মুসলিম-বিদ্বেষী বৌদ্ধ ভিক্ষুর বিরুদ্ধে পরোয়ানা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

মিয়ানমারের কট্টর মুসলিম-বিদ্বেষী বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতা অশ্বিন উইরাথুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারী করা হয়েছে।পুলিশকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স বার্তা সংস্থা জানাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার এক মামলায় ইয়াঙ্গনের একটি আদালত তাকে গ্রেপ্তারের আদেশ দেয়। দোষী সাব্যস্ত হলে তার তিন বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গারের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পেয়েছেন উইরাথু।নিয়মিত সোশাল মিডিয়া এবং তার অনুসারীদের উদ্দেশ্যে ভাষণে তিনি মুসলিমদের, বিশেষ করে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিয়ে খোলাখুলি বিদ্বেষ এবং উস্কানিমুলক কথা বলতেন। মুসলিমদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন তিনি।

রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে উস্কানিমুলক পোস্ট দেওয়ার কারণে ফেসবুক গত বছর তাকে নিষিদ্ধ করে।মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গারের পাশাপাশি সম্প্রতি অং সান সূচির সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু করেন উইরাথু। তার বক্তব্য – সুচির ‘দুর্নীতিবাজ’ সরকার সেনাবাহিনীর ক্ষমতা খর্ব করতে চাইছে।

কে এই অশ্বিন উইরাথু?

মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত হিংসাত্মক বক্তব্য দেওয়ার জন্য শুধু মিয়ানমারেই নয়, বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পেয়েছেন এই বৌদ্ধ ভিক্ষু।মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিষয়ে বৌদ্ধদের মনে ভীতি ছড়ানোর জন্য তাকে অভিযুক্ত করা হয়।এমনকি জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি-কে ‘বেশ্যা’ বলে গালমন্দ করেছেন আশ্বিন উইরাথু।১৯৬৮ সালে জন্ম নেয়া উইরাথু ১৪ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে ভিক্ষু হতে গিয়েছিলেন। ১৫ বছর আগেও তেমন কেউ চিনতো না তাকে।

২০০১ সালে তিনি মুসলিম-বিরোধী এবং জাতীয়তাবাদী একটি গ্রুপ গঠন করেন, যার নাম ছিল ৯৬৯ গ্রুপ।

এ সংগঠনটিকে উগ্রপন্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।২০০৩ সালে তাঁকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০১০ সালে অন্যান্য রাজবন্দীর সাথে তাঁকে মুক্তি দেয়া হয়।সরকার নিয়ম শিথিল করার পর তিনি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেন।তিনি ইউটিউব এবং ফেসবুকে তার নানা ধরনের বক্তব্য ছড়াতে থাকেন।

২০১২ সালে রাখাইন রাজ্যে মুসলমান এবং বৌদ্ধদের মধ্যে যখন তীব্র সংঘাত শুরু হয়। সে সময় আশ্বিন উইরাথু তাঁর জ্বালাময়ী বক্তব্য নিয়ে জনসমক্ষে আসেন।তার একটি পরিচিত উক্তি ছিল, “তুমি যাই করো, একজন জাতীয়তাবাদী হিসেবে সেটা করবে।”

বার্মার বিন লাদেন

তাকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তিনি ‘বার্মার বিন লাদেন’ কি না? জবাবে মি: উইরাথু বলেছিলেন, এ বিষয়টি তিনি অস্বীকার করবেন না।২০১৩ সালের ১ জুলাই টাইম ম্যাগাজিন আশ্বিন উইরাথুকে নিয়ে একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করেছিল। প্রচ্ছদের শিরোনাম ছিল, “একজন বৌদ্ধ সন্ত্রাসীর প্রতিমূর্তি”।রোহিঙ্গা মুসলমানদের তৃতীয় কোন দেশে স্থানান্তরিত করার দাবী নিয়ে তিনি সমাবেশও করেছেন। মুসলমানদের ব্যবসা-দোকান বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন।

মুসলমানদের মধ্যে জন্মহার বেশি – এমন বক্তব্য প্রচার করেছেন আশ্বিন উইরাথু। বলেছিলেন, বৌদ্ধ নারীদের জোর করে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে।মুসলিম বিরোধী তার এসব কথায় তার অনুসারীর সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েছে। সেই সাথে বেড়েছে ক্ষমতা।রাজনৈতিকভাবে এতটাই প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন উইরাথু যে মিয়ানমারের অন্য অনেক বৌদ্ধ ভিক্ষু তার বিষয়ে কোন কথা বলতে চান না।অনেকে মনে করেন, উগ্রপন্থী ভিক্ষু অশ্বিন উইরাথু রোহিঙ্গাবিরোধী যে মনোভাব দেখিয়েছেন – সেটি মিয়ানমারের ভেতরে অনেকেরই মনের কথা।

সরকারের ভেতরে অনেকেই কূটনৈতিক কারণে রোহিঙ্গা বিরোধী কথা সেভাবে বলতে পারেন না। ফলে মি: উইরাথু রোহিঙ্গা বিরোধী যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তাঁর পেছনে সরকারের সমর্থন রয়েছে।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রতিক্রিয়া

উইরাথুকে গ্রেপ্তার করা হরে তার অনুসারীদের প্রতিক্রিয়া কি হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।তবে তার একজন ঘনিষ্ঠ সঙ্গী থু সাইট্টাকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স বলছে, “তাকে (উইরাথুকে) গ্রেপ্তার করা হলে আমরা চুপ করে বসে থাকবো না।”