মেগান ও হ্যারির বিয়ের সবকিছু জানতে চান?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

আর মাত্র পাঁচ দিন। এরপর ছোট পর্দা ও বড় পর্দার তারকা মেগান মার্কেল পাকাপাকিভাবে ব্রিটিশ রাজপরিবারের বধূ হবেন। ১৯ মে প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের বিয়ে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বিশ্বে এই রাজকীয় বিয়ে নিয়ে চলছে অনেক আলোচনা, গবেষণা। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন হ্যারি আর মেগানের বিয়ের বিস্তারিত নিয়ে সম্প্রতি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে তারা রাজকীয় এই বিয়ের ভেন্যু থেকে শুরু করে মেন্যু, কনের পোশাক, সময়সূচি—সব জানিয়ে দিয়েছে।

বিয়ের ভেন্যু
প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের বিয়ে হবে উইন্ডসর ক্যাসেলের সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলে। এটি সেন্ট্রাল লন্ডন থেকে ২০ মাইল দূরে। উইন্ডসর সবচেয়ে পুরোনো ও বড় একটি দুর্গ। প্রাচীনতম এই দুর্গেই খ্রিষ্টীয় রীতিতে বিয়ে হবে মেগান ও হ্যারির। এ ছাড়া উইন্ডসরের আরেকটি বিশেষত্ব আছে। এটি হ্যারির দাদি ও রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের বাসস্থান। সপ্তাহের বেশির ভাগ সময় তিনি এখানেই থাকেন।
সেন্ট জর্জেস চ্যাপেল বা গির্জার ধারণক্ষমতা ৮০০ জন। হ্যারি-মেগানের রাজকীয় বিয়ের ভেন্যু ফুলে ফুলে সাজিয়ে তোলার দায়িত্ব পেয়েছেন লন্ডনের ফুল ব্যবসায়ী ফিলিপ্পা ক্র্যাডোক। থাকছে সাদা গোলাপ, পিওনি ও ফক্সগ্লোভস। ফুলের পাশাপাশি ভেন্যু সাজাতে কয়েক ধরনের সুন্দর পাতাও ব্যবহার করা হবে। আর বিয়ের পর সেই ফুলগুলো সব দান করে দেওয়া হবে স্থানীয় দাতব্য প্রতিষ্ঠানে। বিয়েতে ব্যবহৃত অনেক ফুল আর পাতা সংগ্রহ করা হবে রাজপরিবারের নিজস্ব ক্রাউন এস্টেট আর উইন্ডসর গ্রেট পার্কের বাগান থেকে।

সময়সূচি
প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেল দুপুরে বিয়ের শপথ নেবেন। এক ঘণ্টার মধ্যে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার কথা। উইন্ডসর ক্যাসেলের মাঠ থেকে ১ হাজার ২০০ জন সাধারণ মানুষ এই রাজকীয় বিয়ের সাক্ষী হতে পারবেন। আর লন্ডনের স্থানীয় সময় সকাল নয়টার মধ্যে তাঁদের উপস্থিত হতে হবে।
বিয়ের মূল অতিথিরা সকাল সাড়ে নয়টা থেকে আসতে শুরু করবেন। বেলা ১১টার মধ্যেই আমন্ত্রিত অতিথিদের উপস্থিত হতে হবে। সেন্ট জর্জ চ্যাপেলের দক্ষিণ দিকের দরজা দিয়ে প্রবেশ করবেন তাঁরা। রাজপরিবারের সদস্যরা অনুষ্ঠান স্থলে সবশেষে হাজির হবেন। বেলা সাড়ে ১১টার কিছু আগে থেকে তাঁরা আসতে শুরু করবেন। তাঁদের মধ্যে কেউ গাড়িতে চড়ে, কেউ আবার হেঁটেই সেখানে উপস্থিত হবেন।
মেগানের মা ডোরিয়া রাগল্যান্ড ও বাবা থমাস মার্কেল বিয়েতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন বলে জানা গেছে। বিয়ের ভেন্যুতে মেগানকে নিয়ে আসবেন তাঁর মা। ভেন্যুতে আসার পর কয়েকজন ‘ব্রাইডস মেড’ মেগান মার্কেলের সঙ্গে হেঁটে চ্যাপেলে আসবেন। কিন্তু হবু রাজবধূ কাউকেই ‘মেড অব অনার’ হিসেবে নেবেন না বলে জানিয়েছেন। কারণ, তাঁর ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর সংখ্যা খুব কম। ‘ব্রাইড অব অনার’ হিসেবে একজনকে বাছাই করে অন্যদের মনে কষ্ট দিতে চান না তিনি।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে নবদম্পতি গির্জার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা হ্যারির নিজস্ব দাতব্য প্রতিষ্ঠানের ২০০ প্রতিনিধির সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। এরপর ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে উইন্ডসর ক্যাসেল ত্যাগ করবেন হ্যারি ও মেগান। ২৫ মিনিটে ক্যাসেলের চারদিক ঘুরে তাঁরা আবার আগের জায়গায় ফেরত আসবেন। সেখানে রানির সৌজন্যে আমন্ত্রিত অতিথিদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। একই দিন সন্ধ্যায় উইন্ডসর ক্যাসেলের দক্ষিণে অবস্থিত ফ্রোগমোর হাউসে নবদম্পতির জন্য নৈশভোজের আয়োজন করবেন হ্যারির বাবা প্রিন্স চার্লস। এই ভোজে রাজপরিবারের সদস্য আর খুব কাছের বন্ধুরা মিলে মাত্র ২০০ জন থাকতে পারবেন।

বিয়ের অতিথি
প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের বিয়ের পূর্ণ অতিথি তালিকা এখনো গোপন রাখা হয়েছে। রাজকীয় এই বিয়েতে কারা আসবেন, তার চেয়ে কে কে আসবেন না, সেটিই বরং বেশি ছড়াচ্ছে। কেনসিংটন প্যালেস থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, এই রাজদম্পতি কোনো রাজনৈতিক নেতাকে তাঁদের বিয়েতে নিমন্ত্রণ করবেন না। আর করলেও সেটি ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিত্তিতে, কোনো রাজনৈতিক পদবির কারণে নয়।
রাজপরিবারের একটি সূত্র সিএনএনকে জানায়, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও মিশেল ওবামাকে এই বিয়েতে নিমন্ত্রণ করা হয়নি। এমনকি বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এখন পর্যন্ত কোনো দাওয়াতপত্র পাননি।

বিয়ের কার্ডের নকশা
প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের আমন্ত্রণপত্র নকশা করছে লন্ডনের বিখ্যাত বার্নার্ড অ্যান্ড ওয়েস্টউড কোম্পানি। গত শতকের আশির দশক থেকে এই প্রকাশক প্রতিষ্ঠানটি রাজপরিবারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র তৈরির সঙ্গে যুক্ত।

রাজকীয় বিয়ের নিরাপত্তা
রাজপরিবারের বিয়ের অনুষ্ঠানে বাড়তি নিরাপত্তা থাকবে, এটাই তো স্বাভাবিক। প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের বিয়ের পুরো নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ করবে টেমস ভ্যালি পুলিশ। তাঁদের সহযোগিতা করবে লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ ও ব্রিটিশ ট্রান্সপোর্ট পুলিশ। এখন থেকেই উইন্ডসরের রাস্তায় টহল দিতে শুরু করেছে অস্ত্রধারী ও সাদাপোশাকের বেশ কয়েকজন পুলিশ। পুলিশ ছাড়াও ১৯ মে পর্যন্ত সার্চ ডগ দিয়ে পুরো এলাকা পাহারা দেওয়ানো হচ্ছে।
শোনা যাচ্ছে, বিয়ের দিন গাড়িতে ও ট্রেনে চড়ে যাঁরা উইন্ডসর এলাকায় প্রবেশ করবেন, তাঁদের গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করা হবে। তবে রাজকীয় এই বিয়েতে সবার নিরাপত্তা দিতে কত খরচ হচ্ছে বা কয়জন পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে কাজ করছেন, সেই সংখ্যা জানা যায়নি।

বিয়ের আলোকচিত্রী
উইন্ডসর ক্যাসেলে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয়ে গেলে জনপ্রিয় আলোকচিত্রী অ্যালেক্সি লুবোমির্সকি প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের বিয়ের আনুষ্ঠানিক ছবি তুলবেন। একই আলোকচিত্রী গত বছর ফ্রোগমোর হাউসে এই দুজনের বাগদানের আনুষ্ঠানিক ফটোশুট করেছিলেন।

বিয়েতে কনের পোশাক
১৯ মে মেগান মার্কেলের বিয়ের আসরে না আসা পর্যন্ত তাঁর বিয়ের পোশাক সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য দেওয়া যাচ্ছে না। তবে চারদিকে যে গুঞ্জন ভেসে বেড়াচ্ছে, তার ওপর ধারণা করে বলা যায়, মেগান মার্কেল ‘র‍্যালফ অ্যান্ড রুশো’ ব্র্যান্ডের কোনো পোশাক পরতে পারেন। ধবধবে সাদা গাউনে না সেজে মেগানের অন্য কোনো রঙের গাউন পরার সম্ভাবনাই বেশি।

উপহার
প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের বিয়েতে যাঁরা নিমন্ত্রণ পেয়েছেন, তাঁরা সবাই খুব গণ্যমান্য ব্যক্তি। রাজপরিবারের বিয়েতে তাঁরা খালি হাতে আসেন কী করে? কিন্তু হ্যারি ও মেগান আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, বিয়েতে তাঁরা কোনো উপহার নেবেন না। কেউ যদি তাঁদের উপহার দিতেই চান, তাহলে সেগুলো নির্দিষ্ট কয়েকটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। হ্যারি ও মেগান এ জন্য সাতটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান বাছাই করেছেন। এই সংস্থাগুলো নারীর ক্ষমতায়ন, এইচআইভি, পরিবেশ ও ঘরহীন মানুষদের নিয়ে কাজ করে।

বিয়ের ভোজ
মেগান ও প্রিন্স হ্যারির বিয়ের কেক তৈরি করবেন লন্ডনভিত্তিক বেকারি মালিক ক্লেয়ার পেতাক। বিয়ের আমন্ত্রিত অতিথিদের লেমন এলডার ফ্লাওয়ার কেক বানিয়ে খাওয়াবেন এই জনপ্রিয় শেফ। বাটার ক্রিম ও তাজা ফুল দিয়ে সাজানো সেই কেকে থাকবে বসন্তের ছোঁয়া। বাকি খাবারের নাম এখনো অজানাই রয়েছে। বিয়ের নৈশভোজে আমন্ত্রিত ব্যক্তিরাই কেবল সেসব খাবারের স্বাদ চেখে দেখতে পারবেন।

আনন্দ আয়োজন
জনপ্রিয় ব্যান্ড স্পাইস গার্লস, শিল্পী এলটন জন, এড শিরান, স্যাম স্মিথ প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের বিবাহোত্তর সংবর্ধনায় গান পরিবেশন করতে পারেন। বিয়ের দিন সন্ধ্যায় প্রিন্স চার্লস যে সংবর্ধনার আয়োজন করবেন, সেখানে গানবাজনার ব্যবস্থা রাখা হবে বলে শোনা গেছে। কিন্তু কেনসিংটন প্রাসাদ থেকে এ ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।

মধুচন্দ্রিমা
রাজপরিবারের সদস্য বলে প্রিন্স হ্যারি আর মেগান মার্কেলের বিয়ের অনুষ্ঠান বিশ্বের অনেক দেশ থেকেই সরাসরি দেখা যাবে। বিয়ের অনুষ্ঠান পাবলিক হয়ে গেলেও মধুচন্দ্রিমা যথাসম্ভব গোপনেই সারবেন মেগান-হ্যারি। তবে রাজপ্রাসাদের তথ্য অনুযায়ী, বিয়ের পর শিগগিরই হানিমুনে যাচ্ছেন না এই হবু দম্পতি। কিন্তু মধুচন্দ্রিমা যাপনে বটসওয়ানা যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। বাগদানের আগেও একবার সেখানে গিয়ে ছুটি কাটিয়ে এসেছেন দুজন।