মৃতকে নিয়ে মানুষের মতোই গরিলার শোক পালন!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ঠিক মানুষের মতোই আচরণ তাদের। মৃতদের নিয়ে কেবল শোক পালনই নয়, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াও সম্পন্ন করে গরিলারা। তবে তাদের বিদঘুটে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া বিজ্ঞানীদের শঙ্কিত করে তুলেছে। মৃত গরিলার দেহ স্পর্শ করা এবং চেটে দেয়ার মতো আচরণে ইবোলার মতো মারাত্মক রোগ ছড়াতে পারে।

মৃতদের যত্ন বা সম্মান প্রদর্শন একমাত্র মানুষের মধ্যেই দেখা যায়। কিন্তু একদল বিশেষজ্ঞ একদল গরিলার এমন আচরণ দেখতে পেলেন। দলের তিন সদস্যের মৃত্যুর পর তারা মৃতদেহ ঘিরে শোক পালন করে।

রুয়ান্ডার ভলকানোস ন্যাশনাল পার্কে ধারণকৃত একটি ফুটেজে দেখা গেছে, এক তরুণ বয়সী পাহাড়ি গরিলা তার মায়ের মৃতদেহ স্পর্শ করছে এবং আলতোভাবে মায়ের গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

রুয়ান্ডা এবং ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর গবেষক দলটি ওই গরিলাদের আচরণ ভিডিও করেন। ৩৫ বছর বয়সী নেতৃত্বস্থানীয় পুরুষ গরিলা টিটুস এবং ৩৮ বছর বয়সী নারী গরিলা টাক বাস করতো ভলকানোস ন্যাশনাল পার্কে। এদের মৃতদেহ ঘিরে শোক পালন করে অন্য গরিলারা।

বিজ্ঞানীদের দলটি কঙ্গোর কাহুজি-বিয়েগা ন্যাশনাল পার্কে আরেক দল গরিলার একই ধরনের আচরণ দেখেছেন। একটি মৃত পুরুষ গরিলাকে ঘিরে একই ঘটনা ঘটেছে।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, কোনো গরিলা মারা গেলে নিজ দলের অন্যান্য গরিলারা শোক পালন করে। আর মৃতদেহের প্রতি গরিলাদের আচরণ প্রায় একই ধরনের হয়ে থাকে। এই তিনটি মৃত গরিলার ক্ষেত্রে অন্য গরিলারা মৃতদেহের খুব কাছাকাছি বসেছিল। মৃতদেহকে স্পর্শ করা, খোঁচাখুঁচি করা, হাত বুলিয়ে দেয়া এবং চেটে দেয়ার মতো আচরণ দেখা যায়।

পাহাড়ি গরিলার দলটিতে অনেক বেশি সামাজিক মনে হয়েছে বিজ্ঞানীদের কাছে। এরা বহু সময় মৃতদেহ আগলে বসেছিল। টিটাসের মৃত্যু ছয় মাস আগে তার মা মারা যায়। তখন টিটাস প্রায় দুই দিন ধরে মা-কে আগলে রেখেছিল। এমনকি মৃতদেহ নিয়ে ঘুমিয়েও ছিল সে। টাকের কম বয়সী ছেলে সেগাসিরা মায়ের দেহ চেটে দিচ্ছিল। তাকে খুবই বিমর্ষ মনে হচ্ছিল। অনেক সময় দেখা গেছে, সে মায়ের মুখের দিকে চেয়ে রয়েছে। মাঝে মাঝে হাত দিয়ে মায়ের মুখ আলতো করে তুলে ধরার চেষ্টা করছে।

গরিলাদের এমন আচরণের কয়েক ধরনের ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের আচরণে আগ্রহ, সহানুভূতি এবং শোক উঠে আসতে পারে বলে মনে করেন। গরিলাদের এমস আচরণ নিয়ে গবেষণায় কেবল প্রাণীদের মৃত্যু স্বজাতিদের আচার-আচরণের কথাই উঠে আসে না, প্রাণী সংরক্ষণেও নতুন ধারণার সন্ধান মিলবে।

তবে গরিলাদের এ আচরণ ঝুঁকিপূর্ণ। এমনিতেই মৃতদেহে মারাত্মক জীবাণু থাকতে পারে। অন্যগুলোর মধ্যে রোগ-জীবাণু মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। এমনিতেই ইবোলার আক্রমণে হাজার হাজার গরিলার মৃত্যু ঘটেছে। এ ভাইরাসে গরিলার মৃত্যুর হার ৯৫ শতাংশ।