মেরুদণ্ডে আঘাত: অবহেলায় বিপর্যয়ের আশঙ্কা!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: গাছ থেকে পড়ে পিঠে ও ঘাড়ে আঘাত পান বরিশালের মোশাররফ হোসেন। বাঁ হাত ও বাঁ পায়ে ব্যথার কারণে দৈনন্দিন কাজ করতেও অসুবিধা হচ্ছে তার। সেই সঙ্গে পুরো গায়ে ব্যথা তো আছেই। স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তির পর সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় আসার পরামর্শ দেন।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিউরো সার্জারি বিভাগে ভর্তি হন মোশাররফ। তার মতো মেরুদণ্ডে আঘাত পাওয়া রোগীরা প্রায় প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছেন এই হাসপাতালে। এখানকার ১২০ বেডের নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডের পুরোটাই ভর্তি থাকে সবসময়।

মেরুদণ্ডে আঘাতের কারণে মোশাররফের মতো অনেকে ভুগছেন শারীরিক জটিলতায়। এ ধরনের রোগীদের জন্য চিকিৎসকরা বলছেন, ‘মেরুদণ্ডের সমস্যায় ভোগা রোগীদের সুরক্ষা করতে হবে। কারণ সমস্যা তৈরি হয়ে গেলে প্রতিকার করা কঠিন।’

নিউরোস্পাইন সোসাইটি অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও বিএসএমএমইউ’র নিউরো সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলছেন, ‘প্রাথমিক স্তরে ধরা পড়লে দ্রুত চিকিৎসা পেলে সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে এটাকে অবহেলা করা একেবারেই উচিত নয়। কারণ বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হলে অস্ত্রোপচারের পরও রোগীর পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক কম। সুতরাং একটুখানি অবহেলা ডেকে আনতে পারে বড় বিপর্যয়।’

আজ ১৬ অক্টোবর বিশ্ব স্পাইন ডে। এবারের প্রতিপাদ্য— মেরুদণ্ড আপনার অমূল্য সম্পদ, মেরুদণ্ডের যত্ন নিন। স্পাইন বা মেরুদণ্ডের জটিলতায় ভুক্তভোগীর সংখ্যা দেশে কত তার কোনও পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও দেশে ১০০০ জন মানুষের মধ্যে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ জন কোমর বা ঘাড়ের ব্যথায় ভুগছেন। এর মধ্যে এক বা দুইজনের সার্জারি প্রয়োজন হয় বলে জানিয়েছেন নিউরোস্পাইন সোসাইটি অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও বিএসএমএমইউ’র নিউরো সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের রোগীরা শুরুর দিকে ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকদের কাছে যান। কিন্তু সাধারণ ওষুধ ও ব্যায়ামে সুস্থ হয়ে না উঠলে সার্জনের শরণাপন্ন হন তারা।’

জানা গেছে— পড়ে গিয়ে আঘাত পাওয়া, ঘাড়ে আঘাত পেয়ে হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া, কোমরে আঘাত পেয়ে দুই পা কিংবা হাত অবশ হয়ে যাওয়া রোগীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মলমূত্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো রোগীর সংখ্যাও কম নয়।

ব্যাকপেইনের জন্য ছুটি নেন না এমন মানুষ খুব কম। এ মন্তব্য করে বিএসএমএমইউ’র ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম সালেক বলেন, “কেবল মেরুদণ্ড নয়, সংশ্লিষ্ট লিগামেন্ট-সংশ্লিষ্ট পেশীর যে কোনও ‘অ্যাবনরমাল সিচুয়েশন’কে ‘স্পাইনাল ডিজিজ বা স্পাইনাল ডিজকমফোর্ট’ নামে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। আমরা জানি, ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ জীবনে কখনও না কখনও স্পাইন বা ব্যাকপেইনে ভুগে থাকেন।”

তবে স্পাইন ডিজিজের ক্ষেত্রে শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ রোগীদের সার্জারি দরকার হয় না বলেও জানান এই অধ্যাপক। কিন্তু এসব রোগীরা দ্রুত চিকিৎসা না নিলে বড় ধরনের জটিলতায় পড়তে হয় বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

কম বয়সী ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে কোনও পরীক্ষা ছাড়াই ব্যাকপেইন জটিল বলে ধরে নেওয়া হয়। এ তথ্য জানিয়ে বিএসএমএমইউ’র ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মশিউর রহমান খসরু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিশুদের জন্য স্কুলে চেয়ার-বেঞ্চসহ যেসব অ্যাকাডেমিক কারিকুলাম রয়েছে সেগুলো স্বাস্থ্যসম্মত নয়। ভারী স্কুলব্যাগ বহনের কারণে তাদের পিঠে ও ঘাড়ে চাপ পড়ছে। এ কারণে তারা ছোট থেকেই একধরনের মেরুদণ্ডের সমস্যার ভেতর দিয়ে বেড়ে উঠছে। আবার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্যও ক্লাসে কোনও চেয়ার থাকে না। তাদেরকে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ক্লাস নিতে হয়। তাই তারাও মেরুদণ্ডের সমস্যায় ভুগছেন। এসব দিকে পরিবর্তন আনতে হবে। নয়তো মেরুদণ্ডের অসুখে ভোগা রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলবে। অবশ্য বিশ্রাম, সঠিক ভঙ্গিতে চলাফেরা, চিকিৎসকের নির্দেশিত ব্যায়াম, সঠিক খাদ্যাভাস ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করার মধ্য দিয়ে মেরুদণ্ডের ব্যথাকে প্রতিরোধ করা যায়। তবে খুব বেশি জটিল না হলে অস্ত্রোপচার দরকার হয় না এসব ক্ষেত্রে।’

 

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন