মশা না মরলে তো করার কিছু নাই: মেয়র

সাভারে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। দিনে-রাতে সব সময় মশার কামড়ে নাজেহাল সাভারবাসী। দিনের বেলাও অফিস কিংবা বাসা-বাড়িতে মশার কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হচ্ছে।

পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রতিদিনই মশক নিধনে ওষুধ প্রয়োগের কথা বলা হলেও মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েই যাচ্ছে। একদিকে মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ভয় এবং অন্যদিকে মশার কামড়ে ডেঙ্গুর শঙ্কা সাধারণ মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর মেয়র হাজি আবদুল গণি বলেন, মশা না মরলে তো করার কিছু নাই।

পৌরবাসীরা বলছে, ঘরে মশার যন্ত্রণা আর বাইরে করোনার ভয়। এই দুই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সাভারবাসী। শিগগিরই ব্যবস্থা না নিলে ছড়াতে পারে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার মতো ভয়াবহ রোগ। এছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ঝুঁকিপূর্ণ ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খাল-বিল ও নালায় জমে থাকা পানিতে কিলবিল করছে মশা-মাছি। মশক নিধন স্প্রে ও কয়েল ব্যবহার করেও সুফল না পাওয়ায় মশার উপদ্রবে বাসায় টেকাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

সাভার পৌর এলাকার বিভিন্ন মহল্লায় ঘুরে জানা যায়, মশার উপদ্রব ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। কয়েল, স্প্রে বা মশারি টাঙিয়েও মশার উৎপাত থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসীরা।

চাকরিজীবী হ‌ুমায়ূন কবির বলেন, শিল্পায়নের ফলে সাভার পৌর এলাকায় ঘনবসতি গড়ে উঠেছে। ফলে একে তো করোনার আতঙ্ক তার ওপর মশার জ্বালায় ঘরে থাকাই দায়। স্বল্প সংখ্যক পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ফগার মেশিনের সাহায্যে জনপ্রতিনিধিরা মশক নিধনের চেষ্টা চালালেও তা কোন কাজে আসছে না। এছাড়া নিয়মিত ময়লা পরিষ্কার না করায় বিভিন্ন স্থানে পানি জমে দুর্গন্ধ সৃষ্টির পাশাপাশি মশাও বৃদ্ধি পেয়েছ। শিগগিরই ব্যবস্থা না নিলে মশার কামড় থেকে ছড়াতে পারে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার মতো ভয়াবহ রোগ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জনপ্রতিনিধি জানান, পৌরসভায় মিল ও কল-কারখানার দূষিত বর্জ্য, বিভিন্ন স্থানের জমে থাকা নোংরা পানি এবং যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলায় এ অঞ্চলটি মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা মেনে পৌরসভার পক্ষ থেকে নিয়মিত মশক নিধনে কীটনাশক ছিটাচ্ছেন। তবে স্বল্প পরিসরে চালানো মশক নিধন কার্যক্রম কোন কাজেই আসছে না। তাই মশক নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সায়েমুল হুদা বলেন, এখন পর্যন্ত সাভারে কেউ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত না হলেও সবাইকে সচেতন থেকে বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। যার যার বাড়ি যেন সবাই নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার রাখে এবং পৌরসভার পক্ষ থেকেও মশক নিধনে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

এদিকে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক ঘুরে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের ব্যবধানে সাভারের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে মশার কামড়ে আক্রান্ত ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে যার মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি।

সাভার পৌরসভার মেয়র হাজি আবদুল গণি বলেন, প্রতিদিনই ৫টি ফগার মেশিন দিয়ে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে পুরোদমে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এতে মশা না মরলে তো আমার করার কিছু নাই। এটা শুধু আমার সমস্যা না, ঢাকা শহরে আমার চেয়ে আরও বেশি সমস্যা।

তিনি আরও বলেন, সরকার থেকে এখনো মশক নিধনের জন্য কোন বাজেট আসে নাই। কিন্তু আমি বাজেটের জন্য বসে না থেকে পৌরসভার পক্ষ থেকে খরচ করে যাচ্ছি। যত দিন মশা থাকবে তত দিন মশক নিধন কার্যক্রমও নিয়মিত চলমান থাকবে। এছাড়া ঝড় বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত মশা কমবে না। তাই বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত মশক নিধন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে সাভার অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী সুজানার মশার কামড় থেকে ডেঙ্গু জ্বর হয়। পরবর্তীতে ডেঙ্গু থেকে শক-সিনড্রোমে আক্রান্ত হলে তার হার্ট, কিডনি ও লিভারে সমস্যা দেখা দেয়। চার দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। চিকিৎসকেরা বলেছেন, মশার কামড় থেকে ডেঙ্গুর প্রভাবেই তার মৃত্যু হয়েছে।