ম্যাচ জমিয়ে দিয়েছিলেন মুশফিক

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

এক হাতে তালি বাজে না। বাংলার এই চিরন্তন প্রবাদের প্রতিফলন কাল যেন খুলনা টাইগার্সের ইনিংসে। মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে না হয় রুদ্রগান, কিন্তু সতীর্থদের বাজনার সংগত থাকতে হবে তো! সেটিরই অনুপস্থিতিতে জয়ের ‘তালি’ আর বাজে না। তাদের ১২ রানে হারিয়ে ঢাকা প্লাটুন প্লে-অফের দৌড়ে যায় এগিয়ে।

৯ খেলায় ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলশীর্ষে রাজশাহী রয়ালস ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের সঙ্গী তাই মাশরাফি-তামিমদের দল। আর এক ম্যাচ কম খেলে ২ পয়েন্ট পিছিয়ে খুলনা।

অথচ সতীর্থদের ব্যর্থতার মিছিলে মুশফিকের ব্যাটে কী গগনবিদারী স্লোগান! ব্যর্থতা কেমন, সেটিই আগে জানুন। ঢাকার চার উইকেটে ১৭২ রান তাড়া করতে নেমে ৪৪ রানে চার উইকেট হারায় খুলনা টাইগার্স। সেখান থেকে মুশফিক ও নাজিবুল্লাহ জাদরানের ৫৬ রানের জুটি। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ওই আফগান ব্যাটসম্যানের। কিন্তু সেটা পৌনে দুই শর মতো রান করে জেতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় একেবারে। ২৯ বলে করেন ৩১ রান। মুশফিকই আসলে টিকিয়ে রাখেন খুলনার আশা। সেটি নাজিবুল্লাহ আউট হওয়ার পরও।

কিন্তু হাসান মাহমুদ নামে ঢাকার তরুণ পেসারের কাছে শেষে হার মানতে হয় অভিজ্ঞ ওই ব্যাটসম্যানকেও।

শেষ চার ওভারে প্রয়োজন ৬১ রান। ঢাকার অধিনায়ক মাশরাফি বোলিংয়ে ফেরান হাসানকে। বিপিএলজুড়ে আলো ছড়াচ্ছেন ২০ বছর বয়সী এই পেসার। কালও নিজেরও প্রথম দুই ওভারে মাত্র ৫ রান দিয়ে দুই শিকার। এর মধ্যে রাইলি রুশোর উইকেটটি তো নিজের ক্যারিয়ারসেরা হিসেবেই রায় দিয়ে যান ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে। দুরন্ত গতির বলটি স্টাম্প বরাবর পড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল; সেটি ব্যাটে চুমু খেয়ে জমা পড়ে কিপারের গ্লাভসে। সেই হাসানকে ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আবার দিতে হয় অগ্নিপরীক্ষা।

জয়ের জন্য খুলনার ২৪ বলে দরকার ৬১ রান। ২০ বলে ৩০ রানে অপরাজিত মুশফিক। হাসানের করা প্রথম বলকে স্কয়ার কাট করে পয়েন্টের ওপর দিয়ে মারেন ছক্কা। পরের বলে কাভার দিয়ে চার। তরুণ পেসারের চাপে পড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু ঠিকই নিজেকে গুছিয়ে নেন হাসান। ওভারের শেষ বলে স্লোয়ারে বোল্ড করেন ভয়ংকর হয়ে ওঠার সামর্থ্য রাখা রবি ফ্রাইলিঙ্ককে। খুলনার আশার আলো জ্বালিয়ে মুশফিক তখনো ছিলেন। ফাহিম আশরাফকে পরের ওভারে দুটো চার মেরে নিজে ফিফটিতে পৌঁছান মাত্র ২৭ বলে। ১২ বলে ৩৬ রানের সামনে নিয়ে আসেন দলকে।

ততক্ষণে ম্যাচ পরিণত মুশফিক বনাম হাসানে। পরের ওভারের প্রথম বলে চার, এরপর ফুলটসে দুই, তৃতীয় বলে ফাইন লেগের ওপর দিয়ে ছক্কা। ৯ বলে ২৪ রান তখন অসম্ভব মনে হচ্ছিল না কিছুতেই। কিন্তু এক বল পরই হাসানের আরেক ফুলটসে বল আকাশে উড়িয়ে সহজ ক্যাচ দেন মুশফিক। মাত্র ৩৩ বলে ৬৪ রানের অসাধারণ ইনিংসের সমান্তরালে নিভে যায় খুলনার আশার প্রদীপ। আট উইকেটে ১৬০ রানের বেশি করতে পারে না। হেরে যায় ১২ রানে।

মুশফিকের মঞ্চে চার ওভারে ৩২ রান দিয়ে চার উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হাসান মাহমুদ।

ঢাকার ওই ১৭০ পেরোনো স্কোরে বড় অবদান শেষ দিকে আসিফ আলীর ঝড়ে। ওপেনিং জুটিতে তামিম ইকবাল-এনামুল হকের ৪৫ রানের জুটি। থিতু হয়েও উইকেট হারিয়ে আসেন তামিম (২৩ বলে ২৫)। মমিনুল হক (৩৬ বলে ৩৮) ও আরিফুল হকের (৩০ বলে ৩৭) চতুর্থ উইকেট জুটিতে রান আসে ৫৬। তবে তা টি-টোয়েন্টি মেজাজে নয় বলে খুলনার খুব অস্বস্তি ছিল না। আসিফ আলী মাত্র ১৩ বলে অপরাজিত ৩৯ রানের টর্নেডো ইনিংসে ঘুরিয়ে দেন সমীকরণ। চার উইকেটে ১৭২ রানের সংগ্রহ পায় ঢাকা প্লাটুন।

মুশফিকের ব্যাটিং-বীরত্ব সত্ত্বেও সেটি যে টপকে যেতে পারেনি খুলনা টাইগার্স, সে জন্য ওই আফসোস না থেকে পারে না। এক হাতে যে তালি বাজে না!

সংক্ষিপ্ত স্কোর : ঢাকা প্লাটুন : ২০ ওভারে ১৭২/৪ (আসিফ ৩৯*, মমিনুল ৩৮, আরিফুল ৩৭*; আমির ২/২৭)। খুলনা টাইগার্স : ২০ ওভারে ১৬০/৮ (মুশফিক ৬৪, নাজিবুল্লাহ ৩১; হাসান ৪/৩২)। ফল : ঢাকা প্লাটুন ১২ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ : হাসান মাহমুদ।