মাইলেজ আইবাস সফটওয়্যারে ইনপুট হচ্ছে না: বিপাকে রেলওয়ের ৩ হাজার রানিং স্টাফ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রেলওয়ের সংস্থাপন কোডের বিধানের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রাফিক রানিং স্টাফ এবং লোকোমোটিভ রানিং স্টাফদের ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই থেকে মূল বেতনের ভিত্তিতে রানিং অ্যালাউন্স প্রদানের প্রস্তাব হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালের ২২ জানুয়ারি তত্কালীন অর্থমন্ত্রী এ প্রস্তাবে সই করেন। পরবর্তী সময়ে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রানিং স্টাফদের বিশেষ এ ভাতা প্রদানের প্রস্তাব ১৯৯৮ সালের ২৮ জানুয়ারি অনুমোদন করেন। কিন্তু সম্প্রতি ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা প্রদান প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্তিতে বিশেষ ভাতা সীমিত হয়ে যাওয়ার ঘোষণা মানছেন না রানিং স্টাফরা।

এছাড়া, দেড়শ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ রেলওয়ের বেতন-ভাতা প্রদান ছিল স্বতন্ত্র। সম্প্রতি সরকারি সংস্থাটির বেতন-ভাতা আইবাস প্লাস সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু বিশেষায়িত সংস্থাটির বিভিন্ন ভাতা ভিন্নতর হওয়ায় জটিলতার মুখে পড়েছে রেলওয়ে। আইবাসে পরিবহন বিভাগের (রানিং স্টাফ) ‘মাইলেজ’ নামক সুবিধা কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত কাজ করে পাওনা এ সুবিধাবঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় আন্দোলন কর্মসূচির দিকে যাচ্ছেন রেলওয়ে কর্মীরা।

প্রসঙ্গত,রেলওয়ের পরিবহন বিভাগের রানিং স্টাফ বলা হয় ট্রেনচালক, গার্ড ও টিকিট টেকারদের (টিটি)। অর্থাৎ ট্রেন চালনায় যুক্ত কর্মীদের রানিং স্টাফ মর্যাদা দেয়া হয়। নির্ধারিত ডিউটির পাশাপাশি কর্মরত অবস্থায় যত দূরত্ব পর্যন্ত কাজ করেছেন সেটিকে মাইলেজ হিসেবে বাড়তি ভাতা পাবেন। একজন রানিং কর্মচারী রেলওয়ে স্টাবলিশমেন্ট কোড ভলিউম-১-এর চ্যাপ্টার-৫ এবং লোকোমোটিভ অ্যান্ড রানিং শেড ম্যানুয়াল জিআই চ্যাপ্টার-১২ অনুযায়ী ১০০ মাইল বা প্রতি ৮ ঘণ্টা ট্রেন পরিচালনার জন্য একদিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ রানিং ভাতা বা মাইলেজ প্রাপ্য হবেন। রোববার বা সাপ্তাহিক ও সরকারি যেকোনো বন্ধের দিনে ডিউটি করলে হলিডে মাইলেজ প্রাপ্তির বিধানও রয়েছে।

কিন্তু লোকবল স্বল্পতাসহ ট্রেন চলাচল নিরবচ্ছিন্ন ও স্বাভাবিক রাখতে রানিং স্টাফদের দৈনিক নির্ধারিত ১২ কর্মঘণ্টার অতিরিক্ত ডিউটিও করতে হচ্ছে। এ হিসাবে একজন রানিং কর্মচারী মাসে প্রায় ৮-১০ হাজার মাইল পর্যন্ত ট্রেন চালনা করেন। কিন্তু বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয় ঘোষিত আইবাস প্লাস প্লাস সিস্টেমে রানিং কর্মচারীদের মাইলেজ তথ্য ইনপুটের ক্ষেত্রে তিন হাজার মাইলের বেশি দেয়া যাচ্ছে না। ফলে চাহিদার অর্ধেক জনবল দিয়ে চলাচল করা ট্রেনের রানিং স্টাফরা কাজ করেও ব্রিটিশ আমল থেকে চালু থাকা সুবিধাবঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় পড়েছেন।

সম্প্রতি এ বিষয়ে রেলওয়ের রানিং কর্মচারীরা রেলের দপ্তরে চিঠি দিয়েও সমস্যা সমাধান করতে পারেননি। কয়েক সপ্তাহ ধরে তারা ধারাবাহিক আন্দোলন করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে দাবি মেনে নেয়া না হলে পর্যায়ক্রমে আরো কঠোর আন্দোলন-কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে রেলের রানিং কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। লোকবলের তুলনায় ট্রেনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় অধিকাংশ চালক, গার্ড কিংবা টিটিদের নির্ধারিত সময়ের তুলনায় বেশি সময় কাজ করতে হয়। এ অবস্থায় নতুন নিয়মে বেতন-ভাতা সুবিধাবঞ্চিত হলে নির্ধারিত সময়ের পর কর্মীরা কাজ বন্ধ করে দেবেন বলেও ঘোষণা দেয়া হয়।

বাংলাদেশ রেলওয়ের কেন্দ্রীয় শ্রমিক নেতা মেহেদী হোসেন বলেন, রেলের জনবল অস্বাভাবিক কম হওয়ায় রানিং স্টাফরা ১২-১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করেন। কিন্তু আইবাস সফটওয়্যারে মাইলেজ সুবিধা কমিয়ে দেয়ায় কর্মীদের পাশাপাশি রেলওয়েও বড় ধরনের সংকটে পড়বে। রেলওয়ের ঊর্ধ্বতনরা যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধান না করেন তবে রানিং কর্মচারীরা কাজ বন্ধ করে বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে যাবে বলে জানান তিনি।

রেলওয়ে রানিং স্টাফরা অভিযোগ করেছেন, রেলওয়ে অ্যাক্ট অনুযায়ী রানিং স্টাফদের ছুটি, পাস, চিত্তবিনোদন ও অবসরোত্তর গ্র্যাচুইটিতে তাদের মূল বেতনের ৭৫ শতাংশ যোগ করে প্রাপ্যতার বিধান আছে। কিন্তু নতুন নিয়মে রেলওয়ে রানিং কর্মীদের এসব সুবিধাও থাকছে না। এ কারণে রেলের প্রায় তিন হাজারের বেশি রানিং স্টাফ কর্মচারী সারা দেশে বৃহত্তর আন্দোলনে নেমেছেন।

জানতে চাইলে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান অর্থ উপদেষ্টা মশিউর রহমান বলেন, রেলওয়ে কর্মীদের বেতন-ভাতা ইএফটির মাধ্যমে করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রানিং স্টাফদের মাইলেজ সুবিধা তিন হাজার মাইলের বেশি আইবাস সফটওয়্যারে ইনপুট হচ্ছে না। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য তারা কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করছি, দ্রুত রানিং স্টাফদের দাবি ও বকেয়া বেতন-ভাতা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন হবে।

স/জে