বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ: তিক্ততা কতোটা কেটেছে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম এখন ঢাকায়। প্রায় এক দশক পর বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রধান বাংলাদেশ সফরে এলেন।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কে এক ধরনের তিক্ততা তৈরি হয়েছিলো।

 

জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্ব দারিদ্র বিমোচন দিবস উদযাপনে এ বছর বেছে নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশকে।

 

বিশ্বব্যাংকের প্রধান জিম ইয়ং কিম আসছেন এই আয়োজনে অংশ গ্রহণের জন্যে।

 

সংস্থাটির মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হুসেইন বলছেন, দারিদ্র বিমোচনে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের অগ্রগতি তুলে ধরতেই তার আগমন।

 

কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচাইতে বড় প্রকল্পগুলোর একটি পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাংকের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিলো।

 

বিশ্বব্যাংক ২০১২ সালের জুনে এই প্রকল্প থেকে তার ১২০ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা প্রত্যাহার করে নেয়।

 

বিশ্ব ব্যাংকের সাথে বাংলাদেশের সেই তিক্ততা কতটা কেটেছে? এই প্রশ্নের জবাবে মি. হুসেইন বলছেন, “ওটা একেবারেই কেটে গেছে। নিশ্চিন্তে বলতে পারেন যে তার কোন প্রভাব বাংলাদেশে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সহায়তার ওপর পরে নি।”

 

একটা সময় ছিলো যখন বাংলাদেশ সংস্থাটির অর্থ সহায়তার ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল ছিলো।

 

কিন্তু এর মধ্যেই বাংলাদেশের সাথে বিশ্বব্যাংকের মতো সংগঠনের সম্পর্কের ধরনটা অনেকটাই বদলে গেছে বলছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ।

 

তিনি বলছেন, বাংলাদেশ এখন আর বিশ্বব্যাংকের ওপর অতটা নির্ভরশীল নয়। অর্থ সহায়তার জন্য বাংলাদেশের এখন বিকল্প উৎস রয়েছে।_91946145_bangladeshi-travelers-ride-a-boat-in-heavy-rain-near-the-site-where-picture-id453241858

 

তিনি বলছেন, “বিশ্বব্যাংক যেভাবে সহায়তা দেয় অর্থাৎ সহায়তার সাথে নানা শর্ত, সেগুলি যদি খুব বেশি আরোপ করে তাহলে এখন বাংলাদেশের সেটি প্রত্যাখ্যান করার সুযোগ আছে। বাংলাদেশে এখন এশিয়া ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যাংক, চীন বা জাপান এসব দিকে যেতে পারে।”

Image copyright Getty Images
Image caption এই পদ্মা নদীতেই বিশ্বব্যাংকের সহায়তা সেতুন নির্মাণের কথা ছিলো

তার মতে বাংলাদেশ এখন বাণিজ্য ও বৈদেশিক বিনিয়োগে আগ্রহী, অর্থ সহায়তায় নয়।

 

তিনি বলছেন, “বাণিজ্য ও বৈদেশিক বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ এতটাই এগিয়েছে যে দেশটির ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ তিন মাসের আমদানির চেয়েও অনেক বেশি। সুতরাং বাংলাদেশের কোন জরুরী দরকার পরলে বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফের কাছে ধর্না দিতে হয়না বরং বিশ্বব্যাংকেই আলোচনার টেবিলে নরম সুরে কথা বলত হয়।”

 

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের ভাষায়ও মনে হলো বাংলাদেশের দরকষাকষির ক্ষমতা ইদানীং আরো শক্ত হয়েছে।

 

তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন পদ্মা সেতু নিয়ে যা ঘটেছিলো তা বিশ্ব ব্যাংকেরই ভুল।

 

“বিশ্বব্যাংক তার ভুলটি বুঝতে পেরেছি। তারা নিজেদের ভুল বুঝে বাংলাদেশের সাথে নতুন করে সম্পর্ক আরো জোরালো করতে চায়।”

 

তার মতে বিশ্বব্যাংকের প্রধানের বাংলাদেশ সফর সেটাই প্রমাণ করে।

 

এর অর্থ কি বিশ্বব্যাংকের মতো সংগঠনকেই এখন বাংলাদেশের সাথে উল্টো দেন দরবার করতে হবে?

 

জবাবে বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ মি. হুসেইন বলেছেন, “গত বছরের আগের বছর বিশ্বব্যাংকের যে কমিটমেন্ট ছিলো, ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ যেকোনো একটি বছরে, এই অর্থবছরেও আমাদের ডিসবার্সমেন্ট এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। সেটিও বাংলাদেশের ইতিহাসে যেকোনো বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ।”

 

তিনি বলছেন, “বাংলাদেশের অর্থায়নের প্রয়োজন এখনো অনেক বেশি। কৃষি, বিদ্যুৎ, পরিবহন, টেলিকমিউনিকেশন, স্যানিটেশন শুধুমাত্র এই কটি খাতে অবকাঠামোগত যে প্রয়োজন সেটা বছরে সাত থেকে দশ বিলিয়ন ডলার।”

 

আর এইচ টি ইমাম বলছেন, “বিশ্বব্যাংক এখন আর সাহায্য দাতা নয় বরং উন্নয়ন সহযোগী। আর বাংলাদেশের অনেক বিষয়ে উন্নয়নের সহযোগী হিসেবে বিশ্বব্যাংকের এখনো অনেক গুরুত্ব রয়েছে।

 

সবমিলিয়ে জিম ইয়ং কিম এর এই সফর যে কিছু বাড়তি গুরুত্ব বহন করে সেটি মানছেন সবাই।

 

পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে টানাপড়েনের কোন ছিটে ফোটা প্রভাব যদি থেকেও থাকে সেটি তার এই সফরে কেটে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা