রক্তের ক্যানসার মাল্টিপল মায়ালোমা

মাল্টিপল মায়ালোমা এক ধরনের ব্লাড বা লিকুইড ক্যানসার। একে Bone Marrow ক্যানসারও বলা হয়। বোন মেরো হল হাড়ের মজ্জা। এ মজ্জা হলো রক্ত তৈরির কারখানা। রক্তের মূল উপাদান বিভিন্ন ব্লাড সেল তৈরি করা এ বোন মেরোর প্রধান কাজ। চিকিৎসকরা মায়ালোমাকে সুনির্দিষ্টভাবে প্লাজমা সেল ক্যানসার বলতে পছন্দ করেন। কারণ প্লাজমা সেলই এ ক্যানসারের মূল কারণ। রক্তের তরল উপাদান প্লাজমা আর এ প্লাজমা সেল একই নয়।

রক্ত দুটো উপাদান দিয়ে তৈরি। ব্লাড সেল আর প্লাজমা। প্লাজমা অংশ লিকুইড। ব্লাড সেল তিন ধরনের থাকে। RBC, WBC এবং প্লেটেলেটস। WBC কয়েক ধরনের আছে। তার একটি ধরন প্লাজমা সেল। এটি তৈরি করে B সেল। তাই অনেকে একে আরও সহজ করে বোঝাতে শুধু প্লাজমা সেল না বলে প্লাজমা বি সেল বলে। প্লাজমা সেলের কাজ রক্তে এন্টিবডি তৈরি করা। এন্টিবডির কাজ শরীরে কোনো রোগজীবাণু ঢুকলে তাকে মেরে ফেলা।

মায়ালোমা হলে ত্রুটিযুক্ত প্লাজমা সেলের সংখ্যা হাড়ের মজ্জায় বেড়ে গেলে হাড়ের অন্য সেল তৈরির কাজেও ব্যাঘাত ঘটে। তাই দেখা যায় মায়ালোমা হলে WBC প্রোডাকশনে সমস্যা দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে RBC এবং প্লেটলেটস-এর প্রোডাকশনও কমে যায়। শরীর মারাত্মক ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠে তখন। RBC’র অভাবে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়, রক্তের লোহিত কণিকার অভাব হলে অক্সিজেন পরিবহন ক্ষমতা কমে যায়। ফলে সহজে বিভিন্ন ইনফেকশন বাসা বাঁধে। প্লেটেলেটস কমে যায় বলে রক্ত সহজে জমাট বাঁধে না বলে সহজে নাক দাঁত থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকে।

মায়ালোমার শুরু হাড়ে। হাড়ের কাজ প্লাজমা সেল তৈরি করা। কিন্তু মায়ালোমা বোনের মজ্জা বা অস্থিমজ্জার স্বাভাবিক কাজকে নষ্ট করে দেয়। এটি নারীদের চেয়ে পুরুষদের বেশি হয়। কালো লোকদের বেশি হয় সাদাদের চেয়ে। এটি বয়সি লোকদের বেশি হয়। বিশেষ করে ষাট বছরের ঊর্ধ্বে। মায়ালোমার কারণ চিকিৎসকরা স্পষ্ট করে এখনো জানে না। তবে একটি কারণ চিহ্নিত করতে পেরেছে। যাদের শরীরে monoclonal gammopathy of unknown significance বা সংক্ষেপে গটেঝ থাকে, তাদের এটি হওয়ার আশংকা বেশি। এটির কারণ যেমন অস্পষ্ট, তেমনি এটির শুরুও খুব অস্পষ্ট থাকে। সহজে লক্ষণ উপসর্গ দেখা দেয় না, যতদিন না পর্যন্ত অ্যাডভানস স্টেজে যায়। শুরুর দিকে শরীরের বিভিন্ন হাড় যুক্ত অংশ ব্যাক, স্পাইন, হিপ, ফিট এমন সব জায়গায় ব্যথা করে, খুব ফ্যাটিগ বা দুর্বল লাগে। সময়ে ধীরে ধীরে অন্য উপসর্গগুলো দেখা দেয়। এটি যেহেতু খুব আস্তে আস্তে প্রগ্রেস হয়, শুরুতে ডায়াগনোসিস এবং ট্রিটমেন্ট শুরু করতে পারলে কিউর না করতে পারলেও প্রগ্রেসকে ঠেকিয়ে রেখে, সিম্পটমগুলোকে কমিয়ে অনেক বছর বেঁচে থাকা যায়। অ্যাডভান্স স্টেজে চলে গেলে পাঁচ থেকে সাত বছর বাঁচার আশংকা থাকলেও রোগের শুরুতে ডায়াগনোসিস এবং ট্রিটমেন্ট শুরু করতে পারলে দশ থেকে পনেরো বছরও মাল্টিপল মায়ালোমা নিয়ে উপসর্গ কমিয়ে রাখা যায়।

বর্তমানে মাল্টিপল মায়ালোমা অনেক উন্নত ধরনের ট্রিটমেন্ট আছে। রোগের বিস্তার অনুযায়ী টার্গেটেড থেরাপিতে কম্বাইন্ড মেডিসিন, ক্যানসার কোষগুলোকে মারতে কেমোথেরাপি, অথবা শরীরের ইমিউনিটি বাড়িয়ে তার মাধ্যমে ক্যানসার সেলকে দমানোর ইমিউনোথেরাপি, ইত্যাদির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।

লেখক : চিকিৎসক, ইংল্যান্ডে কর্মরত

opurbo.chowdhury@gmail.com

 

সূত্রঃ যুগান্তর