‘যুক্তরাষ্ট্রে ফয়সালকে পুলিশের গুলি মানবাধিকার লঙ্ঘন’

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি ছাত্র ফয়সাল বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার হয়েছেন। হাতের সামান্য একটি ছুরির জন্য কোনো রকম প্রমাণ ছাড়াই তাকে হত্যা করা হয়েছে। ফয়সালকে হত্যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টত‌ই মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। সোমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি ছাত্র ফয়সাল নিহত হওয়ার প্রতিবাদে রাজধানীর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে সচেতন নাগরিক সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া। মানববন্ধনে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন বয়সী মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এসময় তারা ‘ফয়সাল হত্যার বিচার চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, যুক্তরাষ্ট্র জবাব দে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

আমেরিকান পুলিশ দ্বারা ২০ বছর বয়সি বাংলাদেশি ছাত্র ফয়সালকে গুলি করে হত্যা করা বিষয়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশে যেখানে জাতিসংঘের সদর দপ্তর রয়েছে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে ২০ বছর বয়সী বাংলাদেশি ছাত্র ফয়সালকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ফয়সালের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তার হাতে একটি ছুরি ছিল। হাতে সামান্য একটি ছুরির জন্য তাকে গুলি করে হত্যা করার প্রয়োজন দেখি না। সে অন্য কাউকে হত্যা বা পুলিশকে আক্রমন করতে গিয়েছে এমন কোন প্রমান নাই।’

প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ দিয়ে অজয় দাশগুপ্ত বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকা দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট গত ৫ জানুয়ারি খবর দিয়েছে যে প্রতিবছর অন্তত এক হাজার মানুষ আমেরিকান পুলিশের দ্বারা নিহত হয়। এর মধ্যে ৯৮ শতাংশের‌ই বিচার হয়না।’

দূতাবাসগুলোকে এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানানো উচিত উল্লেখ করে অজয় দাশগুপ্ত বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ও পুরো বিশ্বে আমাদের যতগুলো দুতাবাস রয়েছে সেখানে যেন প্রতিবাদ জানানো হয় এবং এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকলকে যেন শাস্তির আয়তায় আনা হয়। আমাদের দেশে কোন মানবাধিকার লঙ্ঘন হলে উন্নত দেশের দুতাবাসগুলো যেভাবে হাজির হয়, আমাদের দুতাবাসের‌ও দায়িত্ব রয়েছে ওইসব দেশের দূতাবাসে গিয়ে প্রতিবাদ জানানো।’

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া বলেন, ‘ফয়সালকে আত্মসমর্পণ করানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু পুলিশ সেটা করেনি। ফয়সাল বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার হয়েছে। এর আগে আমরা দেখেছি জর্জ ফ্লয়েডকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে।’

প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া বলেন, ‘মানবাধিকার সর্বজনীন। এর কোন সাদা কিংবা কালো রং থাকতে পারে না। মানবাধিকারের আফ্রিকা, ইউরোপ বা বাংলাদেশ হতে পারে না। পৃথিবীর যেখানেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা উঠে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেখানে হস্তক্ষেপ করে। অথচ মার্কিন পুলিশের হাতে একের পর এক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। তার সর্বশেষ শিকার আমাদের ফয়সাল। আমরা অনুরোধ করছি মানবাধিকার নিয়ে ব্যবসায় করবেন না, রাজনীতি করবেন না।’

মানবাধিকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ‘সিলেক্টিভ’ উল্লেখ করে প্রশান্ত বড়ুয়া বলেন, ‘বিশ্বের মানবাধিকার নিয়ে কথা বললেও যুক্তরাষ্ট্র নিজ দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কথা বলে না, দেখেও না দেখার ভান করেন। আমরা বিশ্বাস করি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ‘সিলেক্টিভ’ হতে পারে না। আজকে এই সমাবেশ থেকে আমরা দাবি জানাচ্ছি ফয়সাল হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনা হোক এবং তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।’

সমাবেশে বক্তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো পুলিশ সদস্য কি আজ পর্যন্ত কোনো বিদেশিকে হত্যা করেছে? অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে আপনারা আপনাদের দেশে মানুষের নিরাপত্তা আগে নিশ্চিত করুন।’

এসময় মানববন্ধন থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত তলব এবং ব্যাখা দাবি করে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করার দাবি জানানো হয়।

সূত্র: কালের কণ্ঠ