মুসলমান দাবির প্রমাণ হলো একতাকে ধারণ করা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

হে ঈমানদারগণ, তোমরা এমন কথা কেন বলো যা তোমরা করো না? তোমরা যা কর না তোমাদের তা বলা আল্লাহর দৃষ্টিতে খুবই অসন্তোষজনক। আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন যারা তার পথে সারিবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করেন, যেন তারা সীসাঢালা প্রাচীর। (সুরা সফ, আয়াত ২-৪)

এই আয়াত অনুযায়ী মুসলমান দাবির প্রমাণ হলো একতাকে ধারণ করা। কোনো মুসলিম দাবিদার যদি ইসলামের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে, তাহলে আল্লাহর কাছে না দুনিয়াতে না আখেরাতে তার দাবির কোনো মূল্য আছে।

এই মূলনীতিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় বা পয়েন্টকে ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। কোনো বড় কাজই ঐক্য ছাড়া পূর্ণতা পায় না। কিন্তু ঐক্যের জন্যও দিতে হয় অনেক বড় কোরবানি। দিতে হয় ত্যাগের দৃষ্টান্ত। একে বলা হয় ‘আমিত্ব’—এর কোরবানি।

যখন একটা জায়গায় অনেক মানুষ একত্র হবে, তখন নিশ্চিতভাবেই তাদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেবে। একে অপরের দ্বারা কষ্ট পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। বারংবার মানসিক আঘাত আসতে পারে। সবাই চায় বড় হতে। সবার মনের অবচেতন অংশে সুপ্ত আছে একটি কথা : ‘আমার হলেই হয়, অন্যের না হলে না হোক’।

এমতাবস্থায় যখনই কিছু মানুষ একত্র হবে, তাদের মধ্যে মনোমালিন্য ঘটবেই। কখনও নিজের মতের বিপরীত মতকেও সহ্য করা লাগবে। কখনও সমালোচনা মেনে নিতে হবে। কখনও নিজের পরাজয়ে ধৈর্যধারণ করতে হবে। কখনও ব্যক্তিগত অমর্যাদার বোধ গিলে ফেলতে হবে। কখনও নিজের ওপর অন্যকে প্রাধান্য দিতে হবে। কখনও বৃহত্তর স্বার্থে ব্যক্তিগত ভাবনা পরিত্যাগ করতে হবে। কখনও বৈধ ক্রেডিটও ছেড়ে দেওয়ার জন্য মনকে মানানো লাগবে।

মোটকথা হাজারো  অপ্রত্যাশিত, অনভিপ্রেত অভিজ্ঞতা ও বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হবে। এত সব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ঐক্যের ওপর অটল থাকতে পারবে কেবল সেই, যে আমিত্বকে কোরবানি দিয়ে পরিশুদ্ধ মুসলিম হয়েছে। যে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা ত্যাগ করে বৃহত্তর অংশে শরিক হয়ে যায়।

অপরদিকে যে লোক আল্লাহর বড়ত্বের প্রতি ঈমান আনা সত্ত্বেও নিজের বড়ত্ব ত্যাগ করতে পারেনি, সে কখনোই এতসব প্রতিবন্ধকতার মুখে টিকে থাকতে পারবে না।

আল্লাহর ওপর ঈমান আনার মর্মার্থ হলো, ব্যক্তির আপন সত্তার দাবি-দাওয়া ত্যাগ করা। আর  ঐক্যের জন্য এটাই সবচেয়ে বেশি করে প্রয়োজন। ঐক্য প্রতিষ্ঠার বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার সময় স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে যায়, বান্দা নিজের সত্তাকে ভুলে গিয়ে পরিপূর্ণরূপে ইসলামে দীক্ষিত হয়েছে, নাকি ব্যক্তিপূজাতেই লিপ্ত আছে!

যে লোক ব্যক্তিপূজার ভূত ঝেড়ে ফেলতে পারে, ঐক্য প্রতিষ্ঠার পথে তার জন্য আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে না। তাই দেখা যায় ইসলামের স্বার্থে এ ধরনের মানুষ যখন বেশ পরিমাণে একত্র হয়, তারা ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সফল হতে পারে। আখেরাতে তাদের জন্য জান্নাত লিখে দেওয়া হয়, দুনিয়াতেও তারা বিজয়ী হতে পারে। (সুরা সফ, আয়াত ১৩)

পক্ষান্তরে যারা ব্যক্তিপূজায় লিপ্ত, তারা কখনো সম্মিলিত শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে না। এভাবেই তারা প্রমাণ করে, তাদের কথা আর কাজ এক নয়।  নিজেদের সুখের জগতে তারা নিজেদের যত বড় আর মূল্যবানই ভাবুক না কেন, এ ধরনের লোকেরা আল্লাহর দৃষ্টিতে একেবারেই মূল্যহীন।

আমলের সাথে ঈমান আনার যে নির্দেশনা আল্লাহ দিয়েছেন, তা মূলত ঐক্যবদ্ধ আমল। এ ছাড়া অন্য কোনো কর্মপন্থা, তা সে দৃশ্যত যত বড়ই হোক, আল্লাহ তায়ালার কাছে তার কোনো গুরুত্ব নাই।

 

সূত্রঃ যুগান্তর