এন-৯৫ মাস্ক: জালিয়াতি দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ

এন-৯৫ মাস্ক জাতিয়াতির ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেএমআই’র কর্ণধার আবদুর রাজ্জাকসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলামের কাছে এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, তদন্ত নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি প্রভাব বিস্তারও। তাই অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি।

প্রথমে মুগদা জেনারেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিসৎকরা এ নিয়ে আপত্তি তোলেন। এমনকি বিষয়টি তাদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে লিখিতভাবে জানানো হয়। ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর কাছেও নালিশ করা হয়। ওই এক লটেই প্রায় ২০ হাজার এন-৯৫ সরবরাহ করা হয়। দেশে তৈরি করে বিদেশি এন-৯৫ বলে চালিয়ে দেয়ার এই অনিয়মের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে সরকারের তরফ থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সাইদুর রহমানকে প্রধান করে গঠিত পাঁচ সদস্যের এই তদন্ত টিম গঠন করা হয়।

ওই প্রতিবেদন এখন অধিকতর যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে যুগান্তরকে জানান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান খান। তিনি বলেন, আমি জানি কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। যেহেতু আমি ওই কমিটিতে ছিলাম না তাই এর বেশি বলতে পারছি না।

এদিকে তদন্ত কমিটির অপর একটি সূত্র জানায়, তদন্তে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে মূল অভিযুক্ত হিসেবে প্রমাণ করা হয়েছে। তবে তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রীর টেবিলে পৌঁছেছে কিনা তা নিশ্চিত করে বলেননি কেউ। এক কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রী প্রতিবেদনের বিষয়ে কমিটির কাছে জানতে চেয়েছিলেন। কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সচিবের টেবিল হয়ে সেটি তার কাছে যাবে।

তদন্ত কমিটির কাছে যুগান্তরের পক্ষ থেকে বেশ কিছু বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। এর মধ্যে ছিল- এন-৯৫ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে টেন্ডারের মাধ্যমে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছিল কিনা, এই মাস্ক বাংলাদেশে তৈরির অনুমতি আছে কিনা? যদি না থাকে বিশ্বের যে চারটি দেশ এন-৯৫ তৈরি করে সেগুলো এনে সরবরাহ করা হয়েছে কিনা, যদি আনা হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা মানা হয়েছিল কিনা কিংবা তার আদলে দেশে যদি তৈরি করা হয়ে থাকে সেটা কোনো নীতিমালার ভিত্তিতে করা হয়েছে কিনা, এটি সরবরাহের আগে স্যাম্পল দেখা হয়েছিল কিনা?

কমিটির এক কর্মকর্তা বলেন, এসব প্রশ্নের উত্তর আমরা প্রতিবেদনে তুলে ধরেছি। তবে ছোট করে যদি বলি, বিষয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ওপর দিয়ে গড়ালেও ওই প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে এখনও এন-৯৫ সরবরাহ করা হচ্ছে কিনা আপনারা খবর নেন। তবে এ বিষয়ে বেশি আর তেমন কিছু বলতে নারাজ কমিটির সদস্যরা।

একটি সূত্র জানায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিএমআই এখনও বিভিন্ন ধরনের করোনা সামগ্রী সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করছে। ওই প্রতিষ্ঠান ছাড়া আরও দুটি প্রতিষ্ঠানও এন-৯৫-এর পরিবর্তে ‘এডাল্ট ফেস মাস্ক’ নামে এক ধরনের মাস্ক সরবরাহ করছে বলে জানা যায়। চিকিৎসক ও নার্স অনেকটা বাধ্য হয়ে এসব মাস্ক ব্যবহার করছেন। তারাও আছেন ঝুঁকির মধ্যে।

ইতোমধ্যে ৫২৩ চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছেন ২ জন। একইভাবে নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে আরও অন্তত ৫০০ আক্রান্ত হন। তারা চান মানের দিক থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে এন-৯৫ মাস্ক ও পিপিই ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছে তা যেন ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পিপিই নীতিমালা অনুযায়ী, রোগীর নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য এন-৯৫ মাস্ক পরা জরুরি। কিন্তু মার্চের শেষ ভাগে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে যেসব মাস্ক পাঠানো হয়, তার প্যাকেটে ‘এন-৯৫’ লেখা থাকলেও ভেতরে ছিল সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক। ফলে সেগুলো আসল মাস্ক কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন চিকিৎসকরা; বিষয়টি সে সময় সংবাদমাধ্যমেও আসে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইতিপূর্বে এন-৯৫ মাস্ক ক্রয় প্রক্রিয়ায় কোনো জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে কিনা সেটি তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় পৃথক তদন্ত শুরু করে। দুদক পরিচালক কাজী শফিকুল আলমের নেতৃত্বে ইতোমধ্যে ৫ সদস্যের একটি দল তদন্ত শুরু করেছে। পাশাপাশি সংস্থাটির গোয়েন্দা পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী ও তার নেতৃত্বাধীন দল মাঠপর্যায় থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সহযোগিতা করছে।

সূত্র: যুগান্তর