মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নামে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলজুড়ে প্রতারণা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নামে অভিনব প্রতারায় নেমেছে একটি চক্র। দেশের সব উপজেলায় একটি করে এই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে প্রচার করে ওই মহলটি রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, নওগাঁসহ উরাঞ্চলজুড়েই জাল বিস্তার করার চেষ্টা করছে। আর এই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে ওই মহলটি রাজশাহীর উচ্চশিক্ষিতদের ম্যানেজ করে নিজ এলাকায় জমি সংগ্রহ করার পাশাপাশি শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগেরও চেষ্টা চালাচ্ছে। সেইসঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে নতুন এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি ও সুপারিশের জন্য অফার লেটারের জন্য ঘুরাঘুরি করছে।

এমনকি একই উপজেলা থেকে একাধিক আবেদন নিয়ে স্থানীয় এমপিদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন আবেদনকারীরা।
এ নিয়ে বিরক্ত হয়ে পড়েছেন রাজশাহীর এমপি-মন্ত্রীরাও। বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তাঁর ফেসবুকে জনসচেতনতার জন্য একটি পোস্টও দেন।

এমনকি শাহরিয়ার আলম কালের কণ্ঠকেও ফোন করে এই ধরনের প্রতারকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন বলেন, আমার কাছেও কয়েকজন গত দুই-তিন মাস ধরে ঘুরাঘুরি করছেন ডিও লেটার জন্য। আমার দুই উপজেলায় দুটি মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য একাধিক আবেদন নিয়ে ঘুরছেন অনেকেই। অথচ সরকার এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আমার জানা নাই। কিন্তু তারপরেও কিছু লোকজন এই ধরনের প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য আমার কাছে ঘুরছেন। কেউ কেউ এরই মধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীও নিয়োগ দিয়েছেন বলে শুনেছি। কিন্তু কারা এই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমতি দিল, সেটি ক্ষতিয়ে দেখা দরকার। তা না হলে অনেকেই সর্বশ্রান্ত হয়ে পড়বেন।’

নাটোরের একজন এমপি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের নামে এরি মধ্যে অনেকের কাছে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদন পেতে এখন আমার কাছে ডিওলেটার নিয়ে ঘুরছে অনেকেই। তবে এই ধরনের প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে বলে আমার জানা নাই। তাই আমি কোনো ডিওলেটার দেয়নি।’

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোথাও কোথাও এরই মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলার চারঘাটের নন্দনগাছেিতও এই ধরনের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠা হিসেবে বগুড়ার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান এর নাম একটি ওয়েবসাইটে দেখা গেছে।

সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নানের হাত ধরেই এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠা হয়েছে। বগুড়ার ১২টি উপজেলায় এই শিক্ষ্রাপতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০০৯ সালে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং মুক্তিযোদ্ধা স্কয়ার প্রকল্পটি সরকার হাতে নেয় বলেও ওই ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে বগুড়ায় ১২টি উপজেলায় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আব্দুল মান্নান গড়ে তুলেন বলেও উল্লেখ করা হয়।

প্রতিষ্টানটির চেয়ারম্যান হিসেবে নাম দেওয়া হয়েছে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান মজনুর নাম। তবে বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে যোগযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা দাবিকারক বগুড়ার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমি ওপনে হার্ট সার্জারির রোগী। এই বিষয়ে বেশি কথা বলতে পারব না। আমার ওয়েবসাইটে সব বিস্তারিত আছে। সেখান থেকে তথ্য নিতে পারেন। সরকারের কথাও বলা আছে সেখানে।’

অন্যদিকে রাজশাহী-৫ আসনের এমপি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম কালের কণ্ঠকে জানান, এই ধরনের প্রতিষ্ঠান সরকার থেকে কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এমনকি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক কোন প্রকল্প শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নেই। এই বিষয়টি আমি এই দুইটি মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হয়েছি। কিন্তু তারপরেও এই প্রতিষ্ঠান খোলার নামে নিরীহ মানুষকে কেউ কেউ পুঁজি করছেন। জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে ডিও দাবী করছেন। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

স/আর