‘রমনায় বোমা হামলা মামলার আপিলে আর কত সময় চাইবে রাষ্ট্রপক্ষ’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বহুল আলোচিত রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিলের জন্য ২৪ অক্টোবর নতুন দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা মামলার আপিল শুনানির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ আর কতবার সময় চাইবে, এমন প্রশ্নও তুলেছেন হাইকোর্ট।

আপিল শুনানির জন্য মামলাটি ৩৭৫ বার কার্যতালিকায় এলেও শুনানি শেষ হয়নি। পরে আদালত আগামী ২৪ অক্টোবর দিন ঠিক করেন।

রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তিন মাস সময় চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান। আসামিদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

শুনানির শুরুতেই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান আদালতে বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে একটু সময় দরকার। যে পর্যন্ত না সামাজিক দূরত্ব বিধান পালনের বাধা দূর হবে, সে পর্যন্ত এ মামলার শুনানি করা দূরূহ। এজন্য অ্যাটর্নি জেনারেল সময় নিতে বলেছেন।

তখন হাইকোর্ট বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, ‘ওই যে বলে না, প্রত্যেক জিনিসের একটা ভালো দিক আছে আবার মন্দ দিক আছে। কোভিড আপনাদের কত সাহায্য করছে! সময় নেয়ার জন্য আপনারা একটা ভালো গ্রাউন্ড পেয়েছেন। আপনি কী করে বুঝবেন কোভিড কত দিন থাকবে? এখন আমরা আপনাদের কত দিন পর্যন্ত সময় দেব?’

তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘আমরা আশাবাদি, অবশ্যই এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। এখন তিন মাস সময় দেন আমাদের।’

এর পর অপরপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের পক্ষে আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির তার বক্তব্য তুলে ধরেন। শিশির মনির বলেন, ‘আজ পর্যন্ত মামলাটি শুনানির জন্য ৩৭৫ দিন তালিকায় এসেছে। হাইকোর্টের তিনটা বেঞ্চ ঘুরেছে। প্রধান বিচারপতির কাছে গিয়েছে। এরপর আবার আপনাদের কাছে এসেছে। রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় শুনানি করতে চায় না কেন, এটাই এখন মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন।’

‘যখন কোভিড-১৯ ছিল না তখন কেন রাষ্ট্রপক্ষ সময় চেয়েছিলেন? মামলাটি প্রথম তালিকায় আসে ২০১৬ সালের ৭ এপ্রিল। আর মামলাটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে আসে ২০১৪ সালে। মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে সরকার পেপারবুক তৈরি করে। ২০১৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্নভাবে সময় নিতে নিতে এ পর্যায়ে এসেছে।’

‘এখন রাষ্ট্রপক্ষ যদি শুনানি না করতে চান তাহলে আপনারা সেনটেন্স সাজপেন্ড (সাজা স্থগিত) করে দেন। এই পরিস্থিতিতে সাজা স্থগিত করে কোথাও জামিন দিয়েছেন, কোথাও কনডেম সেল থেকে নামিয়ে নরমাল সেলে দিয়েছেন। পাকিস্তান ও ভারতের সুপ্রিম কোর্টের এমন নজির আছে।’

তিনি বলেন, ‘একজন মানুষ ৭ থেকে ৮ বছর ধরে কনডেম সেলে আছে। সময় নিতে নিতে মামলাটি দীর্ঘায়িত হচ্ছে। অন্য সব মামলার শুনানি হবে, এটার শুনানি হবে না! কোভিড কি শুধু এই মামলার জন্য? এটা ভালো দেখায় না। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমাদের আবেদন হচ্ছে তাদের জামিন দিয়ে দেন, অথবা কনডেম সেল থেকে নরমাল সেলে দিয়ে দেন।’

তখন আদালত বলেন, ‘এ বিষয়ে আপনারা লিখিত আবেদন করলে সেটি আমরা দেখব। আপাতত আগামী ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষকে শেষ সুযোগ দিচ্ছি। ওই দিন তাদের শুনানি করতেই হবে।’

বহুল আলোচিত রমনার বটমূলে ছায়ানটের বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাটি দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর দেশের উচ্চ আদালত হাইকোর্টে আপিল শুনানির জন্য আজ কার্যতালিকায় ছিল।

২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শুরু হয়। এরপর ওই বছরের ১৪ মার্চ চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিনও ধার্য হয়। কিন্তু তারপর আর এগোয়নি। এর পরে আদালত মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন। পরে সেটি হাইকোর্টের অপর বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে যায়। সেখানে দীর্ঘদিন থাকার পরও মামলাটি শুনানির জন্য ওঠেনি। পরে ওই আদালতের বিচারক রদবদল হওয়ায় মামলাটি আর শুনানিও হয়নি।

এক সময় মামলাটির আপিল শুনানি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর্যায়ে গেলেও আদালতের এখতিয়ার পরিবর্তন হওয়ায় মামলাটি শেষপর্যন্ত শুনানি সম্পন্ন হয়নি। এরপর কয়েক দফা আদালত পরিবর্তন হয়ে মামলাটির আপিল শুনানি ঝুলে ছিল। এখন আবার তালিকায় উঠল।

২০১৪ সালের ২৩ জুন বহুল আলোচিত রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুহুল আমিন। রায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, বিএনপি নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ আটজনের ফাঁসি ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।

রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়। অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আসামিরা।

মুফতি হান্নান ছাড়াও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন- মাওলানা তাজউদ্দিন, মাওলানা আকবর হোসেন, মুফতি আব্দুল হাই, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান ও মাওলানা আরিফ হাসান সুমন। এর মধ্যে মুফতি আবদুল হান্নানের পৃথক একটি মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- হাফেজ মওলানা আবু তাহের, মওলানা সাব্বির ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, হাফেজ মওলানা ইয়াহিয়া, মওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মওলানা আব্দুর রউফ ও শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল।

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে হুজি জঙ্গিদের বোমা হামলায় ১০ জন নিহত হন ও অনেকে আহত হন। এ ঘটনায় থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়। ২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর হুজি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে সিআইডি হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করে। পরে দীর্ঘ শুনানি নিয়ে হত্যা মামলাটি বিচারিক আদালতে রায় ঘোষণার মাধ্যমে শেষ হয়।

সূত্র: জাগো নিউজ