মামলার বাদীকে পিটিয়ে ২০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিলেন পরোয়ানাভুক্ত আসামিরা

দুর্গাপুর প্রতিনিধি:
রাজশাহীর দুর্গাপুরে মামলার বাদীকে পিটিয়ে প্রায় আসামিরা ২০ লাখ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার সকালে উপজেলার দেবীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পর আহত অবস্থায় মামলার বাদী আবদুল আওয়াল মোল্লাকে (৩৮) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আবদুল আওয়ালের বাড়ি দেবীপুর গ্রামেই। তিনি পুকুর ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করেন। দুর্গাপুর উপজেলা সদরে তার ‘মেসার্স মা মৎস্য খামার’ নামে একটি মাছের খাবারের দোকানও আছে। আওয়াল গত জুন থেকেই অভিযোগ করে আসছিলেন যে, তার গ্রামের কয়েকজন ব্যক্তি তার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়ে আসছিলেন। চাঁদা না দেয়ার কারণে সম্প্রতি তার ২৫ বিঘার পুকুরে বিষ ঢেলে ৪০০ মণ মাছ নিধন করা হয়। এ নিয়ে দুটি মামলাও দায়ের করেছেন তিনি।

এর মধ্যে গত ১৬ জুন তিনি দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করেছেন। এ মামলায় তিনি পাঁচজনকে আসামি করেন। এরা হলেন, শাওন রহমান (২২), আজিজুর রহমান (৪৫), জালাল উদ্দিন (৪২), দেলোয়ার হোসেন (৩৫) ও সফির বাবু ওরফে দিনু (৩৫)। এদের মধ্যে শাওন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। বাকিদের বিরুদ্ধে ২৩ জুন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। কিন্তু তাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এরই মধ্যে তারা বাদী আওয়ালকে পিটিয়ে টাকা ছিনিয়ে নিলেন।

রামেক হাসপাতালের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার দুপুরে আবদুল আওয়াল বলেন, বৃহস্পতিবার তার দোকানের হালখাতা হয়। তারপর আদায় করা টাকা তিনি বাড়িতে এনে রাখেন। শুক্রবার সকালে মাছের খাবারের কোম্পানীর প্রতিনিধি বকেয়া টাকা আদায়ের জন্য তার দোকানে আসেন। এ জন্য তিনি বাড়ি থেকে ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে দোকানে যাচ্ছিলেন। সঙ্গে তার দোকানের ব্যবস্থাপক মাহবুর রহমানও ছিলেন।

পথে মামলার আসামি সফির বাবুর বাড়ির সামনে গেলেই মোটরসাইকেলের সামনে বাঁশ ফেলে তার গতিরোধ করা হয়। এ সময় তিনি থামলেই তিন আসামি সফির বাবু, আজিজুর রহমান, জালাল উদ্দিন এবং সফিরের মামা শামসুল হক তাকে লাঠিশোটা দিয়ে পেটাতে শুরু করেন। বাঁধা দিতে গেলে তার ব্যবস্থাপক মাহবুর রহমানকে মারধরের হুমকি দিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়। এদিকে এলোপাথাড়ি লাঠিপেটায় আওয়াল মাটিতে পড়ে গেলে তার টাকার ব্যাগ নিয়ে আসামিরা পালিয়ে যান।

আওয়াল বলেন, দুর্গাপুরের ডহর বিলে তিনি পুকুর ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করেন। সে জন্য আসামিরা তার কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়ে আসছিলেন। তাদের কথা, পুকুরে মাছ চাষ করতে হলে চাঁদা দিতে হবে। চাঁদা না দেয়ার কারণে তারা পুকুরে বিষ দিয়েছেন, মাছের খাবার নষ্ট করেছেন এবং আমগাছের আম পেড়ে নিয়ে গেছেন। এ নিয়ে মামলা করেছি। আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। পুলিশ গ্রেপ্তার করলে তারা এভাবে আমাকে পিটিয়ে টাকা ছিনতাইয়ের সুযোগ পেতেন না। চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ্য হলে এ নিয়ে মামলা করবেন বলেও জানান আওয়াল।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আওয়ালের শরীরের হাত, পা, কোমর এবং পিঠে রক্তাক্ত জখম দেখা গেছে। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, আওয়ালের কোমর, হাত ও পায়ের এক্স-রে করানো হয়েছে। সেগুলো দেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আওয়ালের পুরোপুরি সুস্থ হতে কিছুটা সময় লাগবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মোতালেব বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাওয়ার পর আসামিদের গ্রেপ্তার করতে তাদের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে তারা বাদীকে পেটালেন। বাদী সুস্থ হয়ে এলেই তিনি এ নিয়ে মামলা নেবেন। তবে মারধরের সময় টাকা ছিনতাই করা হয়েছে কি না তা জানা নেই বলে দাবি করেন ওসি।

স/অ