যৌনকর্মীরা পুরো অর্থ না পেলেও ধর্ষণের অভিযোগ নয়: ভারতীয় আদালত

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ভারতে কুড়ি বছরের পুরনো একটি মামলার সূত্র ধরে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে যে ধর্ষণের অভিযোগ আনা এক মহিলা, যিনি পেশায় যৌনকর্মী ছিলেন, গ্রাহকদের কাছ থেকে পরে তিনি দাবি অনুযায়ী অর্থ না পেলে ধর্ষণের অভিযোগ আনতে পারেন না।

আইন বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন এর ফলে যৌনকর্মীদের ধর্ষণের অভিযোগ আনার অধিকার খারিজ হয়ে যাচ্ছে এমনটা নয় – কিন্তু দেশে যে সব সংগঠন যৌনকর্মীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে তারা এই রায়ের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

তাদের আশঙ্কা, এর ফলে গ্রাহক পয়সা দিক বা না-দিক, যৌনকর্মীরা হয়তো তার বিরুদ্ধে আর অভিযোগই জানাতে পারবেন না।

ভারতের ব্যাঙ্গালোরে গৃহপরিচারিকার কাজ করা এক মহিলা কুড়ি বছর আগে অভিযোগ করেছিলেন, তিন ব্যক্তি তাকে একটি অটোতে তুলে নিয়ে একটি গ্যারাজে আটকে রাখে ও লাগাতার ধর্ষণ করে।

কর্নাটক হাইকোর্টে ওই তিন অভিযুক্তর সাজাও হয়েছিল, কিন্তু গত সপ্তাহে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তাদের খালাস করে দিয়েছে।

বিচারপতি পিনাকী চন্দ্র ঘোষ ও অমিতাভ রায়ের বেঞ্চ বলেছে, দীর্ঘ শুনানি থেকে এটা স্পষ্ট যে ওই মহিলা অভিযুক্তদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের বিনিময়ে অর্থ আশা করেছিলেন, কিন্তু সেটা না-পাওয়াতেই তিনি ধর্ষণের অভিযোগ আনেন।

কিন্তু এই রায়ের ফলে কি ভারতে যৌনকর্মীরা গ্রাহকদের কাছ থেকে চুক্তি অনুযায়ী টাকা না-পেলেও ধর্ষণের অভিযোগ আনতে পারবেন না?

 

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও মানবাধিকার সংগঠন কমন কজের মীরা ভাটিয়া বিবিসি বাংলাকে এর জবাবে বলছিলেন, “একজন যৌনকর্মীর অবশ্যই ধর্ষিতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে – কারণ যে মুহুর্তে তিনি শারীরিক মিলনে আপত্তি জানাবেন সেখান থেকেই ধর্ষণের শুরু। শুধু ভারত নয়, বহু দেশের আইনেই পরিষ্কার বলা আছে যেখানে সম্মতি শেষ, সেখান থেকেই সেটা ধর্ষণ।”

“ফলে একজন যৌনকর্মীও তার বাইরে নন, যৌনকর্মী বলেই তিনি ধর্ষিতা হতে পারবেন না এমনটাও নয়। তা ছাড়া শুধু যৌনকর্মী বলেই তার সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে কি না, পরে টাকা দেওয়া হবে বলে ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে কি না, এই সব বিষয়ও দেখতে হবে,” বলছেন মীরা ভাটিয়া।

তবে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের ভালমন্দ নিয়ে সিনিয়র আইনজীবীরা কেউই প্রায় সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

কলকাতায় হাজার হাজার যৌনকর্মীদের অধিকার অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে যে সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি, তার সচিব ভারতী দে অবশ্য পরিষ্কার করেই বলছিলেন যে তাদের পক্ষে এই রায় কিছুতেই মানা সম্ভব নয়।

 

ভারতী দে’র কথায়, “তার মানে তো কথা দিয়েও গ্রাহক কথার খেলাপ করতে পারবে, সবটাই তার ইচ্ছের ওপর। অথচ যৌনকর্মীদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনও দাম থাকছে না। এত বড় একটা অন্যায় করা সত্ত্বেও গ্রাহকের বিরুদ্ধে যৌনকর্মীরা নালিশ করতে পারবেন না, এটা কেমন কথা? এরকম একটা বাজে রায় আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারি না।”

তিনি বলছিলেন, এই রায় যৌনকর্মীদের মর্যাদায় আঘাত হানবে যেমন – তেমনি গ্রাহকরাও হয়তো এরপর চুক্তিমতো পয়সা দিতে চাইবেন না, দুর্বারের সেই আশঙ্কাও আছে।

ভারতী দে বলেন, কলকাতার যৌনপল্লী সোনাগাছিতে এ ধরনের ঘটনা বিরল এবং ঘটলেও মোটামুটি সহজে মিটিয়ে ফেলা যায় – কিন্তু এই রায়ের ফলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে পারে।

যৌনকর্মীর সঙ্গে শারীরিক মিলনকে কখন ধর্ষণ বলা যাবে, কখন সম্মতি প্রত্যাহার করা হয়েছে, কী চুক্তির ভিত্তিতে সম্মতি আদায় করা হয়েছিল – এগুলো আদালতে প্রমাণ করা সব সময়ই কঠিন।

ভারতের শীর্ষ আদালতের এই সাম্প্রতিক রায় সেই বিষয়টাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে এমন আশঙ্কা কিন্তু ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা