যুদ্ধের দুয়ার খুলে যেতে পারে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

মঞ্চ প্রস্তুত, কুশীলবরাও প্রস্তুত। যে কোনো সময় শুরু হয়ে যেতে পারে যুদ্ধ।

 

এরই মধ্যে এক কুশীলব চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী চ্যাং ওয়াংকুয়ান দেশের অধিবাসীদের সাবধানে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যে কোনো সময় ‘গণযুদ্ধ’ শুরু হয়ে যেতে পারে। গণযুদ্ধ বলতে তিনি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা বলেছেন।

 

হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে চীনকে টেনে এনেছে ফিলিপাইন। আদালতের রায় গেছে ফিলিপাইনের পক্ষে। কিন্তু চীন বলে দিয়েছে, দেশের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে দক্ষিণ চীনসাগরীয় এলাকাকে বিমান প্রতিরক্ষা অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হবে।

 

চীনের পূর্বাঞ্চলীয় ঝেজিয়াং প্রদেশের সামরিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শনকলে ওয়াংকুয়ান বলেন, চীনা জনগণের উচিত জাতীয় প্রতিরক্ষা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা, সচেতন হওয়া। কেননা দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা বর্তমানে হুমকির মুখে।

 

চীনের রাষ্ট্র পরিচালিত বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, উপকূলীয় এলাকার নিরাপত্তা হুমকি সম্পর্কেও দেশবাসীকে সাবধান করে দেন। জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির গভীরতা সম্পর্কেও ভালভাবে জ্ঞানার্জন করা খুবই প্রয়োজন। সামরিক ও পুলিশ বাহিনীসহ দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সব অঙ্গের দায়িত্ব রয়েছে এখন তার হাতে।

 

কিন্তু কেন এই যুদ্ধ-প্রস্তুতি। এর উত্তরে কয়েকজন কূটনৈতিক বলছেন, চীন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, যুক্তরাষ্ট্র ফিলিপাইনকে উস্কানি দিয়ে দক্ষিণসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে বিরোধে লেলিয়ে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র নিজের সুবিধা ও লাভ আদায়ের জন্যই ফিলিপাইনকে এই উস্কানি দিবে।

 

এরই মধ্যে বিজনেস ইনসাইডার বলছে, ওই এলাকায় নৌ চলাচলের সুবিধা তো আছেই, সেইসঙ্গে সেখানে রয়েছে বিপুল পরিমাণে গ্যাস ও তেলের মজুদ। চীনের আনুমানিক হিসেব অনুযায়ী, সেখানে রয়েছে ১৩০ বিলিয়ন ব্যারেল তেল। চীন মনে করে, কোনো বিরোধ ছাড়াই এসব সম্পদ তাদের।

 

এরইমধ্যে চীন দক্ষিণ চীনসাগরের  ঠিক দক্ষিণে বহু যুদ্ধ জাহাজ ও পারমাণবিক জঙ্গি বিমান মোতায়েন করেছে। ফ্রি থট প্রজেক্ট নামে একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্কের আনুমানিক তথ্য অনুযায়ী, চীনের গণমুক্তি ফৌজের তিনটি অঙ্গের সবগুলোর শত শত জাহাজ ও সাবমেরিন  নিয়ে তাজা গোলাবারুদের মহড়া করা হয় দেশের পূর্বে, উত্তরে ও দক্ষিণ চীনসাগরে। তারা কতটা আক্রমণে পারদর্শী বা প্রতিরক্ষার সামর্থ্যই কতটা, তা সারা বিশ্বকে দেখিয়ে দেওয়া।

 

সামরিক মহড়ার মাধ্যমে চীন প্রকারান্তরে দেখিয়ে দিল-আদালতের রায় যাই দেওয়া হোক না কেন দক্ষিণসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে তারা কি ভাবছে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটল।

 

war

 

চীনা নৌবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই মহড়ার মাধ্যমে বিশ্বকে দেখিয়ে দেওয়া হলো যে, হামলায় অত্যন্ত দ্রুত সেনা চলাচল, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বস্তুতে আঘাত হানা ও হামলার তিব্রতা কতো। সেইসঙ্গে এ যুগে তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক নৌযুদ্ধ হবে অত্যন্ত ভয়াবহ ও সংক্ষিপ্ত, অকস্মাৎ থেমে যাবে। এ ছাড়া এতে থাকবে ইলেক্ট্রনিক সরঞ্জামের ব্যাপক প্রভাব।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, দেশটি মিত্র রাশিয়াকে নিয়ে যৌথ নৌমহড়ার আয়োজন করা হবে সেপ্টেম্বরে। তবে কোথায় হবে তা জানানো হয়নি। অনেক পর্যবেক্ষক ধারণা করছেন, বিতর্কিত অঞ্চলটিতে এটি আয়োজন করা হতে পারে।

 

গ্লোবাল চায়না টাইমসে বলা হয়, অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন- যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ লাগলে চীন হেরে যাবে। কিন্তু পত্রিকাটিতে বলা হচ্ছে, তাদের এই ধারণা পুরোপুরি মিথ্যা। এর কারণ হিসেবে পত্রিকাটিতে বলা হয়, চীন তার সৈন্য সংখ্যা ২.৩ মিলিয়নে বৃদ্ধি করতে পারে। পত্রিকাটিতে আরো বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক সংঘাতে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা চীনের নেই। বিতর্কিত এলাকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চূড়ান্ত রকমের উস্কানি না দেওয়া পর্যন্ত সংযত আচরণই করছে চীন।

 

গ্লোবাল চায়না টাইমসের সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ‘চীন কোনো যুদ্ধ চায় না, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তো নয়ই। যদি উস্কানি দিতে থাকে একের পর এক, তাহলেই কেবল চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে যাবে। আমরা যুদ্ধে না যাওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ। কিন্তু তারপরও যদি যুদ্ধে যেতেই হয় তাহলে জানবাজি রেখে যুদ্ধ করবো। এবং শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাবো। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি আমরা সহ্য করতে পারবো।’

 

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র তড়িঘড়ি করে ফিলিপাইনে তার কয়েকটি ঘাঁটির আরো উন্নত করছে। বিতকিত এলাকার কাছে সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা করছে। এর আগে সেখানে তারা বেশ কয়েকবার সামরিক মহড়াও করেছে।

 

যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, দক্ষিণ চীনসাগরে জাহাজ চলাচলের স্বাধীনতা দেখভাল করতে যাচ্ছে তারা। কিন্তু পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দক্ষিণ চীনসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি কোনো না কোনোভাবে তা চীনকে উস্কানি দেওয়া যাবে। এই ঘটনাটিই চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে যুদ্ধের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। শেষমেষ যা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দুয়ার খুলে দিতে পারে।

 

war

 

বিশ্বের একমাত্র পুলিশ স্টেট হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি আক্ষরিক অর্থেই পৃথিবীর সবখানে। জলে, স্থলে এবং আকাশের সবখানে দেশটির ব্যাপক সামরিক উপস্থিতির কথা সবাই জানে। আসলেই বিশ্বের এমন কোনো স্থান নেই, যেখানে নেই যুক্তরাষ্ট্রের কান।

 

এ ছাড়া তেলের গন্ধ নাকে গেলেই মাথা খারাপ হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের। সবল হতে থাকে পেশিশক্তি।

সূত্র: রাইজিংবিডি