মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের প্রাথমিক স্কোয়াডে জায়গা পেলেন না, তবে কি বিদায় ঘণ্টা বেজে গেল?

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের জন্য ওয়ানডে ও টেস্টের প্রাথমিক স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নিবার্চকরা। যেখানে ওয়ানডে ক্রিকেটারদের তালিকায় মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার নাম নেই।

নিবার্চকরা বলেছেন, অধিনায়ক, ম্যানেজমেন্ট, নির্বাচক সবার সমন্বিত সিদ্ধান্ত এটা। তাদের বক্তব্য ২০২৩ সালের “বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখেই এই স্কোয়াড ভাবা হয়েছে”।

যার অর্থ করা যেতে পারে, আগামী বিশ্বকাপেতো মাশরাফীর কোন সুযোগই নেই, এমনকি এর আগে যে আন্তর্জাতিক সিরিজগুলো খেলবে বাংলাদেশ, সেগুলোর মধ্যে যেগুলোর স্কোয়াড ঘোষণা করা হবে ‘বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে’, তার কোনটাটেই ঠাঁই পাবেন না এখন ৩৭ বছর বয়সী সংসদ সদস্য মি. মোর্ত্তজা।

ওয়ানডের প্রাথমিক দলে আছেন, তামিম, সাকিব, শান্ত, মুশফিক, মিথুন, লিটন, রিয়াদ, আফিফ, সৈকত, সৌম্য, ইয়াসির, নাইম শেখ, তাসকিন, আল আমিন, শরিফুল ইসলাম, সাইফউদ্দিন, মুস্তাফিজুর রহমান, মিরাজ, তাইজুল, নাসুম, পারভেজ হোসেন ইমন, মেহেদী হাসান ও রুবেল হোসেন।

টেস্টের প্রাথমিক দলে আছেন, মুমিনুল, তামিম, সাকিব, শান্ত, মুশফিক, মিথুন, লিটন, ইয়াসির, সাইফ হাসান, আবু জায়েদ, তাসকিন, খালেদ, হাসান মাহমুদ, মুস্তাফিজুর রহমান, মিরাজ, তাইজুল, নুরুল হাসান, শাদমান ইসলাম, নাইম হাসান, এবাদত হোসেন।

টেস্ট দলে নেই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।

প্রাথমিক এই স্কোয়াডটি মূলত ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে মূল দল ঘোষণার আগে অনুশীলন করবে একসাথে।

মাশরাফী ওডিআই খেলার ব্যাপারে সবসময়েই বলে এসেছেন যতদিন তিনি দলে সুযোগ পাবেন ততদিন খেলবেন। এমনকি গত বছরের মার্চে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেয়ার পরও অনেকেই ভেবেছিলেন মাশরাফী অবসরে যাবেন।

ভাবা হয়েছিল গত বছর জিম্বাবুয়ের সাথে বাংলাদেশের একটি হোম সিরিজই হতে যাচ্ছে তার শেষ ম্যাচ। এমনকী সিরিজের শেষ ম্যাচে মাঠের মধ্যে তাকে কাঁধে তুলে নিয়ে বেশ ঘটা করে সম্মাননাও জানায় তাঁর সতীর্থরা।

কিন্তু মাশরাফী অবসরের ব্যাপারে কিছুতো বলেনইনি, বরং গত নভেম্বরে শুরু হওয়া ঘরোয়া টুর্নামেন্টেও খেলেছেন তিনি।

মাশরাফী নিয়মিত হবার পর ফিট থাকা অবস্থায় বাদ পড়ার নজির নেই বললেই চলে। ২০১১ বিশ্বকাপে তিনি দলে যে তিনি সুযোগ পাননি, সেবারও তার ফিটনেসের কথাই বলা হয়েছিল।

কিন্তু গত নভেম্বরে ঘরোয়া টুর্নামেন্টে মাশরাফির পারফরম্যান্স তাঁর ফিট থাকারই ইঙ্গিত দেয়।

এই সময়ে চলা বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে তিনি চার ম্যাচ খেলে সাতটি উইকেট নেন। এর মধ্যে এক ইনিংসেই ছিল ৫ উইকেট।

এবারের জাতীয় দল নির্বাচনের আগে মাশরাফী জাতীয় দলে থাকছেন কি থাকছেন না এটা নিয়ে ক্রিকেট অঙ্গনে চলছে তুমুল আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক।

তর্ক বিতর্ক চলার এক পর্যায়ে স্কোয়াড ঘোষণার একদিন আগেই বিবিসি বাংলার সাথে আলাপকালে মাশরাফী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন জাতীয় দলে থাকা বা না থাকা নিয়ে কোনো কথা তিনি বলবেন না।

সোমবার যেদিন মাশরাফী স্কোয়াডে নেই বলে খবর এলো, সেদিন তার সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবার দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে অধিনায়ক মাশরাফী ছিলেন প্রশংসিত। মাঠের বাইরে ক্রিকেটারদের সাথে সম্পর্ক এবং অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা ছিলেন অধিনায়ক মাশরাফী।

গত দুই বছর রাজনীতি এবং খেলা একযোগে চালিয়েছেন তিনি। দুটো সামলানো কতটা কঠিন? কতটা ব্যস্ততার মধ্যে থাকতে হয়?

মাশরাফীর ভাষায়, ‘ব্যস্ততা আছে, থাকবে, এর মধ্যে করোনাভাইরাসের এক বছর গেলো, সবাই প্যানডেমিকের সময় ঘরের ভেতর ছিল, কাজ যখন যেটা ছিল তখন সেটা করেছি, এভাবেই’।

নির্বাচকেরা যা বলছেন

ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবার তুলনামূলক দুর্বল একটি স্কোয়াড করেছে। সেই দলের বিপক্ষে মাশরাফীকে না রাখাটা একটা বার্তা কি না সেটা নিয়ে খোলাসা করেননি নির্বাচকেরা।

কিন্তু তারা এটা বলেছেন, যে বিশ্বকাপ এবং ভবিষ্যৎ ভেবেই মাশরাফীকে রাখা হয়নি।

এটা একরকম বলে দেয়া যে মাশরাফীর জন্য জাতীয় দলের রাস্তা আপাতত বন্ধ।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, সরাসরি না বললেও এমনই ইঙ্গিত এখন পর্যন্ত।

ওদিকে বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফিস বলেন, নির্বাচকরা আসলে চাইছেন মাশরাফীর জায়গা পূরণ করে নিতে।

মাশরাফীর বাদ পড়া বিষয়ে শাহরিয়ার নাফিস যা বলেন তার মোদ্দা কথা হলো, মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা এখন যদি ফিট থাকেন বা সামনে ফিট হন এমন হতে পারে যে দুই বা এক সিরিজের জন্য ডাক পেলেন।

কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি যে চিন্তা করছেন নির্বাচকরা তাতে করে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার দলে ঢোকা কঠিন হয়ে যাবে।

“এখন যে বয়স তাতে করে চার বা পাঁচ বছর খেলা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।”

তবে মি. নাফিস বলেছেন যে, মাশরাফীর যে ফাঁকা জায়গা রেখে যাবেন সেটা পূরণ করা কঠিন হবে।

তিনি মনে করিয়ে দেন, একজন ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার শেষ হয় যখন সে অবসর নেন।

তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা স্পষ্টতই জানিয়েছেন ২০২৩ বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবছেন তারা।

সূত্র:বিবিসি