মার্ডার হলেও ভয় নেই ‘দারা সেক্রেটারী’ সেল্টার দেয়ার লোক আছে: যুবলীগ সম্পাদক সুমন

পুঠিয়া প্রতিনিধি:

এখন মার্ডারের মামলা হলেও ভয় নেই, দারা সেক্রেটারী হয়েছে, সেল্টার দেয়ার লোক আছে। এমপির কাছেও নালিশ করে লাভ নেই, আমি মুঞ্জুরকে কলেজে ঢুকতে দেবোনা। দেবো না, দেবো না, দেবো না। উচ্চ স্বরে এভাবেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন রাজশাহীর পুঠিয়ার উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমনউজ্জামান সুমন।

সুমন আজ সোমবার সকাল ৯ টার দিকে বেলপুকুর আইডিয়াল ডিগ্রি কলেজের সভাপতি মুঞ্জুর রহমানের ওপর হামলার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। মঞ্জুর রহমান কলেজের সভাপতি ছাড়াও উপজেলা আ.লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মুঠোফোনে সুমন ওই কলেজের সভাপতি দাবি করে মুঞ্জুরের বিরুদ্ধে কলেজের কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে বলেন, সে ঘুষ দিয়ে কমিটির মেয়াদ ২ বছর বাড়িয়ে এনেছে। আমরা তাকে কলেজে ঢুকতে দেইনি দেবোও না তাকে যেখানে পাবো সেখানেই পিটিয়ে হাত পা ভেঙ্গে দেবো। তারই অংশ হিসেবে আজ বিজয় মিছিল শেষে তাকে কলেজের ভেতরে প্রায় ১ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন বলেও দাবি করেন এ নেতা।

যুবলীগ নেতা সুমনউজ্জামান সুমন, উপজেলার বেলপুকুর ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান বদির ছেলে। তিনি রাজশাহী জেলা পরিষদের সদস্য আসাদুজ্জামান মাসুদেরও ছোট ভাই। আর আবদুল ওয়াদুদ দারা পুঠিয়া দুর্গাপুরের সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান জেলা আ.লীগের নবাগত সাধারণ সম্পাদক।

কলেজ সভাপতি মঞ্জুর রহমান জানান, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কলেজ থেকে বিজয় মিছিল নিয়ে বেলপুকুর গোল চত্বরে অবস্থিত শহীদ মিনারে ফুল দেন। সেখান থেকে কলেজে ফেরার পথে যুবলীগ নেতা সুমনের নেতৃত্বে ১৫/২০ জন স্বশস্ত্র ক্যাডার তাদের ওপর হামলার চেষ্টা চালায়। দু’পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে গেলেও তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে দু’পক্ষকেই সরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ পাহারায় তারা কলেজে গিয়ে পৌছায়। মিছিলে সভাপতি ছাড়াও কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থী কর্মচারীসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়।

মঞ্জুর রহমান বলেন, তারা একই দলের স্থানীয় রাজনীতির সাথে জড়িত। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি আইডিয়াল ডিগ্রি কলেজের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছি। তার কমিটির মেয়াদ শেষ হলে আবারো ২ বছরের জন্য মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। অথচ যুবলীগ নেতা সুমন নিজেকে কলেজের সভাপতি দাবী করে বিভিন্ন সময় উশৃঙ্খল আচরন করে আসছেন। তারই অংশ হিসেবে বিজয় মিছিল শেষে আজও তারা অস্ত্র হাতে আমাদের ওপর হামলা করার চেষ্টা করে।

তবে পুলিশের কারনে তা করতে পারেনি। ঘুষ দিয়ে কমিটির মেয়াদ বাড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সুমনের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। মিছিলে অংশ নেয়া বেলপুকুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মানিক জানান, কলেজে ফেরার পর তারা দেশীয় অস্ত্র হাতে কলেজের গেটের সামনে অবস্থান নেয়। সেখানে দাড়িয়ে যুবলীগ নেতা সুমন অকথ্য ভাষায় সভাপতি ও শিক্ষকদের গালাগালি করে। এতে দু’পক্ষই ফের মুখোমুখি হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ আবারো তাদের সরিয়ে দেয়। এসময় কলেজের চারপাশে আতঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে। কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থী কর্মচারিরা ভয়ে জানালা দরজা বন্ধ করে দেয়।

কলেজের সভাপতি মঞ্জুর রহমান স্বীকার করে কলেজ অধ্যক্ষ আবদুল হামিদ বলেন, আমি একটু অসুস্থ ছিলাম তাই বিজয় মিছিল শুরু করে কলেজের ভেতরেই বসে ছিলাম। পরে মিছিল শেষে সবাই কলেজে ফিরে এসেছে। একটু পরেই দেখি কলেজের মাঠ পুলিশে ভরে গেছে। বাইরে কিছু হয়েছে কি না জানিনা। কেন পুলিশ এসেছিলো তিনি সেটাও জানেননা দাবি করে বলেন, কলেজে কাউকে অবরুদ্ধ করার ঘটনা ঘটেনি।

তবে হামলা চালানোর চেষ্টা, অস্ত্র হাতে সোডাউন দেয়া ছাড়াও কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি দাবি করে বেলপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন জানান, একই স্থানে স্থানীয় দুটি পক্ষ বিজয় মিছিল করতে চেয়েছিলো যদিও পরে এক পক্ষ বিজয় মিছিল করেনি। তবে কলেজের বিজয় মিছিল শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলেও দাবি তার।

এবিষয়ে পুঠিয়া-দুর্গাপুরের সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান জেলা আ.লীগের নবাগত সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা বলেন, সুমনের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। সে যদি এমন কোন অন্যায় কাজ করার চেষ্টাও করে তবে তার দায় ভার তাকেই নিতে হবে। আর এমন হুমকি বা নাম ভাঙিয়ে অন্যায় করায় তার বিরুদ্ধে যথা্যথ ব্যবস্থাও নেয়া হবে। 

স/অ