যে ভাবে সাজানো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ ভবন

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশ সরকারের অর্থানুকূল্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ ভবন। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয় এবং গত ২৫ মে এই ভবনের উদ্বোধন করেন ভারত আর বাংলাদেশের দুই প্রধানমন্ত্রী- নরেন্দ্র মোদি এবং শেখ হাসিনা।

প্রায় ৪৬ হাজার বর্গফুট জায়গার অত্যাধুনিক দোতলা বাংলাদেশ ভবনে আছে- একটি মিলনায়তন, জাদুঘর এবং গ্রন্থাগার। গ্রন্থাগারের জন্য বাংলাদেশ থেকে নেয়া হয়েছে প্রায় ৩৫০০টি বই। এর মধ্যে অনেক বই’ই রবীন্দ্রচর্চা এবং রবীন্দ্র গবেষণাভিত্তিক, যা ভারতে সহজলভ্য নয়।

গ্রন্থাগার আর জাদুঘরটিতে রয়েছে অনেকগুলি ইন্টার অ্যাকটিভ, টাচ স্ক্রিন কিয়স্ক। রয়েছে রবীন্দ্রনাথের গান, কবিতা শোনার জন্য অডিও কিয়স্ক। ছাপানো বই ছাড়াও ডিজিটাল বইও পড়তে পারবেন পাঠকরা।

জাদুঘরটিকে মূলত ৪টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। শুরু হয়েছে উয়ারি বটেশ্বরে প্রাপ্ত ২৫০০ হাজার বছর পুরনো সভ্যতার নিদর্শন দিয়ে। শেষ হয়েছে ৭১- এর মুক্তিযুদ্ধ দিয়ে। মাঝের অনেকটা সময় জুড়ে এসেছে রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গ।

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন যেমন রয়েছে, তেমনই আছে অতি দুর্লভ কিছু ছবি, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত নানা প্রত্ন নিদর্শনের অনুকৃতি। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলির মধ্যে উয়ারি বটেশ্বরে প্রাপ্ত প্রত্ন নিদর্শন যেমন আছে, তেমনই আছে ষষ্ঠ-সপ্তম শতকের পোড়ামাটির কাজ, ১৬‘শ শতকের নক্সাখচিত ইট প্রভৃতি। রয়েছে পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়ের নানা নিদর্শন, দেব-দেবীদের মূর্তি। কোনোটা পোড়ামাটির, কোনোটি ধাতব।

মাঝখানে সুলতানি এবং ব্রিটিশ শাসনামলও এসেছে জাদুঘরটিতে রাখা নানা প্যানেলে। রয়েছে ঢাকার জাতীয় জাদুঘর থেকে আনা বেশ কিছু মুদ্রা। এই পর্যায়টি শেষ হয়েছে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময়ে। তারপরের বিভাগ শুরু হয়েছে ৫২-র ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক যে বিভাগ, তার আগে ভাষা আন্দোলনের প্রসঙ্গটি এ কারণে রাখা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সূচনা তো সেই ৫২-তেই। নানা প্যানেলে আর ছবিতে ধরা রয়েছে ১৯৫২-র ২১শে ফেব্রুয়ারি সকালে পাকিস্তানী সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যে ঐতিহাসিক মিছিল হয়েছিল, সেখানে গুলি চালনা আর ভাষা শহীদদের প্রসঙ্গ। তারপরে ৬২-র ছাত্র আন্দোলন, ৬৬-র আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা- এসব পেরিয়ে ৭০- এর নির্বাচন প্রসঙ্গ রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রয়েছে একটি আলাদা গ্যালারি। তাতে যুদ্ধের সময়কার নানা দুর্লভ ছবিসহ শরণার্থী শিবিরের চিত্র। রবীন্দ্রনাথ নিয়ে রয়েছে সম্পূর্ণ পৃথক একটি বিভাগ। পূর্ববঙ্গে সাজাদপুর, শিলাইদহ, পতিসরের কাছারী বাড়ির ছবি, সেখানে কবির ব্যবহৃত নানা জিনিষের অনুকৃতি দিয়ে সাজানো রয়েছে জাদুঘরের এই অংশটি। কয়েকটি ব্যবহৃত বস্তুও আনা হয়েছে সাজাদপুর থেকে- কেরোসিনের বাতি, লবণ দানি, খাবার পাত্র। যেসব প্রত্ন নিদর্শন নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেগুলি দীর্ঘমেয়াদী ঋণ হিসেবে বিশ্বভারতীতে এসেছে। চিরস্থায়ীভাবে দেয়া না হলেও বেশ অনেক বছর থাকবে। নিদর্শনগুলি এসেছে সরকারের সঙ্গে বিশ্বভারতীর চুক্তির মাধ্যমে।