রাজশাহীতে ঈদের আগে-পরে বাড়তে পারে ডেঙ্গু রোগি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ডেঙ্গু রোগি থাকলেও আতঙ্কের কারণ নেই এমন কথা বরাবর জানিয়ে আসছেন রাজশাহীর চিকিৎসকরা। রাজশাহীতে ডেঙ্গুর  জীবাণু বহনকারী এডিস মশা আছে কি নেই সুনির্দিষ্ট ভাবে জানায়নি কেউ। তার পরেও একের পর এক করে ৩৩ রোগি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

অন্যদিকে ঈদের আগে ও পরে রাজশাহীতে বাড়তে পারে ডেঙ্গু রোগির সংখ্যা। যদিও রাজধানীকে বেশ কবজা করেছে ডেঙ্গু। রাজধানীতে থাকা রাজশাহীর মানুষেরা বাড়িতে ফিরলে বাড়তে পারে ডেঙ্গু রোগির সংখ্যাও এমনটি বলছেন সচেতন সমাজের নেতৃবৃন্দরা। তাই এইদিকটা খেয়াল রাখার পরামর্শ তাদের।

জানা গেছে, গত ২৪ ঘন্টায় রামেক হাসপাতালে নতুন করে ৯ জন ডেঙ্গু রোগি ভর্তি হয়েছেন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবার আলাদাভাবে ডেঙ্গু ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। একজন ডেঙ্গু রোগিকে ভর্তির মধ্যে দিয়ে গতকাল সোমবার সকাল থেকেই ওই ওয়ার্ডের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এর আগে তিনটি বেড নিয়ে হাসপাতালের ১৭ নম্বর কেবিনটিকে ডেঙ্গু কর্নার হিসেবে ঘোষণা করে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছিল রোগিদের। কিন্তু সেখানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে মশারি টানিয়ে ডেঙ্গু রোগিদের ভর্তি ও চিকিৎসা চলছিল।

এদিকে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগির সংখ্যা বেড়েই চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১২ জন নতুন রোগি রামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই নিয়ে হাসপাতালে মোট ৩৩ জন ডেঙ্গু রোগি চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়েছিল। তার অবস্থা এখন উন্নতির দিকে। অন্য ৩২ জন ডেঙ্গু কর্নার ও ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তবে এখন পর্যন্ত কেউই রাজশাহীতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হননি। ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে আক্রান্ত হয়ে রামেক হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

জানতে চাইলে রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক (ডিডি) ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, হাসপাতালের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডকে আলাদাভাবে ডেঙ্গু ওয়ার্ড বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এটি আগে চক্ষু ওয়ার্ড ছিল। আজ একজন ডেঙ্গু রোগিকে সেখানে ভর্তিও করা হয়েছে। সেখানে বর্তমানে ১৭টি বেড রয়েছে। সেখানে আরও তিনটি বেড সংযুক্ত করে ওয়ার্ডটি মোট ২০ শয্যার আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রূপ দেয়া হবে।

আলাদাভাবে করা ওই ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চারজন চিকিৎসক ও ছয়জন নার্স দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের রেজিস্ট্রার চিকিৎসকরা সেখানকার ডেঙ্গু রোগিদের চিকিৎসা কার্যক্রম মনিটরিং করবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, আর মাত্র কয়েক দিন পরেই ঈদ-উল-আযহা। ফলে সামনে সপ্তাহ থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্নস্থান থেকে মানুষজন পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে রাজশাহীর বাড়িতে আসবেন। ফলে তাদের মধ্যে ডেঙ্গু রোগ নিয়েও অনেক আসবেন এ কথা ধরাই যায়। তাই বাড়তি সতর্কতা হিসেবে রামেক হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড খোলা হয়েছে।

তবে ডেঙ্গু কর্নারটিও থাকছে। পরিস্থিতি বুঝে এ ব্যাপারে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। আপাতত এভাবেই ডেঙ্গু রোগিদের চিকিৎসা দেয়া হবে বলেও জানান হাসপাতালের উপ-পরিচালক।

ডা. সাইফুল ফেরদৌস আরও বলেন, সোমবার পর্যন্ত হাসপাতালে ৩৩ জন রোগী চিকিৎসাধীন। এদের প্রত্যেকেরই ডেঙ্গু সনাক্ত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৩ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগি ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত ২০ জন রোগি আবার সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেও গেছেন।

আর ডেঙ্গু সনাক্তকরণের জন্য এনএসওয়ান রক্ত পরীক্ষার ‘স্ট্রিপ’ ও ‘রিএজেন্ট’ সরবরাহের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। বর্তমানে সিবিসি ও প্লাটিলেট পরীক্ষার ব্যবস্থা হাসপাতালে আছে। কিন্তু স্ট্রিপ এবং রিএজেন্ট সরবরাহ না থাকার কারণে এনএসওয়ান পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে রোগিদের বাইরের ক্লিনিকে এ পরীক্ষাটি করাতে হচ্ছিল। তবে আজ থেকে এগুলোর ব্যবস্থাও হয়েছে৷ তাই ডেঙ্গুর সব ধরনের সেবা এখন রামেক হাসপাতালেই সম্ভব বলে জানান ডা. সাইফুল ফেরদৌস।

 

স/আ