মিরাজ-সাকিবে প্রথম দিন টাইগারদের

সিল্কসিটিনিউজ ক্রীড়া ডেস্ক:

টেস্ট অভিষেকেই পাঁচ উইকেটের অভিজাত ক্লাবে নাম লেখান মেহেদি হাসান মিরাজ। ১৮ বছর বয়সী এ অফস্পিন অলরাউন্ডারের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৭ উইকেট হারিয়ে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন ইংলিশরা তুলেছে ২৫৮ রান (৯২ ওভার)। অলরাউন্ডারসহ টাইগারদের আট ব্যাটসম্যান থাকায় ব্যাটিং ইনিংসটা বেশ ভালো হওয়ার কথা স্বাগতিকদের।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) সকাল ১০টায় দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামে স্বাগতিক বাংলাদেশ এবং সফরকারী ইংল্যান্ড। আর এই ম্যাচ দিয়ে প্রায় সাড়ে ১৪ মাস পর বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে ফেরে মুশফিক বাহিনী।

টস জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন সফরকারী দলপতি অ্যালিস্টার কুক। ইংলিশদের হয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন দলপিত অ্যালিস্টার কুক এবং অভিষিক্ত বেন ডাকেট।

ইনিংসের দশম ওভারে অভিষিক্ত মেহেদি হাসান মিরাজ টাইগারদের হয়ে প্রথম উইকেট তুলে নেন। ফিরিয়ে দেন আরেক অভিষিক্ত বেন ডাকেটকে। সরাসরি বোল্ড হয়ে ফেরার আগে ডাকেট করেন ৩৫ বলে ১৪ রান। পরের ওভারে আক্রমণে এসেই সাকিব তুলে নেন কুকের উইকেটটি। সাকিবের ঘূর্ণিতে পরাস্ত হয়ে বোল্ড হন ২৬ বলে ৪ রান করা কুক। লেগ স্টাম্পের বাইরের বল সুইপ করতে গিয়ে ইংল্যান্ড অধিনায়কের গ্লাভসে বল লেগে তা স্টাম্পে আঘাত হানে।

ইনিংসের ১২তম ওভারে মিরাজ ফেরার গ্যারি ব্যালান্সকে। মিরাজের ঘূর্ণিতে পরাস্ত হয়ে ব্যালান্স এলবির ফাঁদে পড়েন। আম্পায়ার প্রথমত আউটের সিদ্ধান্ত না দিলেও মুশফিকের নেওয়া রিভিউয়ে আউটের ফাঁদে পড়েন ব্যালান্স (৭ বলে ১ রান)। দলীয় ২১ রানের মাথায় ইংলিশদের তৃতীয় উইকেটের পতন ঘটে।

মধ্যাহ্ন বিরতির আগে ইংল্যান্ড তিন উইকেট হারিয়ে ২৮ ওভারে তোলে ৮১ রান। প্রথম সেশনে টাইগারদের হয়ে দুটি উইকেট নেন অভিষিক্ত মেহেদি এবং একটি উইকেট নেন সাকিব।

মধ্যাহ্ন বিরতির পর প্রথম ওভারে আক্রমণে আসেন সাকিব। এসেই দ্বিতীয় বলে মঈন আলিকে এলবির ফাঁদে ফেলানোর চেষ্টা করেন। আম্পায়ার আউট ঘোষণা করলেও ইংলিশদের রিভিউয়ের সুযোগে বিদায় নিতে হয়নি মঈনকে। তবে, এক বল পরেই আবারো এলবির ফাঁদে পড়েন ইংলিশ অলরাউন্ডার। স্বাগতিকদের আবেদনে আবারো সাড়া দেন আম্পায়ার। ফের রিভিউ নেয় ইংল্যান্ড। আরেকবার হতাশ হতে হয় বাংলাদেশকে।

সাকিবের ওভারটির পরে (৩০তম ওভার) বল হাতে আসেন মেহেদি হাসান মিরাজ। মেহেদির বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন জো রুট (৩৮)।  জো রুটকে স্লিপে দাঁড়ানো সাব্বিরের ক্যাচে পরিণত করেন মেহেদি। ভাঙে রুট-মঈনের ৬২ রানের জুটি। দলীয় ৮৩ রানের মাথায় ইংলিশরা চতুর্থ উইকেট হারায়।

দলীয় ১০৬ রানের মাথায় ইংলিশরা পঞ্চম উইকেট হারায় সাকিবের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে। ইনিংসের ৪১তম ওভারে সাকিবের বল বুঝতেই পারেননি বাংলাদেশ সফরে এসে বিতর্কিত হওয়া বেন স্টোকস। বল তার ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে স্টাম্পে আঘাত হানে। সরাসরি বোল্ড হওয়ার আগে তিনি ৩৪ বলে করেন ১৮ রান।

প্রথম সেশনের মতোই দ্বিতীয় সেশনটি নিজেদের করে রাখে স্বাগতিক বাংলাদেশ। পানি পানের বিরতির আগে ইংল্যান্ড পাঁচ উইকেট হারিয়ে ৪৬ ওভারে তোলে ১২৮ রান। দলীয় ১০৬ রানের মধ্যে পাঁচ উইকেট হারানো ইংল্যান্ডকে টেনে তোলেন মঈন আলী। ক্যারিয়ারের অষ্টম টেস্ট অর্ধশতক তুলে নেন। ষষ্ঠ উইকেটে জনি বেয়ারস্টোকে সঙ্গে নিয়ে দারুণ পার্টনারশিপও গড়েন ২৯ বছর বয়সী এ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। দ্বিতীয় সেশন শেষের আগে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬২ ওভারে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ১৭৩ রান।

অবশেষে ব্যক্তিগত ৬৮ রানে অভিষিক্ত মেহেদি হাসান মিরাজের চতুর্থ শিকারে সাজঘরে ফেরেন মঈন। মেহেদির বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হন তিনি। তার আগে তিনবার আম্পায়ারের আউটের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান মঈন। ‘পথের কাঁটাকে’ ফেরাতে বাংলাদেশের দু’টি রিভিউ আবেদনও বিফলে যায়। সব মিলিয়ে মঈন পাঁচটি জীবন পেয়েছেন বললেও ভুল বলা হবে না!  তার উইকেটের মধ্য দিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে মঈন-বেয়ারস্টোর ৮৮ রানের জুটি ভাঙে।

টেস্ট অভিষেকেই পাঁচ উইকেটের অভিজাত ক্লাবে নাম লেখান মেহেদি হাসান মিরাজ। ৮২তম ওভারে জনি বেয়ারস্টোকে নিজের পঞ্চম শিকারে পরিণত করেন ১৮ বছর বয়সী এ অফস্পিন অলরাউন্ডার। ১২৬ বলে আটটি বাউন্ডারির সাহায্যে ৫২ রান করা বেয়ারস্টোকে বোল্ড করেন মিরাজ। সাজঘরে ফেরার আগে জিম্বাবুয়ের অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের পর দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক হিসেবে এক বছরে এক হাজার রান করার কৃতিত্ব দেখান তিনি। দলীয় ২৩৭ রানের মাথায় ইংলিশরা সপ্তম উইকেট হারায়।

এর আগে চট্টগ্রাম টেস্টে টস করতে নেমেই অ্যালিস্টার কুক হয়ে যান ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলা খেলোয়াড়। ১৩৪ টেস্ট ম্যাচে নেমে অ্যালেক স্টুয়ার্টকে টপকে ইংলিশ এই অধিনায়ক এখন অসাধারণ রেকর্ডটির মালিক।

টাইগারদের হয়ে এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে তিন ক্রিকেটারের সাদা পোশাকে অভিষেক ঘটে। কামরুল ইসলাম রাব্বি, মেহেদি হাসান মিরাজ আর সাব্বির রহমানের মাথায় উঠেছে টেস্ট ক্যাপ। সাব্বিরের মাথায় টেস্ট ক্যাপ তুলে দেন সাকিব আল হাসান, মিরাজকে টেস্ট ক্যাপ তুলে দেন মুশফিকুর রহিম আর কামরুলকে টেস্ট ক্যাপ পরিয়ে দেন সাবেক অধিনায়ক ও ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ। অপরদিকে, ইংলিশদের হয়ে অভিষেক হয় বাঁহাতি ব্যাটসম্যান বেন ডাকেটের।

টাইগারদের হয়ে মিরাজ ৫টি আর সাকিব ২টি উইকেট দখল করেন। ক্রিস ওকস ৩৬ রানে আর আদিল রশিদ ৫ রানে অপরাজিত থেকে দ্বিতীয় দিন ব্যাটিংয়ে নামবেন।

বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, মমিনুল হক, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), সাব্বির রহমান, মেহেদি হাসান, শফিউল ইসলাম, তাইজুল ইসলাম এবং কামরুল ইসলাম রাব্বি।

ইংল্যান্ড একাদশ: অ্যালিস্টার কুক (অধিনায়ক), বেন ডাকেট, জো রুট, গ্যারি ব্যালান্স, বেন স্টোকস, জনি বেয়ারস্টো (উইকেটরক্ষক), মঈন আলী, ক্রিস ওকস, আদিল রশিদ, গ্যারেথ বেটি এবং স্টুয়ার্ট ব্রড।

সূত্র: বাংলানিউজ