নাসিরের পথ ধরে সৌম্য!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

নাসির হোসেন হওয়ার পথেই কি এগোচ্ছেন সৌম্য সরকার?

সৌম্য এখন যতটা ব্যাটসম্যান, তার চেয়ে বেশি যেন বোলার। এবারের বঙ্গবন্ধু বিপিএলেই দেখুন। ৯ ইনিংস ব্যাটিং করে ফিফটি পেরোনো ইনিংস মোটে একটি। বিস্ময় আকাশ ছোঁবে যখন জানবেন, এটি এই টুর্নামেন্টে তাঁর চার বছর পর ফিফটি! অথচ এবার ২৩.৫ ওভার বোলিং করেই শিকার ১১ উইকেট। ৯ ম্যাচের মধ্যে সাতটিতেই পান উইকেট।

সৌম্যর এই পারফরম্যান্সকে ব্যতিক্রম বলবেন? উপায় নেই। হালফিলে যে জাতীয় দলের হয়েও বোলিংয়ে বেশি উজ্জ্বল! ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে যেমন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নেন তিন উইকেট। অ্যারন ফিঞ্চকে আউট করে দেন প্রথম ব্রেক থ্রু। পরে সেঞ্চুরিয়ানে ডেভিড ওয়ার্নারকে শিকারের পাশাপাশি উসমান খাজাকে করেন সেঞ্চুরিবঞ্চিত। আরো সম্প্রতিকে আসুন। বাংলাদেশের জার্সিতে সর্বশেষ ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে দলের সফলতম বোলারের নাম সৌম্য। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডেতে ৫৬ রানে তিন উইকেট, ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে চার ওভারে ২৯ রান দিয়ে শ্রেয়াস আইয়ার ও ঋষভ পান্টের উইকেট।

বোলার সৌম্য যতটা উজ্জ্বল, ব্যাটসম্যান সৌম্য ততটাই অনুজ্জ্বল। বিশ্বকাপের আট ম্যাচে ফিফটি পান না, শ্রীলঙ্কা সফরের শেষ ম্যাচে কেবল একটি পঞ্চাশ ছাড়ানো ইনিংস, আফগানিস্তানে বিপক্ষে টেস্টে যাচ্ছেতাই, দেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টি ত্রিদেশীয় সিরিজের মাঝপথে বাদ পড়েন, ভারতের বিপক্ষে ফিরেও ফর্ম ফিরে পেতে ব্যর্থ। ঠিক এ জায়গাটাতেই নাসিরের সঙ্গে মিলে যান যেন সৌম্য। বোলিংয়ে ভালো করলেও মূল কাজ যে ব্যাটিং, সেখানে নিজেকে আর ফিরে পাননি নাসির। সে কারণেই গেছেন হারিয়ে।

সৌম্যকে ঘিরে শঙ্কাটা সেখানেই।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাসিরের শুরুটা চোখ-ধাঁধানো। ম্যাচের পর ম্যাচ দলের ত্রাতা, ‘ফিনিশার’ আদুরে নাম পর্যন্ত লেগে যায় গায়ে। ক্যারিয়ারের ওই পর্যায়ে বোলিং করতেন কদাচিৎ। আলাদা করে শুধু ওয়ানডেটা দেখি। ক্যারিয়ার  প্রথম তিন বছরে ২৮ ওয়ানডের মধ্যে মাত্র ১৩ ইনিংসে বোলিং করেন নাসির। বেশির ভাগই দুই-এক ওভার করে। টানা ১৩ ওয়ানডেতে বোলিং করেননি— এমন ঘটনাও আছে। কিন্তু ব্যাটিংয়ে ফর্মের সঙ্গে আড়ি হলে টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে জোর দেওয়া হয় তাঁর অফ স্পিনে। বোলিং সাফল্যে ব্যাটিং অনুপ্রাণিত হবে—এই ছিল লক্ষ্য। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা সেটি বলেছিলেনও। ২০১৪ সালে আবার শুরু নাসিরের টুকটাক বোলিং; ২০১৫ সাল থেকে পুরোপুরি। সর্বশেষ ২৪ ওয়ানডের ২৩টিতে বোলিং করেন; পান ২১ উইকেট। ১৯ ইনিংসেই বোলিং করেন পাঁচ ওভার কিংবা তার চেয়ে বেশি। ৩২.৭১ গড় কিংবা ৪.৬০ ইকোনমি বেশ সমীহ জাগানিয়া। কিন্তু ব্যাটসম্যান নাসিরকে আর ফেরানো যায়নি।

সৌম্যর ক্যারিয়ার গতিও যেন একই পথের অনুসারী। যত দিন ব্যাট হেসেছে, মিডিয়াম পেস বোলিংয়ের প্রয়োজন পড়েনি তেমন। বাংলাদেশের জার্সিতে ২০১৭ পর্যন্ত ৩২ ওয়ানডের মধ্যে হাত ঘোরান মাত্র চার ইনিংসে; ২৬ টি-টোয়েন্টিতে তিন ইনিংসে। কিন্তু রানের স্রোতে পলি জমলে বোলিং হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৮ থেকে ২৩ ওয়ানডের মধ্যে ১০টিতেই বোলিং করেন সৌম্য। তাতে ৯ উইকেট পান ২৭.৫৫ গড়ে। এ সময়ে ২০ টি-টোয়েন্টির ১০ ইনিংসে বোলিং করানো হয়। ছয় উইকেটও পান। ওয়ানডে-টিটোয়েন্টিতে তাঁর ১৫ উইকেটের সবগুলোই এ সময়ে।

এবারের বিপিএলে সৌম্যর বোলিং সত্তাটাই বড় হয়ে উঠেছে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের জন্য। যে কারণে ব্যাটিং অর্ডারে ওপেনিংয়ে আর নামানো হয় না। এটি যে টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তে, সেটি পরশু ম্যাচ শেষে স্বীকার করে নেন। নিজের অধিনায়কত্বে সুপার ওভারে জয়ের রোমাঞ্চ খেলা করছিল চোখে-মুখে। বোলার সৌম্য, অধিনায়ক সৌম্যর পর ব্যাটসম্যান সৌম্যকে কবে দেখা যাবে— এমন প্রশ্নে একটু যেন হাহাকারই তাঁর কণ্ঠে, ‘টুর্নামেন্টের শুরুর দিকের ৩০-৪০ রানের ইনিংসগুলো যদি ফিফটি করতে পারতাম, তাহলে আরো সুন্দর হতো। আর সর্বশেষ দুই ম্যাচে আউট হয়েছি শুরুতেই। সেখানে বড় রান করতে পারলে অবস্থান আরো ভালো থাকত।’ আর কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের পরিচালক এবং জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন সৌম্যকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন মূল কাজটি, ‘ওর বোলিং অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু আমি এটিকে দেখি বোনাস হিসেবে। আমার কাছে সৌম্য মূলত ব্যাটসম্যান। সে জায়গায় ওর আরো অনেক অনেক উন্নতি দেখতে চাই। ভালো বোলিং করার পরও ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হলে আমি খুব হতাশ হব।’

সৌম্য বোলিং করুন ক্ষতি নেই, সাফল্য পেলে তো আরো ভালো—কিন্তু ব্যাটিংয়ে নিজের স্বরূপে ফিরতে না পারলে টিকে থাকাটা কঠিন হবে। ঠিক নাসির হোসেনের মতোই!