মন্ত্রীকে শুধু সচিবালয়ে এসে বসে থাকলেই হয় না : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

করোনার এই দুর্যোগে কাজ করতে কেবল সচিবালয়ে এসে বসে থাকাই মন্ত্রীর একমাত্র কাজ নয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি বলেছেন, কোন হাসপাতালে কী কাজ হচ্ছে, মানুষ হাসপাতাল থেকে বিনা চিকিৎসায় ফিরে যাচ্ছে কিনা, চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি-না, কোনো মানুষ হাসপাতাল থেকে বিনা চিকিৎসায় হাসপাতাল থেকে ফিরে যায় কি না এগুলো দেখভাল করে ও খোঁজ নিয়ে যথার্থ উদ্যোগ নেওয়াটাই এখন আসল কাজ।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দপ্তরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক অনির্ধারিত বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

এদিকে একটি দৈনিকে ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী অফিস করেন না’ শিরোনামে যে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে সে প্রসঙ্গে বিবৃতিও দিয়েছেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, পরিবেশিত সংবাদটি মিথ্যা ও জনমনে উসকানিমূলক।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা গত ২৭ মে থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত হোম কোয়ারিন্টিনে ছিলেন। তার পূর্বে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব করোনায় আক্রান্ত থাকাকালে আরেক দফা ১৪ দিনের হোম আইসোলেশনে থাকতে হয়েছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে। তারপর স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব আলী নূর সপরিবারে করোনায় আক্রান্ত, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আব্দুল মান্নানের স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদও করোনায় আক্রান্ত হন। সচিবালয়ে বর্তমানে মন্ত্রীর দপ্তরে তিন জনসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব, উপসচিব, সহকারী সচিব থেকে অন্যান্য কর্মচারীসহ ৪৫ জন করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় রয়েছেন। এরকম অবস্থায় নিয়মিত অফিসে আসার বিপরীতে অনলাইনে নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়নে কাজ করে যাওয়াটাও কম জরুরি নয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উল্লিখিত কারণে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি থাকায় কেবিনেট সেক্রেটারি দুই বার স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে কেবিনেট সভায় যোগদান না করার পরামর্শ প্রদান করেন। এমনকি একবার স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এক সভা থেকে সভা না করেই চলেও আসতে হয়েছিল। সরকার ঘোষিত সরকারি ছুটিকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব, মহাপরিচালকসহ সকল স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, কর্মচারী কোনো ধরনের ছুটি ভোগ না করে নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত থাকেন।

বিবৃতিতে আরো দাবি করা হয়, প্রকৃতপক্ষে হোম আইসোলেশনে থাকা অবস্থাতেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এমনকি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেবল ২৫ মে নয়, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা আক্রান্তের আগে থেকেই সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, হাসপাতাল পরিচালক, সিভিল সার্জন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ব্যক্তিদের সাথে প্রায় প্রতিদিনই মতবিনিময় সভা এবং পরবর্তীতে নিয়মিত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনলাইন বৈঠকে দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। দিনের বেশির ভাগ সময়ে প্রায় প্রতিদিনই স্বাস্থ্যমন্ত্রী কখনো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অফিসে গিয়ে এবং কখনো মন্ত্রণালয়ে বসে নিয়মিত আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন এবং এখনো নিচ্ছেন।

এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিস্ক্রিয় থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা যারা আছি, তাদেরকে সুস্থ থেকেই কাজ করতে হবে। যারা অসুস্থ তারা তো এক মাস আসতে পারে না। কাজ কিন্তু থেকে নেই, কাজ চলছে। একটা ফাইলও আটকে নেই, সব ফাইল আপডেটেড। এখন অফিস সব জায়গায়, এই এক জায়গায় তো অফিস না। যেখানে বসবো আমি, সেখানেই অফিস। আমাদের তো কিছু করার নেই। কারণ সবাই আক্রান্ত হয়ে গেছে। তাই ভুল প্রচারটা ঠিক নয়, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, যদি নিস্ক্রিয়ই থাকতাম তাহলে কীভাবে মাত্র একটি টেস্টিং ল্যাব থেকে ৬৬টি টেস্টিং ল্যাবে পরিণত হলো, মাত্র ১০০ করোনা পরীক্ষা থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ থেকে ১৯ হাজারে উত্তীর্ণ হলো। মাত্র ১৫ দিন সময়ে বসুন্ধরায় ২০০০ বেড,  ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মার্কেট ও উত্তরার দিয়াবাড়িতে মোট প্রায় ৩০০০ বেড, আনোয়ার খান মডার্ণ হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল, শিকদার মেডিক্যালের মতো বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা চিকিৎসা ও পরীক্ষা ব্যবস্থা শুরু হলো? সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে করোনা চিকিৎসা দেওয়া বাধ্যতামূলক হলো। পাশাপাশি শুধু ঢাকায় থাকা কিছু আইসিইউ সুবিধাকে কীভাবে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে পৌঁছে দিতে সক্ষম হলো। মাত্র ১০ দিনে ২০০০ নতুন চিকিৎসক ও প্রায় ৬ হাজার নতুন নার্স নিয়োগ হলো?

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ