মাছ চাষে সাবলম্বী ওরা ১৮ জন

মইদুল ইসলাম মধু:
মাছ চাষ করে সাবলম্বী হয়েছেন ওরা ১৮ জন। দারিদ্রতাকে পেছনে ফেলে তারা সবাই আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত। ভালো মাছ চাষীর পুরস্কার সরুপ পেয়েছেন উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্বের ক্রেস্ট। তারা শুধু নিজেরাই সাবলম্বী হননি এলাকার পিছিয়ে পড়া মানুষদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে এগিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। বিভিন্ন সামাজিক কাজেও অংশগ্রহন করে ক্লাবটির সদস্যরা।

বলছি রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের উদনপুর গ্রামের ১৮ জন সল্পশিক্ষিত বেকারদের নিয়ে গঠিত নয়ন ক্লাব নামের একটি সামাজিক সংগঠনের কথা। ২০১১ সালে গ্রামের ১৮ জন সল্পশিক্ষিত বেকার দরিদ্রদের নিয়ে গঠিত হয় উদনপুর নয়ন ক্লাব নামের সংগঠনটি। শুরুতে সাপ্তাহিক ৫ টাকা চাঁদার তোলা হত প্রত্যেকের কাছে। বছর ঘুরতেই জমানো চাঁদার টাকায় ছোট্ট পুকুর লিজ নিয়ে শুরু করে মাছ চাষ। বছর ঘুরতেই বাড়তে থাকে মুলধন চার বছর পর ২০১৫ সালে ৪ লাখ টাকায় ১০ বছরের জন্য ২০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে পুকুর খনন করে ক্লাবটি। সেই থেকেই পেছনে ফিরে তাকানো লাগেনি তাদের।


উন্নত পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রশিক্ষণ নিতে এসে যোগাযোগ হয় মৎস্য অফিসে। মাছ চাষের কর্মকান্ড শুনে পুকুর পরিদর্শনে যায় উপজেলা মৎস্য অফিস। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের ১৬ সালের ১লা মার্চ ক্লাবটিকে নিয়ে আসা হয় সরকারের ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ প্রযুক্তিসেবা প্রকল্পের (সিবিজি) ২য় পর্যায়ে। ৪ হেক্টর জমির পুকুরে মাছ চাষের জন্যে প্রকল্পটি থেকে ২ লক্ষ টাকার মাছের পোনাসহ মাছ চাষের বিভিন্ন উপকরণ দেয়া হয়। সরকারের সিবিজি প্রকল্পের আর্থিক সহযোগীতা ও উপজেলা মৎস্য অফিসের পরামর্শে এপর্যন্ত প্রায় কোটি টাকার ওপরে মাছ বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছে ক্লাবটি। মাছ শিকারের উপকরন থেকে শুরু করে সবকিছুই করেন নিজেরাই। লেনদেনেও আছে সচ্ছতা যাবতীয় হিসাব নিকাশ করেন ব্যাংকের মাধ্যমে।

উদনপুর নয়ন ক্লাবের সভাপতি মোজাফফর হোসেন জানান, এলাকার হতদড়িদ্র ১৮ জন মিলে মাত্র ৫ টাকা হারে চাঁদা তুলে শুরু করা হয় ক্লাবটির কার্যক্রম। বর্তমানে ক্লাবটির প্রতিটি সদস্যই সাবলম্বী তাদের আর অন্যের জমিতে কাজ করতে হয় না চালাতে হয়না ভ্যান রিক্সা। তিনি জানান, সফল মৎস্য চাষী হিসেবে গত বছর উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ও চলতি বছরে জেলা পর্যায়েও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে ক্লাবটি।

বিভিন্ন সামাজিক কাজেও অংশ গ্রহন করে নয়ন ক্লাব চলতি মাসের ১৮ তারিখ ক্লাবটির অর্থায়নে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মিড-ডে মিল্ক কার্যক্রম চালু করা হয় এছাড়াও স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন ক্লাবটির সদস্যরা। এলাকার পিছিয়ে পড়া মানুষদের বিভিন্ন পরামর্শ ও নিজেদের অর্থায়নে গরু কিনে বর্গা দেয় ক্লাবটি। এলাকার দরিদ্র মানুষদের চিকিৎসা খরচসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় ক্লাবটির পক্ষ থেকে।


মোজাফ্ফর হোসেন বলেন,রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় আমাদের পুকুরের জিবিত মাছের ব্যপক চাহিদা রয়েছে। তাদের মাছ চাষের কার্যক্রম দেখে এলাকার অনেকেই মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে বলেও জানান তিনি। বর্তমানে ক্লাবটির পুকুরে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার মাছ মজুদ আছে।

এব্যপারে উপজেরা মৎস্য কর্মকর্তা সাহেদ আলী সিল্কসিটি নিউজের এ প্রতিবেদককে বলেন, উদনপুর নয়ন ক্লাব একটি আদর্শ ক্লাব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে তাদের মৎস্য চাষের ওপর প্রবল আগ্রহ দেখে সরকারের সিবিজি প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়। তারা উপজেরার শ্রেষ্ঠ মৎস চাষীর পুরুস্কার গ্রহন করে জেলা পর্যায়েও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। উদনপুর নয়নক্লাবের ১৮ জন সদস্য হলেও প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী ১৭ জনকে প্রকল্পের আওতায় নেয়া হয়েছে এবং উপজেলার তিনটি এলাকা থেকে আরো তিন জনকে তাদের সাথে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে তবে তারা ১৮ জনই ল্যভাংশের ভাগ পায়।

তিনি জানান, এই ২০ জনকে মাছ চাষের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষন দেয়াও হয়েছে।

এ ব্যপারে রাজশাহী জেলা মৎস্য বিজ উৎপাদন খামার কার্যালয়ের খামার ব্যবস্থাপক আবদুল খালেক প্রতিবেদককে বলেন, উদনপুর নয়ন ক্লাবের প্রতিটি সদস্য দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা। তারা তাদের প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও প্ররিশ্রমের ফলে সাবলম্বী হয়েছে। তাদের দেখে এলাকার বেকার যুবক থেকে শুরু করে সবাই মাছ চাষে উদ্বোদ্ধ হতে পারে। উদনপুর নয়নক্লাব একদিন সারা দেশের মধ্যে আদর্শ ক্লাব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

স/শ