রাজশাহীতে উপসর্গ নেই, টেস্টে পজিটিভ

নিজস্ব প্রতিবেদক:


উপসর্গ নেই, টেস্টে ধরা পড়ছে করোনা পজিটিভ। নগরীতে ভ্রাম্যমাণ র‌্যানডম করোনা টেস্টে এমন ফলাফল এসেছে। তবে করোনা পজিটিভরা বলছেন- তাদের নেই জ্বর, সর্দি, কাশি ছাড়াও অন্য কোন ধরনের সমস্যা। ঠিক আছে খাবারের রুচি, পাচ্ছেন ঘ্রাণও।

এমন অবস্থায় করোনা ভাইরাস সংক্রমনের দিক থেকে উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে। এ পরিস্থতিতে ঘরবন্দির বিকল্প নেই মনে করছেন চিকিৎসকরা। বুধবার (৯ জুন) রাজশাহী নগরের ১৩টি ভ্রাম্যমাণ বুথে ফ্রি র‌্যানডম করোনা টেস্ট করা হয়েছে। এ টেস্টে ৯৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১২৬ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। যা শতকরা হিসেবে ১৩ শতাংশ।

মাহমুদ নামের এক যুবক জানান, ‘আমার কোন উপসর্গ ছিলো না। নর্মাল ছিলো সব কিছু। সর্দি সর্দি লাগছিলো, অ্যালাকট্রোল খেয়েছিলাম। ঠিক হয়ে গিয়েছিলো। তবে করোনা পজিটিভ হওয়ার পরে দুদিন থেকে শরীরে শক্তি পাচ্ছিনা।’

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আঞ্জুম আরা বেগম জানান, ‘উপসর্গ কিছু না কিছু থাকবেই। যাদের পজিটিভ এসেছে তারা হয়তো উপসর্গ বুঝতে পারেনি।’

বুধবার নগরের আমচত্বরে ৫৮ জনের পরীক্ষা করে ৭ জনের দেহে করোনা ভাইরাস পাওয়া গেছে। একইভাবে কাশিয়াডাঙ্গায় ১০০ জনে মধ্যে ১১ জন, লক্ষ্মীপুরে ১০০ জনে ১৭ জন, সিঅ্যান্ডবি মোড়ে ১২৬ জনে ২৩ জন, সাহেব বাজারে ১০২ জনে ৩১ জন, ভদ্রামোড়ে ১০৪ জনে ১২ জন, তালাইমারীতে ১০০ জনে ৩ জন, বিন্দুর মোড়ে ১০০ জনে ১০ জন, টুলটুলিপাড়ায় ৫৭ জনে একজনও করোনা পজিটিভ হয়নি। এছাড়া কাদিরগঞ্জে ৬০ জন ৪ জন, পঞ্চবটিতে ১৬ জনে ২ জন, মেহেরচন্ডীতে ৩৭ জনে ৪ জন ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ১৭ জনে ২ জন করোনা পজিটিভ হয়েছেন।

এর আগে গত সোমবার নগরের পাঁচটি পয়েন্টে করোনার র‌্যানডম টেস্টে শুরু হয়। সেইদিন আক্রান্তের হার ছিলো ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এর পরের দিনে মঙ্গলবার (৮ জুন) ছিলো ১০ দশমিক ২২ শতাংশ, বুধবার (৯ জুন) আক্রান্তের হার ছিলো ১২ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

করোনার র‌্যানডম টেস্টের ফলাফলে দেখা গেছে- প্রথম দিনের তুলনায় পরীক্ষা ও আক্রান্তের হার বেড়েছে। তবে অনেকেই উপসর্গ ছাড়াই করোনা পরীক্ষা করছেন। তাদের মধ্যে অনেকের করোনা পজিটিভ এসেছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. চিন্ময় কান্তি দাস বলছেন, র‌্যানডম টেস্টের মাধ্যমে একটা ধারনা পাওয়া যাচ্ছে। তবে যারা নেগেটিভ হচ্ছেন, পিসিআর টেস্টের মাধ্যমে তাদের পরীক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে।

অন্যদিকে, আক্রান্ত ও মৃত্যু দুই পাল্লাদিয়ে বাড়ছে। এমন অবস্থায় নতুন হটস্পটে রূপ নিয়েছে রাজশাহী। করোনার লাগাম টেনে ধরতে রাজশাহীতে চলছে বিশেষ বিধি-নিষেধ। তার পরেও কমানো যাচ্ছে না সংক্রমন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে প্রতিদিনই নতুন রোগীর চাপ বাড়ছে। সীমিত জনবল নিয়ে একই হাসপাতালে করোনাসহ সবধরনের চিকিৎসা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।

বিষয়টি স্বীকার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে- প্রতিদিন হাজারও রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে হাসপাতালে। শুধু করোনা নয়- হাসপাতালটিতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। একই সাথে অন্য রোগী ও করোনায় আক্রান্ত রোগীর চলাফেলা চিন্তার বিষয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৮ জন করোনা ও উপসর্গে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গত চার জুন করোনার দুই বছরের মধ্যে হাসপাতালটিতে সর্বোচ্চ ১৬ জনের মৃত্যু হয়। এনিয়ে চলতি জুন মাসের নয় দিনে ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর গত ১৬ দিনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন ১৩০ জন।

চলতি মাসের ৮ ও ৯ জনু মিলে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সাত জুন ৭ জন, তার আগের দিন ৬ জন, গত ৫ জুন ৮ জন, চার জুন ১৬ জন, তার আগের দিন ৯ জন, দুই জুন ৭ জন ও ১ জুন ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে।
অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে নেই রাজশাহীর করোনা পরিস্থিতি। নতুন রোগী ভর্তির সংখ্যাও বেড়েছে হাসপাতালে। সক্ষমতা ছাড়িয়ে হাসপাতালটিতে গত বুধবার ভর্তি ছিলেন ২৭৭ জন।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার শামীম ইয়াজদানী জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পর এখন করোনার হটস্পটে পরিণত হয়েছে রাজশাহী। ছড়িয়েছে সামাজিক সংক্রমণও। এই সংক্রমণের হার জানতে চলছে ভ্রাম্যমাণ করোনা পরীক্ষা।