃত বা বাড়িতে সৃষ্ট সবধরণের আবর্জনা পৃথক ভাবে সংগ্রহ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তা পুড়িয়ে ফেলতে হবে বা মাটিতে পুতে ফেলতে হবে। তবে রাসিকের এমন কোন উদ্যোগ নেই। এমন অবস্থায় রাসিকের পরিচ্ছন্নতা শাখার এধরণের উদাশিনতা নগরীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি আরো বাড়িতে তুলছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

তবে রাসিকের পরিচ্ছন্নতা শাখার প্রধান জানিয়েছেন, সরকারের দেয়া নিয়ম অনুসারে করোনা আক্রান্ত রোগীদের ব্যবহৃত যেকোন বস্তু তাদের নিজ দায়িত্বে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এগুলো বাসাবাড়ির ময়লার সাথে ফেলা যাবে না।

সিভিল সার্জনের দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রাজশাহী নগরীসহ জেলায় বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩৫৭জন। এদের মধ্যে রাজশাহী নগরীতেই ২৩০ জন। গড় হিসেবে যা ৬৪.৪৩ শতাংশ। ১৫ মে নগরীতে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। মে মাস নগরীর পরিস্থিতি তুলনামূলক স্বাভাবিক মনেহলেও গত ২৫ দিনেই শনাক্ত হয়েছে ২২১। সাপ্তাহিক হিসেবে দেখা যায়, ১জুন রাজশাহী নগরীতে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৯ জন, ৮জুন ১৯ জন, ১৫ জুন ৪৫ জন, ২২ জুন ১৩৯ জন এবং ২৫ জুন (বৃহস্পতিবার) ২৩০ জন। প্রতিদিন নগরীতে গড়ে ২০ থেকে ৩০ জন রোগী নতুন করে শনাক্ত হচ্ছে। শনাক্ত রোগীদের সকলেই বাড়িতে অবস্থান করছেন। এপর্যন্ত মারা গেছেন ৩জন।

সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করছেন। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা তাদের সেবা অব্যাহত রেখেছেন।

এদিকে নগরীর প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডের বিভিন্ন বাড়িতে একাধিক করোনা আক্রান্ত রোগী বসবান করছে। অন্যান্য বাড়ির পাশাপাশি করোনা আক্রান্তদের বাড়ি থেকেও প্রতিদিন পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা আবর্জনা সংগ্রহ করে উন্মুক্ত ভ্যানে করে তা প্রতিটি ওয়ার্ডের নির্ধারিত সেকেন্ডারি পয়েন্টে ফেলছে। এই সেকেন্ডারি পয়েন্টগুলোর অধিকাংশই ব্যস্ততম উন্মুক্ত এবং ছোটবড় রাস্তার পাশে।

ভদ্রা এলাকা সংলগ্ন পদ্মা পরিজাত আবাসিক এলাকার বিভিন্ন বাড়ি থেকে নিয়মিত আবর্জনা সংগ্রহ করেন এমন একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা সাথে কথা হলে তিনি জানান, এই এলাকায় দুই জন করোনা আক্রান্ত রোগী আছেন। তাদের বাড়ির সামনে গিয়ে বাঁশি বাজালে তারা এসে ময়লা নিজ দায়িত্বে নির্ধারিত ভ্যানে ফেলে দিয়ে যান। পরে অন্যান্য বাসাবাড়ির আবর্জনার সাথে তা পদ্মা আবাসিক এলাকার পার্কের পেছনে বস্তির পাশে উন্মুক্ত স্থানে ফেলে দেয়া হয়।

এদিকে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও এই পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাউকেই স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী পরে কাজ করতে দেখা যায়নি। এমনকি যে ভ্যানে করে তারা বাসা-বাড়ির ময়লা-আবর্জনা নিয়ে যায় তাও উন্মুক্ত এবং সেকেন্ডারি পয়েন্টগুলোও উন্মুক্ত। আর এই সেকেন্ডারি পয়েন্টগুলোতে দিন-রাত টোকাই ভাংড়ি কুড়াতে আর বিভিন্ন পশুপাখি আহার সংগ্রহে ব্যস্ত।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডা. নওশাদ আলী জানান, সংক্রমণ এড়াতে করোনা আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা বা ব্যবহৃত বস্তুগুলো যেখানে সেখানে না ফেলে পুড়িয়ে দিতে হবে। রাসিকের আবর্জনা ব্যবস্থাপনা পরিস্থিতি তুলে ধরা হলে তিনি জানান, অবশ্যই এটি ঝুঁকি পূর্ণ। করোনা আক্রান্তদের বাসাবাড়ির ময়লা যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না। কারণ এই আবর্জনার সাথে করোনাভাইরাস থাকাতে পারে। এতে স্থানীয়দের মাঝে সংক্রমণেন মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়াটাই স্বাভাবিক।


আরও পড়ুন : করোনা : রাজশাহী বিভাগে আরো ৫ জনের মৃত্যু, মোট শনাক্ত ৪৩২৭


এদিকে রাসিকের পরিচ্ছন্নতা শাখার প্রধান শেখ মোহাম্মদ মামুন জানান, করোনা আক্রান্তদের বাড়ির ময়লা বা আবর্জনা নিজ দায়িত্বে তাদেই পুড়িয়ে ফেলা উচিত। তবে দু:খের বিষয় করোনা আক্রান্ত সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো তা করছেন না।

স/রা