মিয়ানমারে এখন কী ঘটছে?

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির নেত্রী ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি এবং তার দলের কয়েকজন নেতাকে আটক করেছে সেনাবাহিনী।  সর্বশেষ নির্বাচনের ফল নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সোমবার ভোরে এ অভ্যুত্থান ঘটায় সামরিক বাহিনী।

ক্ষমতা দখলের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী। রাজধানীসহ দেশটির প্রতিটি শহরের অলিতে-গলিতে কিছুক্ষণ পরপরই টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনীর বিশালবহর।

হেলিকপ্টারে নজরদারি চালাচ্ছে পুরো রাজধানীতে। একই চিত্র রাজধানীর বাইরেও। বাড়িবাড়ি ঢুকে ধরপাকড় শুরু করেছে। চলচ্চিত্র নির্মাতা মিন এইসটিন কো কো গি’কে আটক করা হয়েছে।

সোমবার অভ্যুত্থানের পর মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট সেবা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মঙ্গলবার সকালে সেগুলো অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।

বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াংগুনের সড়কে যে কয়জনকে দেখা গেছে তাদের চোখেমুখে ছিল হতাশার ছাপ। তাদের কেউ কেউ গণতন্ত্রের জন্য তাদের কঠিন লড়াই ভেস্তে যাওয়া নিয়ে আক্ষেপও করেছেন।

ইয়াংগুনে সোমবার বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ইন্টারনেট না থাকায় এটিএম বুথগুলোও অচল হয়ে পড়েছিল। মঙ্গলবার সকাল থেকে ব্যাংকের কার্যক্রম চালু হয়েছে।

দেশটিতে অন্তত ১৬ জন সমাজকর্মী ও ৪২ জন সরকারি কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা করছে বন্দিদের অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থা।

সু চির ডাকে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে না আসে, সেজন্যই এমন ভয়ংকর পরিবেশ সৃষ্টি করছে জান্তারা। আতঙ্কে জনগণ আগের মতোই সামরিক শাসনকে মেনে নেয়-সেই কৌশল বাস্তবায়নে মরিয়া হয়ে উঠেছে সেনাবাহিনী।

দেশটির সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ শহর ইয়াঙ্গুন থেকে বিবিসির সংবাদদাতারা জানান, বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং শহরটির আশেপাশের এলাকাগুলোর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে।

লোকজনকে লাইন ধরে ব্যাংক থেকে নগদ অর্থ তুলতে দেখা গেছে। ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার আশঙ্কায় তারা হাতে নগদ অর্থ জমা করতে চাইছেন। তবে সোমবার বাজারে লোকজন যেভাবে হুড়োহুড়ি করে নিত্যপণ্য কিনছিল মঙ্গলবার সেই ভিড় বেশ খানিকটা কমে এসেছে।

মিয়ানমারের এই অভ্যুত্থানে এখন পর্যন্ত রক্তপাত হয়নি। জনগণ এখনো শান্ত হয়ে আছে। জাপান, থাইল্যান্ড ও নেপালে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হলেও মিয়ানমারে তেমন কিছু দেখা যায়নি।

যদিও সু চি আটক হওয়ার আগে এক বিবৃতিতে জনগণকে রাস্তায় নেমে এ অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়ে গেছেন বলে দাবি তার দল এনএলডি’র।

তবে প্রতিবাদ যে একেবারে শুরু হয়নি তাও নয়। মিয়ানমারের চিকিৎসকদের একটি দল কালোব্যাজ পরে অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছেন।

 

সুত্রঃ যুগান্তর