মান্দায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি


নিজস্ব প্রতিবেদক  নওগাঁ : নওগাঁয় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনিত হয়েছে। নওগাঁ’র মান্দা ও আত্রাই উপজেলার বন্যা  পরিস্থিতি শতাব্দীর মধ্যে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। নওগাঁ’র সব ক’টি নদীর পানি বৃদ্ধি হয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে বন্যা পরিস্থিতির এই ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। দুই উপজেলায় প্রায় ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

বুধবার জেলার প্রধান নদী আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীর পানি একটি পয়েন্টে কমলেও অন্য সবগুলো পয়েন্টে বৃৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার মান্দা এবং আত্রাই উপজেলার উপদ্রুত ১০টি ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি গ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনিত হয়েছে। নুতন নতুন বাড়িঘর এবং বির্স্তীণ ফসলের সব মাঠ ভয়াবহ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ছোট যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে নওগাঁ শহররক্ষা প্রাচীরের আউটলেট দিয়ে শহরের ভিতরে পানি প্রবেশ করেছে।এতে করে শহরবাসিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

জেলার মান্দা উপজেলার কশব ইউনিয়নের বনকুড়া নামক স্থানে আত্রাই নদীর ডানতীরের মুল বাঁধ নুতন করে ভেঙ্গে কশব, নুরুল্যাবাদ ও বিষ্ণপুর ইউনিয়নের সব বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। বানভাসি মানুষজন বাড়িঘর ছেড়ে অনেকে ইতিমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। তাদের মধ্যে চরম খাদ্য সঙ্কট ও বিশুদ্ধ পানীয়ের ব্যাপক অভাব ও সমস্যা দেখা দিয়েছে।

জ্বালানির অভাবে অনেক পরিবার রান্না পর্যন্ত করতে পারছেন না। ফলে খাবারের চরম অভাব দেখা দিয়েছে। গৃহপালিত পশুদেরও চরম খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার মাঠের সমুদয় আমন ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অধিকাংশ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। অনেক মাটির বাড়িঘর ভেঙ্গে ধ্বসে গেছে। বাড়িঘর কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও কোমর পানির নিচের নিচে। পাকাবাড়ির বাসিন্দারা বাড়ির জিনিসপত্র বিভিন্নভাবে উঁচু করে তার উপর রেখে কোনরকমে বসবাস করছেন। এসব এলাকায় কোথাও কোন উঁচু জায়গা নেই। অধিকাংশ পরিবারের রান্না করার ব্যবস্থা নেই। তাদের গৃহপালিত পশু, হাঁস মুরগী নিয়ে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন।

কেউ কেউ দুরে কোথাও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিলেও অধিকাংশ পরিবারের লোকজন পানির মধ্যে বাড়িতেই রয়ে গেছেন। এসব এলাকার বয়স্ক ব্যক্তিরা বলেছেন বিগত ৫০/৬০ বছরের মধ্যে তাঁরা এমন ভয়াবহ বন্যার রূপ আর দেখেন নি। বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীল আলম বন্যার ভয়াবহতার রূপ বর্ননা দিয়ে সরকারের প্রতি এই এলাকাকে উপদ্রুত বিশেষ এলাকা হিসেবে ঘোষণার দাবী জানিয়েছেন।

এছাড়া আত্রাই উপজেলা এবং রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এর উপর নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় নুতন নুতন এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যার ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।

নওগাঁ পানি উন্নয়নর বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফ উজ্জামান খান জানিয়েছেন আত্রাই ও যমুনা নদীর পানি একটি মাত্র পয়েন্টে কমলেও অন্য সবগুলো পয়েন্টে বৃদ্ধি অব্যহত রয়েছে। আত্রাই নদীর পানি ধামইরহাট উপজেলার শিমুলতলী পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার কমে এখন বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে আত্রাই নদীর মহাদেবপুর পয়েন্টে ৮ সেন্টমিটার বদ্ধ পেয়ে এখন বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, মান্দা উপজেলার জোতবাজার পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে এখন ৮৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং আত্রাই রেলওয়ে ষ্টেশন পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে এখন ৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

অপরদিকে নওগাঁ ছোট যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘন্টায় বুধবার সকাল ৯টায় ৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং নাগর নদীর পানি বগুড়ার তালোরা পয়েন্টে ১৫ সেনিটমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ছোট যুমনা নদীর বাঁধ বদলগাছি ও সদর উপজেলার বেশ কয়েককটি স্থানে ঝুঁকিপূর্ন হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে নওগাঁ ছোট যমুনা নদীতে তৈরী শহর রক্ষা প্রাচীরের আউটলেট দিয়ে শহরে পানি প্রবেশ করেছে। শহরের উকিলপাড়া, পুরাতন কালেক্টরটে ভবন চত্বর, সুপারিপট্টি এবং বিজিবি ক্যাম্পে পানি প্রবেশ করে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

নওগাঁ’র কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা মোঃ শামসুল ওয়াদুদ জানিয়েছেন বন্যায় এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৫শ ৭ হেক্টর জমির ফসল অকাল বন্যার পানিতে সম্পূর্ণভাবে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে রোপা আমন ধান ৫ হাজার ৪শ ১১ হেক্টর এবং ৯৬ হেক্টর বিভিন্ন জাতের শাকসব্জি। তলিয়ে যাওয়া রোপা আমন ধানের মধ্যে মান্দা উপজেলায় ১ হাজার ৫শ ২০ হেক্টর ,আত্রাই উপজেলায় ১ হাজার ৫শ ৩০ হেক্টর,রানীনগর উপজেলায় ৮শ ৭০ হেক্টর এবং সদর উপজেলায় ৪শ ৮০ হেক্টর।

নওগাঁ’র জেলা প্রশাসক মোঃ হারুন-অর-রশীদ বলেছেন ইতিমধ্যেই বন্যা দুর্গত পরিবারগুলোকে সরকারী সহযোগিতার আওতায় পর্যাপ্ত ত্রান সামগ্রী স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের অনুকুলে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেগুলো বিতরণের কার্যক্রম চলছে।

স/আ.মি