মাধ্যমিকের বইয়েও বিভ্রান্তি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

চলতি বছরের মাধ্যমিকের পাঠ্যবইগুলোতে ভুলের পাশাপাশি বিভ্রান্তি আর অস্পষ্টতায় ভরপুর। এ নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই ভুল ও বিভ্রান্তির কারণে সহায়ক বইয়ের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়বে।
চলতি বছরের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির অন্তত ২৫টি বই পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এ জন্য বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের সহায়তা নেওয়া হয়েছে। এতে বেরিয়ে আসে অযত্ন ও অবহেলার অসংখ্য নজির। ভুলের পাশাপাশি পরিবর্তনের বিষয়গুলো নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছেন সব শ্রেণির বাংলা বইয়ের সম্পাদক, সংকলক ও রচয়িতারা। গতকাল বুধবার এক যৌথ বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, তাঁদের অজ্ঞাতে এসব পরিবর্তন হয়েছে।
একটি উদ্দীপকে এক ডজন ভুল
এবছর ষষ্ঠ শ্রেণির চারুপাঠ (বাংলা) বইয়ে প্রথম গদ্য হিসেবে নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সততার পুরস্কার। রাচি ভ্রমণের বদলে এটি যুক্ত করা হয়েছে। গদ্যের শেষে সৃজনশীল প্রশ্নে পাঁচ লাইনের উদ্দীপক ও চারটি প্রশ্ন দেওয়া আছে। দুজন বাংলা শিক্ষক এই ছোট্ট লেখার মধ্যে এক ডজনেরও বেশি ভুল চিহ্নিত করেছেন। তাঁরা বলেন, এত দুর্বল ও এলোমেলো বাক্যে এই প্রচ্ছদটি লেখা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা বাড়ানোর বদলে কমাবে।
একটি বাক্য হচ্ছে, ‘হাজী মকবুল সাহেব তার জাকাতের টাকা দিয়ে আবুলকে একটা রিকশা, কালামকে একটা ভ্যানগাড়ি আর হাফিজকে একটা সেলাই মেশিন কিনে দিল।
আর বলল,…’। এখানে মকবুল সাহেব বলায় ‘তাঁর’, ‘দিলেন’ ও ‘বললেন’ হবে। তা ছাড়া একটি বাক্যে তিনবার ‘একটা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
আরেকটি বাক্য হচ্ছে, ‘কিছুদিন পর হাজী সাহেব তাদের পরীক্ষা করার জন্য এক ভিক্ষুককে পাঠাল তাদের কাছে সাহায্য চাইতে।’ এই বাক্যটি এলোমেলো। একটি বাক্যে দুবার ‘তাদের’ শব্দ, তা-ও চন্দ্রবিন্দু ছাড়া। এক নয় হবে একজন। তারপরও বাক্যটির অর্থ পরিষ্কার নয়। সৃজনশীল প্রশ্নে ‘স্বর্গীয়’ বানান ভুল রয়েছে দুই জায়গায়।

প্রবন্ধ ও কবিতাবিভ্রাট

অষ্টম শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্রে এবার কাজী নজরুল ইসলামের ভাব ও কাজ প্রবন্ধ সংযোজন করা হয়েছে। কিন্তু পাঠের উদ্দেশ্য উল্লেখ করতে গিয়ে বলা হয়েছে, এটি কবিতা। একই বইয়ের ৯২ পৃষ্ঠায় কালিদাস রায়ের ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় লেখা আছে কৃপান, ঠিক পরের পৃষ্ঠায় কৃপাণ। ৯৬ পৃষ্ঠায় আছে বাড়ি-ঘড়, যা হবে বাড়িঘর।

অষ্টম শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্রে এবার পল্লিকবি জসীমউদ্‌দীনের রুপাই কবিতা যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তিনি যে পল্লিকবি, তা কোথাও বলা হয়নি। পঞ্চম শ্রেণির আমার বাংলা বইয়ে তাঁকে পল্লিকবি বলা হলেও জসীমউদ্‌দীনের নামের মাঝখানে স্পেস দেওয়া হয়েছে, যা ভুল।

বিজ্ঞান বইয়ের কিছু ভুল

সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের ২৪ পৃষ্ঠায় বলা আছে, আরোহীত মূল। এটা হবে আরোহী। ২৬ পৃষ্ঠায় ‘কাক্ষিক মুকুল’ ও ‘দেয় না’ শব্দ দুটির মধ্যে স্পেস নেই। আবার ৯১ পৃষ্ঠায় ফারেনহাইট এক শব্দ হলেও মাঝখানে স্পেস দেওয়া হয়েছে। ৫৫ পৃষ্ঠায় মিশ্রণ বানানে ‘ন’ দেওয়া হয়েছে। একই পৃষ্ঠায় দার্শনিক অ্যারিস্টটলের নামের বানান লেখা হয়েছে ‘ষ’ এবং অর্থাৎ শব্দের ভেতর ‘র্থ্যা’ দেওয়া হয়েছে। ৫৭ ও ৫৮ পৃষ্ঠায় গ্রিক ও ইংরেজি শব্দের বানান ভুল। বইয়ের ৫৯ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ‘অ্যালুমিনিয়াম’ এবং ৮১ ও ১১৪ পৃষ্ঠায় আছে ‘এলুমিনিয়াম’। ১৪৮ পৃষ্ঠায় ‘ওজোন’ শব্দ লেখা হয়েছে ‘ওজন’। ৯০ পৃষ্ঠায় ডিগ্রি শব্দ পাঁচবার ব্যবহার করা হয়েছে, প্রতিটি দীর্ঘ ই-কার দিয়ে। একই পৃষ্ঠায় ঊর্ধ্ব শব্দ একবার ‘উ’ দিয়ে, আরেকবার ‘ঊ’ দিয়ে লেখা হয়েছে। ওই পৃষ্ঠায় তাপমাত্রা শব্দ ছাপা হয়েছে তাপমাত্র। বইয়ের ১০১ পৃষ্ঠায় বিদ্যুতের শব্দটি লেখা হয়েছে বিদ্যুৎতের এবং বৈদ্যুতিক শব্দ লেখা হয়েছে বৈদুতিক।

অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের ২৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, উদ্ভিদ মাটির রস থেকে খনিজ লবণ দুভাবে সংগ্রহ করে। নিষ্ক্রিয় শোষণ ও সক্রিয় শোষণ। আর কিছুই নেই।

ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ে বিজ্ঞানী রবার্ট হুকের মাঝখানে স্পেস নেই। ২৩ পৃষ্ঠায় কোষ ঝিল্লী শব্দ কোথাও ল্লী এবং কোথাও শুধু লি দেওয়া হয়েছে। ২৫ পৃষ্ঠায় ক্লোরোপ্লাস্ট শব্দটি ক্লোরোপাস্ট ছাপা হয়েছে দুই জায়গায়। ৭৪ পৃষ্ঠায় আলো কীভাবে চলে, এই বর্ণনার সঙ্গে একটি ছবির ক্যাপশন আছে, অপরটির নেই। ১২৭ পৃষ্ঠায় ছবির ক্যাপশনে বলা আছে, বিভিন্ন ডাইনোসর। এখানে বিভিন্ন জাত বা ধরন বলা দরকার ছিল।

ইংরেজি বই নিয়ে

ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র বইয়ের ১৪ পৃষ্ঠায় ক্রিয়ার বিভিন্ন ধরন উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ড্রাইভ-এর পাস্ট ফর্ম ড্রভ এবং পাস্ট পার্টিসিপল ফর্ম ড্রাইভ উল্লেখ আছে। প্রকৃতপক্ষে পাস্ট পার্টিসিপল ফরম হবে ড্রাইভেন। ইন ঢাকা এমিলস হ্যাভ গট সাম নিউ ফ্রেন্ডস। এটা হবে ইন ঢাকা এমিল হ্যাজ গট…।

একই শ্রেণির ইংরেজি প্রথম পত্র বইয়ের ৬৪ পৃষ্ঠায় একটি বাক্য হচ্ছে, উই ক্যান সেট ইনফরমেশন। এটা হবে, উই ক্যান গেট ইনফরমেশন। ৬৫ পৃষ্ঠায় জুপিটার শব্দে ‘এ’ দেওয়া হলেও তা হবে ‘ই’। বইয়ের ২৩ পৃষ্ঠায় Imran, ৪৩ পৃষ্ঠায় টেবিলটিতে column, ৬৯ পৃষ্ঠায় Request, ৯৪ পৃষ্ঠায় Question এবং exclamation বানানগুলো ভুল। ৬৩ পৃষ্ঠায় mumtaj বানান দুই রকম। দ্বিতীয় পৃষ্ঠার টেবিলটি ২০১৬ সালের পাঠ্যবইতে ঠিক ছিল, ২০১৭ সালে ভুল।

অষ্টম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে ৬ ও ২০ পৃষ্ঠায় favourite বানান দুই রকম। ৮৪ পৃষ্ঠায় phrase বানানটি ভুল। একই পৃষ্ঠায় Finally শব্দটি নতুন বাক্যের প্রথম শব্দ হলেও আগের বাক্যটি full stop দিয়ে শেষ করা হয়নি।

নবম শ্রেণিতে ১৫ পৃষ্ঠায় Youga (Yoga), ১২৬ পৃষ্ঠায় Surja Sen (Surjay Sen), ১৩৪ পৃষ্ঠায় Grammatical problem: to (should be ‘on’), the century (should be ‘century’), ১৫১ পৃষ্ঠায় Grammatical problem: or (should be ‘nor’), ১৮০ পৃষ্ঠায় Live (life), ১৮৭ পৃষ্ঠায় Grammatical problem: schools students (school student)। বইয়ের ২৩, ৩৮, ৪০, ৪৭, ৪৮, ৫৫, ৬১, ৭৯, ১২১, ১৪৭, ১৪৯, ১৫২, ১৫৫, ১৬৭, ১৭২, ১৭৩ ও ১৭৯ পৃষ্ঠায়Punctuation ও capitalization এ ভুল আছে।

গণিতে ভুলভ্রান্তি

সপ্তম শ্রেণির গণিত বইয়ের ৪৯ পৃষ্ঠায় সিরিয়াল ভুল (২৫-এর পর ৬ নম্বর আছে), ৮৭ পৃষ্ঠায় সিরিয়াল ভুল (৭ নম্বরের পর ১০ নম্বর)। ১০১ পৃষ্ঠায় যোগফল নির্ণয় কর (৭-১২), কিন্তু প্রশ্ন শুরু করা হয়েছে ১০ থেকে। বিয়োগ ফল নির্ণয় কর (১৩-১৮)। প্রশ্ন শুরু হয়েছে ১৬ থেকে। সরল কর (১৯-২৪), প্রশ্ন শুরু হয়েছে ২২ থেকে। ১২৬ পৃষ্ঠায় বহুনির্বাচনী প্রশ্নের শুধু অপশন দেওয়া আছে, প্রশ্ন নেই। প্রশ্নের ধারাবাহিকতা ঠিক নেই। বোঝা যায় না।

নবম-দশম শ্রেণির গণিত বইয়ে ২৩ পৃষ্ঠায় ৫ নম্বর উদাহরণে প্রকৃত উপসেটে ভুল আছে। ২৮ পৃষ্ঠায় ১৪ নম্বর উদাহরণে ৯২ আছে, হবে ৮৮। ১২৫ পৃষ্ঠার কোণ চিহ্নগুলো ঠিক নেই। ১৩৪ পৃষ্ঠায় সম্পাদ্য ৫-এর অঙ্কন ভুল হয়েছে। ১৪৫ পৃষ্ঠায় চার নম্বর উপপাদ্যে D বিন্দু দেওয়া হয়নি। ১৬৭ পৃষ্ঠায় এক নম্বর কাজ ও পাঁচ নম্বর অনুশীলনীতেও ভুল আছে।

আরও কিছু ভুল

ষষ্ঠ শ্রেণির কৃষিশিক্ষা বইয়ের ৩৫ পৃষ্ঠায় রুইজাতীয় মাছ চাষের জন্য উত্তম তাপমাত্রা ২৫০-৩০০ সেলসিয়াস লেখা হয়েছে। সঠিক তাপমাত্রা হবে ২৫-৩০ ডিগ্রি সে.।

নবম শ্রেণির ফিন্যান্স অ্যান্ড ও ব্যাংকিং বিষয়ের ৪৯ পৃষ্ঠায় ‘গড় মুনাফার হার পদ্ধতি’-এর ইংরেজি বলা আছে Accounting rate of return method। এটা হবে Average Rate of Return। ৪৯ পৃষ্ঠায় সাধারণ শেয়ারের বর্ণনায় দেনাদার উল্লেখ আছে, হবে পাওনাদার।

নবম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের ৫৩ পৃষ্ঠায় জোয়ার-ভাটার কারণ হিসেবে মহাকর্ষণ শক্তির প্রভাব বলা হয়েছে, শুদ্ধ হবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব।

সব লেখক ও গল্প বিদেশি

অষ্টম শ্রেণির আনন্দপাঠে সাতটি লেখার সব কটি বিদেশি লেখকের। এগুলো হচ্ছে আরব্য উপন্যাস অবলম্বনে কিশোর কাজি, মার্ক টোয়েনের রাজকুমার ও ভিখারির ছেলে, ড্যানিয়েল ডিফোর রবিনসন ক্রুশো, মহাকবি আবুল কাসেম ফেরদৌসীর সোহরাব রোস্তম, উইলিয়াম শেক্‌সপিয়ারের মার্চেন্ট অব ভেনিস, বিদেশি গল্প অবলম্বনে ফখরুজ্জামান চৌধুরীর রিপভ্যান উইংকল এবং লেভ তলস্তয়ের সাড়ে তিন হাত জমি।

প্রশ্ন উঠেছে, একটি বইয়ের সব লেখা কেন বিদেশি লেখক ও বিদেশি ঘটনা অবলম্বনে হবে? এ নিয়ে বিভিন্ন সময় এনসিটিবিতে প্রশ্ন উঠলেও রহস্যজনক কারণে এর সমাধান হয়নি।

বিভ্রান্ত রাজশাহী গভর্নমেন্ট স্কুলের শিক্ষার্থীরা

রাজশাহী গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বাংলা বই পেয়ে বিভ্রান্ত। বাংলা প্রথম পত্র বইয়ের সূচিপত্রে প্রথম গদ্য হিসেবে কাবুলিওয়ালার কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু মূল পাঠ শুরু হয়েছে লখার একুশে দিয়ে। পরের পাতায় আবার শুরু হয়েছে কাবুলিওয়ালার গল্প।

জানতে চাইলে ওই স্কুলের বাংলার শিক্ষক আজমেরি ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী এমন বই পেয়েছে। বাঁধাইয়ের ভুলের কারণে এভাবে ওলটপালট হতে পারে।

পাঠের উদ্দেশ্য নিয়ে কথা

বইয়ে প্রতিটি গদ্য বা পদ্যের শেষে পাঠের উদ্দেশ্য দেওয়া আছে। কিন্তু এগুলোর বেশির ভাগই এত হালকাভাবে লেখা যে, তা উদ্দেশ্য প্রকাশ করে না। ষষ্ঠ শ্রেণির চারুপাঠে জসীমউদ্‌দীনের আসমানি কবিতায় পাঠের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়নি। বলা আছে, অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসার অনুভূতি প্রকাশ করতে পারবে। একই বইয়ে ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ গদ্যে পাঠের উদ্দেশ্য বলা আছে, বাংলাদেশের প্রতিবেশী বা অন্য কোনো দেশের সংস্কৃতির পরিচয় দিতে পারবে। ‘মানুষ জাতি’ কবিতার উদ্দেশ্য বলা আছে, জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সকল মানুষের প্রতি সংবেদনশীলতা ও সমমর্যাদার মনোভাব সৃষ্টি। শিক্ষকেরা বলছেন, এসব উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের কাছে সহজ ও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা যেত।

শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করা হয়

বিভিন্ন শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে সিডি বা অডিও শুনতে বলা আছে। ওই সিডি শুনে শূন্যস্থান পূরণ করতে হবে। কিন্তু এই সিডি বা অডিও শিক্ষার্থী কোথায় পাবে? স্কুলে সিডি পাঠানো, বাজানো বা শোনানোর ব্যবস্থা নেই।

এর ফলে গাইড বইয়ের বিকল্প হিসেবে পরিচিত সহায়ক বইয়ের প্রকাশকেরা লাভবান হচ্ছেন। তাঁরা এই সিডি দিচ্ছেন, অনলাইনে তা রাখছেনও। আগ্রহী শিক্ষার্থীরা বিকল্প উপায়ে এগুলো শুনছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিবছর ভুলত্রুটি হচ্ছে। অথচ দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এবার তিনজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তাঁদের সংশ্লিষ্টতা ও দায়দায়িত্ব কতটা ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আবার দায়ী ব্যক্তিদের আড়াল করার চেষ্টা নিয়েও গুঞ্জন আছে। এ জন্য এনসিটিবির স্বার্থসংশ্লিষ্ট নয়, এমন কাউকে দিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও দায়দায়িত্ব নিরূপণ করার দাবি উঠেছে।

এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ভুলগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে হয়। কোথায়, কীভাবে ত্রুটি হয়েছে তা দেখতেএকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি বলেছে, আরেকটু সময় লাগবে।

এনসিটিবির সূত্র জানায়, এখন থেকে পাঠ্যবইয়ের দায়িত্বে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের যাঁর যা কাজ বা দায়িত্ব, তা স্বাক্ষরসহ গ্রহণ ও সংরক্ষণ করা হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, আগামী বছরের পাঠ্যবইগুলো ব্যাপকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এ ছাড়া সবার পরামর্শ বা উপদেশ নিয়ে পাঠ্যবইয়ে অধিকতর গ্রহণযোগ্যতা আনার চেষ্টা হবে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন, চেষ্টা করলে ভুলত্রুটি সংশোধন করা সম্ভব। কিন্তু পাঠ্যবইয়ে আদর্শিক বিচ্যুতি এবং মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনার জায়গায় পরিবর্তন হওয়ার বিষয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের অবস্থান পরিষ্কার করা উচিত। কে করেছে, কেন করেছে—এসব প্রশ্নের জবাব না থাকলে বহু প্রশ্ন সৃষ্টি হতে থাকবে। (শেষ)

সংশোধনী

গতকাল ভুল করে আদর্শলিপির লেখকের নাম ছাপা হয়েছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। এটি হবে সীতানাথ বসাক। এ ছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে ‘ধরণী’ বানানটি ভুল নয়।

সূত্র : প্রথম আলো