মিয়ানমারে সেনা শাসনের দুই বছর, জনগণের নীরব প্রতিবাদ

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

দুই বছর হয়ে গেছে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের। সামরিক শাসন, গনতন্ত্রের অধিকার হরণ ও নির্মমভাবে অত্যাচারিত হওয়ার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি হিসেবেই দিবসটি পালন করছে দেশটির গণতন্ত্রপন্থী কর্মী ও বিক্ষোভকারীরা। জনসাধারণকে নীরব ধর্মঘট পালন করার আহ্বানও জানিয়েছেন তারা। বুধবার ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ রেখে বাড়িতে থেকে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানানো হয় মিয়ানমারের নাগরিকদের প্রতি।

এই বার্ষিকীতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া।

মিয়ানমারের একজন বিশিষ্ট নাগরিক অধিকার কর্মী তায়জার সান এক ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, সামরিক বাহিনী যে কারচুপির নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে জনগণ তা মেনে নেবে না। আর সেটি প্রমাণ করার জন্যই এই ধর্মঘট চলছে। আরেকজন গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারী থিনজার শুনলেই ই জানালেন, সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ অব্যাহত রয়েছে, বিশেষভাবে গ্রামীণ এলাকায়। এদিকে গণতন্ত্রপন্থী কর্মী ও বিক্ষোভকারীদের ডাকে সাড়া দিয়েছে মিয়ানমারের সাধারন নাগরিক। মিয়ানমার থেকে পাওয়া ছবিতে ইয়াঙ্গনের বাণিজ্যিক কেন্দ্রসহ দেশের প্রধান শহরগুলোতে রাস্তাঘাট জনমানবহীন দেখা গেছে।

বিগত সময়ে মিয়ানমারে সেনা শাসনের মধ্যে ১৫ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়েছে, ৪০ হাজার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ৮০ লক্ষ শিশু আর স্কুলে যেতে পারছে না। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, দেড় কোটি লোক চরম খাদ্য সঙ্কটে ভুগছেন। দেশটির বেশিরভাগ অংশে এক নিষ্ঠুর গৃহযুদ্ধ চলছে। রাজনৈতিক বন্দীদের পর্যবেক্ষণ করা সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন ফল পলিটিক্যাল প্রিজনার্স বলছে, ভিন্নমত দমনে সামরিক জান্তার অভিযানে এপর্যন্ত ২,৯০০ মানুষ নিহত হয়েছে।

তবে অভ্যুত্থানের পরপরই প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে এক বৈঠকে প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এখনও বিরোধীদের সাথে কোনরকম আলোচনা রাজি নয়। এর পরিবর্তে সেনা শাসকেরা এমন একটি নির্বাচনের পরিকল্পনা করেছে যা প্রায় নিশ্চিতভাবেই অং সান সুচি কিংবা তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিকে বাদ দেবে। এনএলডি গত নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিল। দলটির অনুগতরা জনগণকে সামরিক শাসকের আয়োজিত যেকোনো ভোট বয়কট করার আহ্বান জানাচ্ছেন। তাদের যুক্তি, এই নির্বাচন হবে অবৈধ এবং অবাস্তব। জাতিসংঘ বলছে, এগুলো হবে ‘ভুয়া নির্বাচন।’

এদিকে পশ্চিমা দেশের সরকারগুলো একযোগে বুধবারের বার্ষিকীকে সেনা শাসক ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে নতুন দফা নিষেধাজ্ঞার দিন হিসেবে ব্যবহার করেছে। অন্যান্য দেশের পাশাপাশি, ব্রিটেন এমন সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যারা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে জ্বালানি সরবরাহ করে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি বলছেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হচ্ছে সেনাবাহিনীর অর্থ, জ্বালানি, অস্ত্র ও সরঞ্জাম পাওয়ার সুযোগ কমিয়ে আনা। বিরোধী কণ্ঠের নৃশংস দমন-পীড়ন, সন্ত্রাসী বিমান হামলা এবং নির্লজ্জ মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য (সামরিক) জান্তাকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।’

অস্ট্রেলিয়া মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে তার প্রথম নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে। ১৬ ব্যক্তিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী করতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। সেই সাথে মিয়ানমারের সামরিক সরকার-নিয়ন্ত্রিত দুটি প্রধান ব্যবসায়িক সংস্থার বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটি। অন্যদিকে, মিয়ানমারের ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিতে সেনা সরকারের নিজস্ব নিয়োগের বিরুদ্ধে আরো নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মিয়ানমারে জনগন সমর্থিত সুষ্ঠ নির্বাচন চায় দেশটি।

এদিকে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির ব্যাখা করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বলছে, মিয়ানমার এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে সে দেশে চলতি বছর একটি নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে তাদের প্রতিশ্রুতি নিয়ে নতুন সন্দেহ তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বুধবার একটি বিবৃতি জারি করবে যাতে জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে।

সূত্র: কালের কণ্ঠ