যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন: জর্জিয়ার নির্বাচন কর্মকর্তাকে ভোট ‘খুঁজে এনে দিতে’ বলেছিলেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দিতে জর্জিয়ার শীর্ষ নির্বাচন কর্মকর্তাকে পর্যাপ্ত ভোট ‘খুঁজে বের করে দিতে বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্র্যাড রাফেনস্পারগারের সাথে ট্রাম্পের ফাঁস হওয়া ফোনালাপে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে।

ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত ওই রেকর্ডিংয়ে মি. ট্রাম্প রিপাবলিকান ব্র্যাড রাফেনস্পারগারকে বলেন, “আমি কেবল ১১,৭৮০টি ভোট পেতে চাই।

তবে মি. রাফেনস্পারগার উত্তরে বলেছেন যে জর্জিয়ার ফলাফল সঠিক ছিল।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেন জর্জিয়াসহ অন্যান্য দোদুল্যমান রাজ্যে জয়লাভ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজের মধ্যে মি. বাইডেন ৩০৬টি এবং মি. ট্রাম্প ২৩২টি ভোট পান।

তেসরা নভেম্বর ভোটের পরে, মি. ট্রাম্প কোন প্রমাণ ছাড়াই নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ তোলেন। কয়েকটি রাজ্যের ভোট পুনর্গননা এবং আইনি আপিল শেষে যুক্তরাষ্ট্রের মোট ৫০টি রাজ্য নির্বাচনের ফলাফলের অনুমোদন দেয়।

এখন পর্যন্ত মার্কিন আদালত মি. বাইডেনের জয়ের বিরুদ্ধে ৬টি চ্যালেঞ্জ প্রত্যাখ্যান করেছে।

৬ই জানুয়ারি কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে এই নির্বাচনের ফলাফলকে অনুমোদন দেবে বলে কথা রয়েছে। ডেমোক্র্যাট নেতা মি. বাইডেন ২০শে জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে তার প্রেসিডেন্ট পদ গ্রহণ করবেন।

জর্জিয়ায় আরও দুই জন সেনেটরকে নির্বাচিত করতে মঙ্গলবার ওই রাজ্যের ভোটারদের আবার ভোট দেওয়ার কথা রয়েছে।

এই ফলাফল সেনেটে ক্ষমতার ভারসাম্য নির্ধারণ করতে পারে।

যদি দুই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বিজয়ী হন, তবে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটিক সেনেটরের সংখ্যা সমান সমান হবে।

এমন অবস্থায় নির্বাচিত ডেমোক্র্যাটিক ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ভোট দেয়ার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত জানাবেন।

মি. বাইডেনের ডেমোক্র্যাট পার্টি ইতিমধ্যে নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণে আছে।

ট্রাম্পের ফোন কলে কী কথা হয়েছিল?

ওয়াশিংটন পোস্ট যে উদ্ধৃতি প্রকাশ করেছিল, সেখানে জর্জিয়ার সেক্রেটারি অফ স্টেটকে মি. ট্রাম্প নানা কথায় ভুলিয়ে পর্যায়ক্রমে চাপ দিয়েছিলেন বলে শোনা যায়।

এবং তিনি জোর দিয়ে বলেন যে তিনি জর্জিয়ার নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন এবং মি. রাফেনস্পারগারকে ট্রাম্প বলেন “পুনরায় ভোট গণনা করা হয়েছে এই কথাটি বলার মধ্যে তো কোন ভুল নেই।” মিঃ রাফেনস্পারগার তার প্রতিক্রিয়ায় মি. ট্রাম্পকে বলেন: “মি. প্রেসিডেন্ট আপনার কাছে থাকা তথ্যটি ভুল।”

পরে ওই ফোনালাপে মি. ট্রাম্প বলেন যে, এমন গুজব রয়েছে যে রাজ্যের ফুলটন কাউন্টি থেকে ভোটের সরঞ্জাম সরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি ব্যালট ভেঙে ফেলা হয়েছে – মি. রাফেনস্পারগারের আইনজীবী বলেছেন যে এমন কিছুই হয়নি।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তখন সম্ভাব্য আইনি পরিণতির জন্য ওই কর্মকর্তাকে হুমকি দেন।

মি. ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেন, “আপনি জানেন যে তারা কী করেছে এবং আপনি এই বিষয়টি উত্থাপন করছেন না। এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। আপনি এমনটা হতে দিতে পারেন না। এটি আপনার এবং আপনার আইনজীবী রায়ানের জন্য অনেক ঝুঁকির হবে”।

তারপরে তিনি অতিরিক্ত ১১,৭৮০ ভোট খুঁজে দেয়ার আহ্বান জানান – এর ফলে ওই রাজ্যটিতে ট্রাম্পের মোট ভোটের সংখ্যা হবে ২৪,৭৩,৬৩৪টি । যা বাইডেনের প্রাপ্ত ভোটের চাইতে একটি ভোট বেশি।

জর্জিয়া রাজ্যে বাইডেন মোট ২৪,৭৩,৬৩৩টি ভোট পেয়েছিলেন।

ট্রাম্প মি. রাফেনস্পারগারকে বলেন যে এই রাজ্যের ফলাফল পুনরায় যাচাই করা উচিৎ। “আপনি এটি পুনরায় যাচাই করতে পারেন, তবে রাজ্যটিতে এই ফল যাচাইয়ের কাজ এমন লোকদের নিয়ে করাতে হবে যারা উত্তর খুঁজে পেতে চান। এমন লোকদের নেয়া যাবে না, যারা উত্তর খুঁজতে চান না” তিনি বলেন।

জবাবে মি. রাফেনস্পারগার বলেন, “মি. প্রেসিডেন্ট, আপনার কাছে তথ্য জমা দেওয়ার মতো লোক রয়েছে এবং আমাদেরও এমন লোক আছে যারা তথ্য জমা দেয়। এবং তারপরে এটি আদালতের সামনে আসে এবং আদালত একটি সিদ্ধান্ত নেয়” ।

তিনি আরও বলেন “আমাদেরকে আমাদের এই সংখ্যার পক্ষে দাঁড়াতে হবে, কারণ আমরা বিশ্বাস করি যে আমাদের সংখ্যা সঠিক” রোববার মি. ট্রাম্প টুইটে অভিযোগ করেন যে মি. রাফেনস্পারগার ভোট জালিয়াতির বিবরণ দেয়নি। তার কোনও সূত্রই নেই!” প্রেসিডেন্ট টুইটে বলেন।

মি. রাফেনস্পারগার পাল্টা টুইট করে বলেন: ” শ্রদ্ধার সাথে বলছি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আপনি যা বলছেন তা সত্য নয়। সত্য প্রকাশিত হবে।”

হোয়াইট হাউস অডিও ফাঁসের বিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি।

শীর্ষ ডেমোক্র্যাট নেতা অ্যাডাম শিফ বলেছেন: “এই টেপ ফাঁসের মাধ্যমে ট্রাম্পের গণতন্ত্রের প্রতি অবজ্ঞা আরও একবার সামনে এসেছে।”

মধ্যপন্থী রিপাবলিকান অ্যাডাম কিনজিংগার টুইট করে বলেন: “নির্বাচনী ফলের বিরুদ্ধে এমন কথাবার্তা কংগ্রেসের প্রতিটি সদস্যের জন্য অনেক সাংঘাতিক বিষয়। আপনি সেটা করতে পারেন না যদি করতেই হয় তাহলে পরিষ্কার নীতিবোধ থেকে করতে হবে।”

ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় থাকা শেষ সপ্তাহগুলোয়, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন।

তিনি সবশেষ জর্জিয়ার সেক্রেটারি অফ স্টেটকে নানা কথায় ভুলিয়ে, কাকুতি মিনতি করে এমনকি হুমকি দিয়ে জর্জিয়ায় জয় পেতে প্রয়োজনীয় ভোটগুলো খুঁজে দেয়ার কথা বলেছেন।

তবে জর্জিয়ায় ভোট জালিয়াতির কোনও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জর্জিয়া পর পর তিন বার এসব ভোট গণনা করেছে। কিন্তু বড় কোন পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র তার নির্বাচনের ফলাফলকে অনুমোদন দিয়েছে এবং জর্জিয়া উল্টে গেলেও ট্রাম্পকে পুনর্নির্বাচিত করার পক্ষে সেটা যথেষ্ট হবে না।

ট্রাম্পের এই ফোনালাপে একটি বিষয় স্পষ্ট যে তিনি কেবল প্রেসিডেন্ট-পরবর্তী ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য কৌশল চালাচ্ছেন বা চেষ্টা করছেন তার তহবিলের সংগ্রহ বাড়াতে।

তবে ট্রাম্প দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, তিনি জয়ী হয়েছেন এবং এজন্য তিনি যেকোনো প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে রাজী।

নির্বাচনের ফল তার পক্ষে আনার জন্য রাষ্ট্রের কর্মকর্তাদেরকে চাপ দেওয়ার পাশাপাশি, বৈধতা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলছেন।

ট্রাম্পের ফাঁস হওয়া এই ফোনালাপটি আরেকটি ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির সাথে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, “আমি চাই আপনি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করুন,”, যেখানে তিনি রাজনৈতিক সহায়তার জন্য বিদেশী নেতাকে মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে চাপ দিয়েছিলেন।

সেই যোগাযোগের কারণে ট্রাম্প অভিশংসনের মুখে পড়েন। এই ফোনালাপ ফাঁসের কারণে তার পক্ষে রাজনৈতিক সমর্থন আদায় আরও কঠিন হয়ে যাবে।

সূত্র:বিবিসি