রাজশাহীতে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি, বাড়ছে করোনা

নিজস্ব প্রতিবেদক:


ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা রাজশাহীতে করোনার সংক্রমণরোধে গত ৩ জুন থেকে নতুন করে কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করেছিলো জেলা প্রশাসন। কিন্তু রাজশাহীবাসী সঠিকভাবে এসব বিধি-নিষেধ পালন করছে না।

স্বাস্থ্যবিধি চরমভাবে লঙ্ঘন করায় দিন দিন করোনা পরিস্থিতি আরও বেশি নাজুকের দিকে যাচ্ছে। তবে জেলা প্রশাসন বলছে, করোনার ভয়াবহতা নিরসনে নতুন যে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল তা সুপার মার্কেট ও অফিস-আদালতে অনেকটা কার্যকর হয়েছে।

কিন্তু খোলাবাজারে স্বাস্থ্যবিধি মান্য করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ জুন থেকে করোনা সংক্রমণ রোধে সন্ধ্যা ৭টা- ভোর ৬টা পর্যন্ত সকল প্রতিষ্ঠান, শপিংমল, মার্কেট, দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করেছিলেন জেলা প্রশাসন। কিন্তু এই নির্দেশনা উপেক্ষা করে সন্ধ্যা ৭টার পরও রাজশাহীতে অনেক শপিংমল, মার্কেট, দোকানপাট খোলা থাকতে দেখা গেছে।

এছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিকের মতই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে জনসাধারণকে রাস্তাঘাট, খোলাবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে চলাচল করতে দেখা গেছে। গতকাল রবিবার নগরীর সাহেব বাজার, আরডিএ মার্কেট, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন শপিংমল ও খোলা বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে উপচে-পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এসময় অনেককেই মাস্ক ছাড়া ঘোরাফেরা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করতে দেখা গেছে। শুধু মহানগরীর অভ্যন্তরেই নয়; জেলার বাকি ৯টি উপজেলাতেই এভাবেই স্বাস্থ্যবিধি চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের আরতের অধিকাংশ লোকজনকেই স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি।

তবে জেলার ২৩ লাখ ৭৮ হাজার মানুষের বেশিরভাগই পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি না মানায় প্রশাসন প্রচারণার পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা ও দণ্ড প্রদান করে যাচ্ছে। রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরীফুল হক বলেন, ‘সুপার মার্কেট ও অফিসে স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও খোলাবাজারে একেবারেই মানছে না কেউ। সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪টি ও ৯টি উপজেলায় প্রতিদিনই দুটি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি।

আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে বিভিন্ন উপায়ে জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।’ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ি হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মশিউর রহমান বলেন, ‘গোদাগাড়ী উপজেলার অবস্থাও ভয়াবহ। কিন্তু কেউ কিছু মানছে না। তাদের কথা হলো- মানুষের মৃত্যু নির্ধারিত সময়েই হবে। তাই কারও মৃত্যু যদি এই সময়ে লেখা থাকে তাহলে হবেই। এসব চিন্তা নিয়ে সবাই ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়াচ্ছে।

আর এমন হঠকারিতার কারণেই উপজেলায় করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। জেলার সির্ভিল সার্জন ডা. কাউয়ুম তালুকদার বলেন, ‘যার মধ্যে মৃত্যুর ভয় আছে সে-ই স্বাস্থ্যবিধি মানছে। বাকিদের ভ্রুক্ষেপ নেই।’ এদিকে চলমান রাজশাহী লকডাউনে নতুন বিধি-নিষেধ আরোপ করা হলেও করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহের দিকেই যাচ্ছে। গত শনিবার রাজশাহীর দুটি পিসিআর ল্যাবে ৩৬৬ নমুনা পরীক্ষায় ১৮৪ জন পজেটিভ আসে।

সেক্ষেত্রে সনাক্ত হার ছিল ৫০ দশমিক ২৮ শতাংশ। এর আগের দিন শুক্রবার ২৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৩১ জনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ওই দিন করোনা শনাক্তের হার ছিল ৫১ দশমিক ১৮ শতাংশ। তারও আগের দিন বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে ১২৩ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করে ৫২ জনের দেহে করোনা সনাক্ত হয়েছে। বহস্পতিবার করোনা সনাক্তের হার ছিল ৪২ দশমিক ২৮ শতাংশ।

তিন দিনের করোনা সনাক্তের হারের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রাজশাহীতে দিন দিন করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। অপরদিকে গতকাল রবিবার রাজশাহীতে ভ্রাম্যমাণ ফ্রি করোনা টেস্ট (র‌্যাপিড টেস্ট) চালু হয়েছে। সকাল ১০টা থেকে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে ও নগর পুলিশের সহায়তায় নগরীর পাঁচটি পয়েন্টে ২৮৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৭ জন পজেটিভ এসেছে বলে জানান রাজশাহী সিভির সার্জন ডা. কাইউম তালুকদার। সেই অনুযায়ী- ভ্রাম্যমাণ করোনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ছিল ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ। জেলা প্রশাসক (ডিসি) আব্দুল জলিল বলেন, ‘রবিবার বিকালে করোনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সেখানে রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন প্রধান অতিথি ছিলেন। সভায় বিকাল ৫টার মধ্যে শপিংমল, দোকানপাট বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এজন্য জনগণের সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন।’

স/এআর