রাজশাহীতে গ্রীষ্মকালীন স্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা: মাঠ নয়, যেন পুকুর

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিভাগীয় পর্যায়ে দুদিনব্যাপী ৪৯ তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। মোট চারটি ইভেন্টে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে বিভাগের ৮ জেলার স্কুল থেকে যাওয়া দলগুলো। ফটুবল, হ্যান্ডবল, কাবাডি ও দাবা প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হওয়া স্কুলগুলো। কিন্তু একমাত্র দাবা খেলা ছাড়া বাকি তিনটি খেলায় আয়োজনের জন্য কোনো প্রস্তুতি রাখেনি রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিপ্তর। এর ফলে রাজশাহীর সরকারি হাজি মুহাম্মদ মহসিন উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠের দুই পাশে ফুটবল, কাবাডি ও হ্যান্ডবল খেলার জন্য যে মাঠ করা হয়েছে, সেখানে প্রায় হাঁটু পর্যন্ত কাাঁদা পানিতে গড়াগড়ি করে কোনো মতে খেলতে হচ্ছে স্কুল পর্যায় থেকে আসা খেলোয়াড়দের। এতে খেলোয়াড়রা তাদের সামার্থ তুলে ধরতে পারছেন না বলে দাবি করেছেন তাঁরা। এমনকি যে মাঠে খেলা হচ্ছে, সেকানে খেরা তো দূরের কথা বড় জোর মাছ চাষ করা যাবে বলে মন্তব্য জুড়ে দিয়েছেন খেলোয়াড়রা।

গতকাল বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ওই মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কিছুক্ষণ আগেই শেষ হওয়া মেয়েদের ফুটবলে নওগাঁ জেলার সঙ্গে ট্রাইব্রেকারে পরাজিত হয়ে মাঠের পাশে বসে একযোগে কান্নাকাটি করছিলেন বগুড়া শহিদ দানেশ উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা।

ম্যাচে পরাজিত হয়ে অনেকটায় ভেঙে পড়েছেন কমলমতি এই শিক্ষার্থীরা। তাঁদের মধ্যে জাকিয়া সুলতানা নামের এক শিক্ষার্থী কান্নাকাটি করতে করতে বলছিল, এই মাঠে খেলা তো দূরের কথা বড় জোর মাছ চাষ করা যাবে। এতো কাদা-পানি আর এক হাঁটু ঘাষের মধ্যে কিভাবে খেলবো আমরা? আমাদের ডেকে এনে শুধু কষ্ট দেওয়া হলো। ভালো মাঠ হলে আমরা কখনোই পরাজিত হতাম না। আমরা খেলেই জয় পেতাম।’


জাকিয়া জানান, তাঁরা জেলা পর্যায়ে একটি ম্যাচও হারেননি। অথচ বিভাগীয় পর্যায়ে খেলতে এসে, খারাপ মাঠে কারণে হেরে বিদায় নিতে হলো তাদের।

সরেজমিন ঘুরে আরও দেখা যায়, পুরো ফুটবল মাঠটিতে প্রায় এক হাঁটু কাঁদা-পানিতে ভরে আছে। সেই সঙ্গে একদিকে সামান্য ঘাস কাটা হলেও বাকি অংশটিতে প্রায় ১০ ইঞ্চি উচ্চতার ঘাসে ভর্তি। ফুটবল নিয়ে দৌড়দৌড়ি তো দূরের কথা, খেলোয়াড়রা ঠিকমতো হেঁটেই এগিয়ে যেতে পারছে না তীব্র ঘাস আর এ এক হাঁটু কাদা-পানির কারণে।

ফলে বল মাঠের মাঝখানেই আটকে থাকছে। পায়ের সামনের অংশ দিয়ে কোনো মতে বল উঁচু (ভলি) করে সামনের দিকে তিন-চার বাড়াতে পারছে খেলোয়াড়রা। কিন্তু ১০ ইঞ্চি উচ্চতার ঘাস, তার সঙ্গে হাঁটুপানি আর কাদার কারণে পায়ে করে বল নিয়ে যাওয়ার শক্তি কারোরই দেখা যয়নি। বল নিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা মাঠের কাদা-পানি ও ঘাসের মধ্যে দৌড়াতে গিয়ে পড়ে ডুবে যেন যাচ্ছে খেলোয়াড়রা। এতে চরম ক্ষোভ ও বিরক্ত ছড়িয়ে পড়ে খেলোয়াড় এবং তাদের তত্বাবধায়নের আসা শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ লক্ষীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কর্মচারী কাওসার মাঠের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘দেখেন তো এই মাঠে খেলা যায়। আমাদের ছেলেরা নাটোরকে হারিয়ে জয় পেয়েছে। কিন্তু ট্রাইব্রেকারে। গোল করার কারও সামর্থ হচ্ছে না এই মাঠে। এমন মাঠে কোনো প্রতিযোগিতা আয়োজন হতে পারে, ভাতওে কষ্ট লাগে। মানলাম বৃষ্টির কারণে কাদাপানি হয়েছে। তাই বলে মাঠের বড় বড় ঘাসগুলোও কাটার কোনো ব্যবস্থা থাকবে না? অথচ এই প্রতিযোগিতার জন্য আমরা জেলা পর্যায়ে কত প্রস্তুতি নিয়েছি। হাজা হাজার টাকা ব্যয় করে খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দিয়েছি দিনের পর দিন। এর কারণেই জেলায় শ্রেষ্ঠ হয়ে বিভাগে খেলতে এসেছে। খেলতে এসে দেখি মাঠের দূরঅবস্থা।’

ফুটবলের মাঠের পাশেই কাবাডির জন্য ছোট্ট একটি মাঠ করা হয়েছে। সেখানেও হাটুপানি আর কাদা। কাদায় যেন ডুবে যাচ্ছে খেলোয়াড়রা। পিছলা কাদায় দাঁড়িয়ে থাকতেও সমস্যা হতে দেখা গেছে।


নওগাঁর আল হেলাল ইসলামী একডেমী স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের ছেলেরা কাবাডিতে জিতেছে। কিন্তু এমন জয় আমরা চাইনি। মাঠে খেলার কোনো পরিবেশ নাই। এমন ঘাস আর কাদা-পানির মধ্যে ঠিকমতো ছেলেরা দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন। সেখানে খেলতে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এখানে ভালো খেলা আশা করাও ঠিক নয়। ক্রীড়া প্রতিযোগিতার নাম করে এমন আয়োজনের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা লোপাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে শুধু।’
এদিকে এমন অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিপ্তরের উপপরিচালক শরমিন ফেরদৌস বলেন, ‘আমরা তো সব প্রস্তুতিই রেখেছিলাম। কিন্তু আগের দিনের বৃষ্টির কারণে মাঠের কিছু সমস্যা হয়েছে।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, দুদিন আগে ঘাস কাটা যায়নি মেশিন নষ্ট ছিল। তাই এক দিকে ঘাস বড় ছিল। কিন্তু আমাদের আয়োজনে কোনো ত্রুটি ছিল না। এ আয়োজনে খেলোয়াড়দের যাতায়াত ভাতাসহ আনুসঙ্গিক খরচ বাবাদ ১১ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

তবে খেলোয়াড় ও শিক্ষকরা জানান, মাঠে কাবার পানিরও কোনো ব্যবস্থা ছিল না। খেলোয়াড়দের বোতলে করে বাইরে থেকে পানি এনে পান করাতে হয়েছে। এমন দূরঅবস্থার আয়োজনেই ১১ লাখ টাকা ব্যয় দেখাচ্ছে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিপ্তর। যা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করতে দেখা গেছে খেলোয়াড় ও শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে।